দলের মাথায় শশিকলা, কিন্তু কাঁটা আদালতে

আম্মার মৃত্যুর তিন সপ্তাহের মাথায় দলের সিংহাসনে চিন্নাম্মা। বৃহস্পতিবার এডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হল শশিকলা নটরাজনের নাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে জয়ার ছবিতে প্রণাম শশিকলার। পাশে মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম। চেন্নাইয়ের পোয়েজ গার্ডেনে। ছবি: পিটিআই।

আম্মার মৃত্যুর তিন সপ্তাহের মাথায় দলের সিংহাসনে চিন্নাম্মা। বৃহস্পতিবার এডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হল শশিকলা নটরাজনের নাম। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম বলেই দিলেন, ‘‘আম্মার মধ্যে আমরা যেমন এমজিআর-কে দেখতে পেতাম, শশিকলার মধ্যে আমরা আম্মাকে দেখতে পাচ্ছি।’’

Advertisement

যদিও এমন দিনেও রয়ে গেল অস্বস্তির কাঁটা। জয়ললিতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে কেন তাঁর মৃতদেহ কবর থেকে তোলা হবে না, এ দিনই সেই প্রশ্ন তুলল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও এর জবাব চেয়েছে আদালত। এবং যেহেতু জয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে তাঁকে সমাহিত করা পর্যন্ত গোটাটাই শশিকলা একা হাতে সামলেছিলেন, তাই আদালতের এ দিনের বক্তব্যে মূলত তাঁর ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে জয়া হাসপাতালে ভর্তি হতেই তাঁর যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বান্ধবী শশিকলা। হাসপাতালে জয়ার ঘরে ঢোকার অনুমতি ছিল না আর কারও। রাহুল গাঁধী থেকে অমিত শাহ, দিল্লি থেকে যে নেতারা চেন্নাই উড়ে গিয়েছেন, তাঁরাও আম্মার দেখা পাননি। শশিকলার সঙ্গে দেখা করেই ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। কেন এই গোপনীয়তা, কেন জয়ললিতার কেউ দেখা পাননি, কেন তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট নেই— এ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। আদালতের বক্তব্য, ‘‘ওই মৃত্যু নিয়ে আমাদেরই সন্দেহ রয়েছে।’’

Advertisement

জয়ললিতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চেয়ে এই জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছেন এডিএমকে সমর্থক পি এ জোসেফ। আবেদনে তিনি বলেছেন, যদি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুর কারণ জানতে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠিত হতে পারে, জয়ললিতার ক্ষেত্রে নয় কেন। অবসরকালীন বেঞ্চের বিচারপতি এস বৈদ্যনাথন ও বিচারপতি পারথিভন আজ তার শুনানিতে বলেন, ‘‘খবরের কাগজে পড়েছি, জয়ললিতা ক্রমশ ভাল হচ্ছিলেন। খাওয়াদাওয়াও করছিলেন। আচমকা মারা গেলেন কী করে?’’ আদালতের বক্তব্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম জি রামচন্দ্রনের চিকিৎসা চেন্নাই ও আমেরিকায় হয়েছিল। তখন তার ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে কেন তা হয়নি, কেন মৃত্যুর পর জয়ার মৃতদেহ সরকারি কর্তাদের দেখানো হয়নি, সেটাও ধন্দ। রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকোট জেনারেল আর মুথুকুমারস্বামী অবশ্য দাবি করেন, আম্মার মৃত্যু নিয়ে কোনও রহস্য নেই। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে বিচারপতিরা বলেন, কেন জয়ার দেহ কবর থেকে তুলে পরীক্ষা করা হবে না সেই উত্তর দিতে হবে রাজ্যকে। আগামী শুনানি ৯ জানুয়ারি।

আদালত যে জবাব খুঁজছে, তা একমাত্র শশিকলার কাছেই আছে বলে এখন থেকেই সরব চিন্নাম্মা-বিরোধীরা। তবে দলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এর আগেও একাধিক বার আইনি সমস্যার মুখে পড়ে নিজের পিঠ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন শশিকলা। উপরন্তু দলের মান বাঁচাতে এ বার দলের বর্ষীয়ান নেতারাও তাঁর পিছনে থাকবেন। শশিকলা ঠিকই উতরে যাবেন বলে ঘনিষ্ঠদের বিশ্বাস। যদিও মুখে যতই ভাল ভাল কথা বলুন, মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভাম কতটা তাঁকে সাহায্য করবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে কোনও কোনও মহলে। দলের একটি সূত্র বলছে, চিন্নাম্মার পদোন্নতিতে আসলে নাকি ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। জয়া নিজে জেলে থাকার সময় পনীরকে রাজ্য চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে দিক থেকে তিনি জয়ার মনোনীত উত্তরসূরি। কিন্তু দলের সম্পূর্ণ ক্ষমতা শশিকলার হাতে চলে গেলে তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। ফলে আগামী দিনে আদালতে শশিকলাকে নিয়ে যখন টানাপড়েন শুরু হবে, তখন রাজ্য প্রশাসন কতটা শক্ত ভাবে তাঁর পিছনে দাঁড়াবে তা নিয়ে সংশয় থাকছে।

ষাট বছরের শশিকলার অস্বস্তি বাড়িয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ আর এক শশী। তিনি শশিকলা পুষ্পা। এক দিকে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে আম্মার রহস্য-মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। পুষ্পার দাবি, দলের কোনও পদে বসতে গেলে ন্যূনতম পাঁচ বছর টানা সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করার যে বিধি রয়েছে, তা শশিকলা পূরণ করেননি। তাই দলের মাথায় তাঁর নিয়োগ অবৈধ বলেও মামলা ঠুকেছেন তিনি। ঘটনা হল, শশিকলা আগে কোনও দিনই ভোটে দাঁড়াননি, দলের কোনও পদও সামলাননি। তাঁর যাবতীয় প্রভাব জয়ার ছায়াসঙ্গিনী হিসেবেই।

জরুরি অবস্থার সময়ে তাঁর স্বামী চাকরি খোওয়ানোর পরে একটি ভিডিও পার্লার খুলেছিলেন শশিকলা। সেই ভিডিও ক্যাসেট দেওয়া-নেওয়ার সূত্রেই জয়ললিতার সঙ্গে তাঁর আলাপ এবং বন্ধুত্ব। আশির দশকের শুরুতে পোয়েজ গার্ডেনের জয়ার বাড়িতে ওঠেন তিনি। সে সময়ে শশিকলাকে ছোট বোন বলে পরিচয় দিতেন জয়া। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একাধিক দুর্নীতি এবং শশিকলা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠায় সম্পর্ক ত্যাগ করেন জয়া। ২০১১-তে শশিকলা দল থেকে বিতাড়িতও হন। কিন্তু কিছু দিন পর আবার কাছাকাছি আসতে শুরু করেন দু’জনে। ২০১২-য় ফের দলে যোগ দেন শশি। সেই হিসেবে দলে টানা পাঁচ বছরের সময়সীমা এখনও পূরণ করেননি তিনি। তাই আপাতত তাঁকে দলের অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে বিধি সংশোধন করে তাঁকে পূর্ণ পদমর্যাদায় নির্বাচিত করা হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন