গ্রেফতার নাগপুরের ‘ঠগিনী’ সমীরা ফতিমা। ছবি: সংগৃহীত।
পেশায় স্কুলশিক্ষিকা। তবে বাড়তি আয়ের উৎস ছিল বিয়ে! আট স্বামীকে আর্থিক প্রতারণা করার পরে নবম বার ছাঁদনাতলায় বসার তোড়জোড় করছিলেন মহারাষ্ট্রের নাগপুরের সমীরা ফতিমা। তার আগেই গ্রেফতার ‘লুটেরি দুলহন।’ অভিযোগ, আট জন স্বামীকে ব্ল্যাকমেল করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন নাগপুরের ‘ঠগিনী।’
‘ঠগিনী’ বাংলা ছবিতে নায়িকা একের পর এক বিয়ে করতেন। ফুলশয্যার রাতে স্বামীর সর্বস্ব লুট করে পালাতেন। তাঁকে সাহায্য করতেন এক জন। ফতিমাও একেবারে ওই ভাবে ছকে চলতেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর একটি দল ছিল। তাঁরা পাত্র দেখতেন। তাঁদের সঙ্গে ফেসবুক এবং ঘটকালির অ্যাপে ভাব জমাতেন ফতিমা। বিয়ে হলেই স্বামীর টাকাকড়ি হাতিয়ে পালাতেন। তার পর চলত নানা রকম ভাবে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়। ফতিমার নবম ‘বিবাহ অভিযান’ সফল হতে দেয়নি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ফতিমা উচ্চশিক্ষিতা। একটি স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। গত ১৫ বছর ধরে তিনি একের পর এক বিয়ে করেছেন এবং প্রত্যেক স্বামীকে প্রতারণা করেছেন। প্রথম দিকে লোকলজ্জা এবং সামাজিক সম্মান নষ্টের ভয়ে ওই যুবকদের কেউ পুলিশে অভিযোগ করেননি। তবে সম্প্রতি দু’জন পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এক জনের অভিযোগ, নিজের ইচ্ছায় তাঁকে ছেড়ে গিয়েছেন ফতিমা। তার পর বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেল করে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। অপর জনের অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে এ পর্যন্ত ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী।
ফতিমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মূলত বর্ধিষ্ণু এবং সুপ্রতিষ্ঠিত মুসলমান যুবকরাই ছিলেন তাঁর ‘টার্গেট’। তিনি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ে করেছেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিককেও। তাঁদের প্রত্যেককে কোনও না কোনও ভাবে ঠকিয়ে টাকা আদায় করে আবার বিয়ে করেছেন। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘ফতিমা নামে ওই মহিলা ঘটকালির ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে ভাব জমাতেন যুবকদের সঙ্গে। কিছু দিন কথাবার্তার পরে হোয়াট্সঅ্যাপে নম্বর আদান-প্রদান করতেন। যুবকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়েও করতেন।
জানা গিয়েছে, প্রত্যেককে নিজের ভুয়ো ‘জীবন কাহিনী’ শুনিয়ে তাঁদের মনে জায়গা করে নিতেন। বিয়ের পর নানা কারণ দেখিয়ে অশান্তি করে বাড়ি ছেড়ে মোটা অঙ্কের খোরপোশ আদায় করতেন ফতিমা। অষ্টম বার বিয়ের আগে পাত্রকে বলেছিলেন তিনি ডিভোর্সি এবং এক সন্তানের মা। খুবই কষ্টের মধ্যে সন্তানকে মানুষ করছেন। তার আগে এক জনকে ব্ল্যাকমেল করে বিয়ে করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তিনি সন্তানসম্ভবা এবং বাবা ওই ব্যক্তি। শেষমেশ গত ২৯ দুলাই নাগপুর থেকে গ্রেফতার হয়েছেন ‘ঠগিনী।’