রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাজীব কুমার সারদা মামলার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন— সিবিআইয়ের এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ চাইল শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘ দিন ধরেই শীর্ষ আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে যে, এ রাজ্যের ওই শীর্ষ পুলিশকর্তা সারদা মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছেন। এই মর্মে অন্তত চারটি হলফনামা আদালতে জমা দিয়েছে সিবিআই।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালত শিলংয়ে রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু একই সঙ্গে রাজীবকে গ্রেফতার করতে পারবে না সিবিআই— এই মর্মে রক্ষাকবচও দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
রাজীবকে টানা পাঁচ দিনের জেরা পর্বের রিপোর্ট গোয়েন্দারা মুখ বন্ধ খামে শীর্ষ আদালতকে জমা দেন। সেই রিপোর্ট দেখে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ মন্তব্য করেছিলেন— ‘‘অত্যন্ত গুরুতর।’’ এর পরেই সিবিআইয়ের তরফ থেকে হলফনামা পেশ করে জানানো হয়, সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার আগে রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)–এর অন্যতম প্রধান কর্তা হিসাবে সারদা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন রাজীব কুমার। সিবিআই অভিযোগ করে, রাজীব কুমারের নির্দেশেই মামলার প্রধান দুই অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের ফোনের কল ডিটেলস-এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দেবযানীর ল্যাপটপ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলতে সাহায্য করেছে রাজীব কুমারের নেতৃত্বাধীন পুলিশ। হদিশ মেলেনি ডায়েরি-সহ বেশ কিছু নথির।
আরও পড়ুন: আপনি কি ব্রিটিশ নাগরিক? ১৫ দিনের মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করুন, রাহুলকে নোটিস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের
আরও পড়ুন: শক্তি বাড়িয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিল ফণী! শুক্রবার আছড়ে পড়তে পারে ওডিশায়
সিবিআই শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিল, ওই নথি উদ্ধার করার জন্য রাজীব কুমারের মতো প্রভাবশালী পুলিশকর্তাকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে শীর্ষ আদালতের যে রক্ষা কবচ দেওয়া রয়েছে, আদালত যাতে তা প্রত্যাহার করে নেয়, সেই আবেদনও জানানো হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে রাজীব কুমারকেও পাল্টা হলফনামা পেশ করতে বলেছিল আদালত। সেই হলফনামায় রাজীব দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অন্তর্বর্তী অধিকর্তা নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী এবং মেয়ে চিটফান্ডের সঙ্গে যুক্ত। সেই মামলার তদন্ত কলকাতা পুলিশ করছে। সেই কারণেই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে সিবিআই তাঁকে হেনস্থা করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছিলেন রাজীব।
মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানির সময়, প্রধান বিচারপতি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বলেন, সিবিআইয়ের জমা দেওয়া হলফনামা রাজীব কুমারের গ্রেফতারির নির্দেশের জন্য যথেষ্ট নয়। সিবিআইকে আদালতের হাতে প্রমাণ তুলে দিতে হবে। যে প্রমাণ দেখাবে যে, রাজীব কুমার সারদা মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লোপাট করেছেন। সেই প্রমাণ খতিয়ে দেখে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত সিবিআইকে আগামিকাল বুধবার ওই প্রমাণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।