সর্বানন্দ সোনোয়াল মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণের আগে নিরাপত্তাবাহিনীর নজরদারি। সোমবার গুয়াহাটির ভেটেরনারি কলেজের মাঠে। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
যেমন নজিরবিহীন শপথগ্রহণের বহর ও বাহার, তার চেয়েও বেনজির হয়ে দাঁড়াল সর্বানন্দ সোনোয়ালের প্রাথমিক মন্ত্রিসভার বাছাই পর্ব। এমনকী রাত ১২টাতেও হাতে এল না মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত তালিকা। রাজভবন থেকে শপথ নিতে চলা মন্ত্রীদের চূড়ান্ত তালিকা চেয়ে চেয়ে হন্যে হতে হল রাজ্যপালের আপ্তসহায়ককে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাম মাধব, মহেন্দ্র সিংহ, ওম মাথুর, গেহলটদের নাকানি-চোবানি খাওয়ালেন হাগ্রামা, অতুল এবং হিমন্ত অনুরাগী প্রাক্তন কংগ্রেসী বিধায়কদের বাহিনী। সকলেরই দাবি প্রথম দিনের বর্ণাঢ্য শপথগ্রহণেই তাঁদের তরফের মন্ত্রীরা শপথবাক্য পাঠ করবেন।
এক দিকে কংগ্রেস শিবিরে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলছে, অন্য দিকে শাসক শিবিরে মন্ত্রিত্ব নিয়ে চলছে দড়ি টানাটানি। আগামী কাল শপথগ্রহণের আগে আজ সন্ধে পর্যন্ত জোট শরিকদের দাবি-দাওয়া সামলে মন্ত্রীদের নাম চূড়ান্ত করতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি ভোটে শোচনীয় হারের পর কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রীরা এখন খোলাখুলি তরুণ গগৈ-অঞ্জন দত্তের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। হাল সামলাতে নাকাল প্রদেশ কংগ্রেস।
বিজেপি সূত্রে খবর, শপথগ্রহণে অন্তত এক লক্ষ মানুষের সমাবেশ হতে চলেছে খানাপাড়ার মাঠে। বেলা ২টো থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও কেন্দ্রের ৩০ জন মন্ত্রী, রবিশঙ্কর, রামদেব-সহ কয়েক জন ধর্মীয় নেতা, বিভিন্ন এনডিএ শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমনকী বলিউডের তারকাদেরও আসার সম্ভাবনা। আসতে পারেন লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলীমনোহর জোশীর মতো প্রবীণ নেতারাও। জেলাশাসক এম আঙ্গামুথুর হিসেবে, ভিভিআইপির সংখ্যাই হবে পাঁচশোর বেশি। গোটা শহর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। বিজেপি নেতাদের দাবি, এমন নজিরবিহীন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আগে দেখেনি রাজ্য। শেষ বার ১৯৮৫ সালে নেহরু স্টেডিয়ামে বড় অনুষ্ঠান করে শপথ নিয়েছিল অসম চুক্তির পরে ক্ষমতায় আসা অগপ।
অতিথিদের ঠাঁই দিতে ইতিমধ্যে গুয়াহাটি ও আশপাশের প্রায় সাড়ে তিনশো হোটেলের ঘর ভাড়া করা হয়েছে। সর্বানন্দ এ দিন সকালে বরপেটায় গিয়ে নিজের গুরুর আশীর্বাদ নেন। ফেরার পথে নলবাড়িতে একটি চায়ের দোকানে বসে চা খান সর্বা, তাঁর বন্ধু হৃশিকেষ গোস্বামী ও সাংসদ রামেশ্বর তেলি। তাঁর আমন্ত্রণে এই প্রথম বার মাজুলি থেকে সাতটি সত্রেরই প্রধান শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। স্থানীয় বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খুশিতে মাজুলি থেকে
অনেকে গুয়াহাটি আসছেন। আসছেন রাজ্যের অন্যান্য সত্রের প্রতিনিধিরাও। থাকবেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, মাঠে মোতায়েন থাকবে ৫ হাজার নিরাপত্তাকর্মী।
পুলিশ-প্রশাসনের সব আয়োজন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ‘যুদ্ধ’ চলছে বিজেপি জোটের ভিতরে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল সর্বানন্দ মাত্র ১০ সদস্যের ছোট মন্ত্রিসভা গড়বেন। পরে প্রতি পাঁচ জন বিধায়ক পিছু এক জন করে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর, ১৪টি আসন পাওয়া অগপ ও ১২টি আসনে জেতা বিপিএফের চাপে মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়াতেই হবে সর্বাকে। অগপ ৫ জন ও বিপিএফ চার জন মন্ত্রী দাবি করেছে। অগপ বিধায়কদের বৈঠকে কলিয়াবরের বিধায়ক কেশব মহন্তকে দলের ডেপুটি লিডার, বরপেটার বিধায়ক গুণিন দাসকে চিফ হুইপ করা হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে খবর, বিজেপির সর্বানন্দ, হিমন্তবিশ্ব শর্মা, প্রশান্ত ফুকন, পরিমল শুক্লবৈদ্য, প্রাক্তন সভাপতি রঞ্জিৎ দত্ত, রঞ্জিৎ দাস, অগপর সভাপতি অতুল বরা ও কেশব মহন্ত এবং বিপিএফের প্রমীলারানি ব্রহ্ম এবং চন্দন ব্রহ্ম প্রথমদিন শপথ নিতে পারেন।
পরে অগপর ফণীভূষণ চৌধুরি, বিজেপির দুই মহিলা বিধায়কের মধ্যে একজন মন্ত্রী হবে। তৃতীয় দফায় আরও বাড়ানো হতে পারে মন্ত্রিসভা। নির্দিষ্ট সময় অন্তর মন্ত্রী বদল
করা হবে। কিন্তু পরে হিমন্তপন্থীদের মধ্যে বলিন চেতিয়া বা পল্লবলোচন দাসকে মন্ত্রী করার জন্য চাপ আসে। নাম ওঠে প্রাক্তন আসু সাধারণ সম্পাদক তপন গগৈয়েরও।
আগের মন্ত্রিসভায় ১৯ জন মন্ত্রী ছিল। বিজেপি জোট টিওয়া, রাভাদেরও সমর্থন নিয়ে লড়েছে। মরিগাঁওয়ে লড়া রমাকান্ত দেউড়ি ও একমাত্র সংখ্যালঘু বিধায়ক সোনাইয়ের আমিনুল হক লস্করও কোটার ভিত্তিতে মন্ত্রিত্বের দাবিদার।
বিজেপি সরকার গড়ার আগে জনাইয়ের নির্দল বিধায়ক তথা গণশক্তি দলের প্রধান ভূবন পেগুরও সমর্থন চেয়েছে। রাত ১২ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র অতিথিশালায় চলেছে তিন দলের মাথাদের বৈঠক। রাজ্যপালের হাতে এল না মন্ত্রীদের তালিকাও। আগের মন্ত্রিসভায় ১৯ জন মন্ত্রী ছিলেন। বিজেপি জোট টিওয়া, রাভাদেরও সমর্থন নিয়ে লড়েছে। মরিগাঁওয়ে লড়া রমাকান্ত দেউড়ি ও একমাত্র সংখ্যালঘু বিধায়ক সোনাইয়ের আমিনুল হক লস্করও কোটার ভিত্তিতে মন্ত্রিত্বের দাবিদার। বিজেপি সরকার গড়ার আগে জনাইয়ের নির্দল বিধায়ক তথা গণশক্তি দলের প্রধান ভূবন পেগুরও সমর্থন চেয়েছে।
এ দিকে, ভোটে কংগ্রেসের হারের দায় তরুণ গগৈ ও অঞ্জন দত্তর উপরে চাপিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা চা গোষ্ঠীর নেতা পৃথিবী মাঝি। তাঁর মতে, তরুণ গগৈয়ের অহংবোধ ও অঞ্জনবাবুর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই দলের কাল হয়েছে। যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে ভুঁইফোড় নেতাদের উপরে অতিরিক্ত আস্থা রাখায় ডুবেছে দল। দলের কর্মীদের প্রতি অঞ্জনবাবুর ব্যবহারও ভাল ছিল না। তরুণ গগৈয়ের সব অভিযোগ উড়িয়ে ‘বাদ দিয়া হে’ বলে দেওয়ার ভঙ্গিও গোটা রাজ্যে ব্যঙ্গে পরিণত হয়েছিল। বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থও নেতৃত্বের ভুলের কথা বলে দলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পক্ষে মত দেন। কার্যত রাজ্য কংগ্রেসের নেতৃত্ব বদল চেয়ে অনেক নেতাই দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রদেশ কংগ্রেস অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে এ দিন বিবৃতি প্রকাশ করে বলে, দলের দু-একজন নেতা তরুণ গগৈ ও অঞ্জন দত্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অযাচিত মন্তব্য করছেন। তা ঠিক নয়। তাঁদের আরও সহনশীল হতে হবে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় এক গতানুগতিক প্রতিক্রিয়া। শীঘ্রই দলের সব সদস্যকে নিয়ে পরাজয়ের কারণ খুঁজতে পর্যালোচনা ও আত্মসমীক্ষা সভা হবে। তার আগে এমন নেতিবাচক মন্তব্য দলের ভাবমূর্তি খারাপ করতে পারে।