বিক্ষোভের আঁচে পুড়ছে ভূস্বর্গ। টানা ১১১ দিন ধরে অস্থিরতা চলছে কাশ্মীর উপত্যকায়। আর সেই আঁচে এ বার পুড়ছে একের পর এক স্কুলও। পরিসংখ্যান বলছে, ৪ মাসে ২৪টি স্কুল পুড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা। যার মধ্যে গত দু’দিনে পাঁচটি সরকারি স্কুলে আগুন লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উপত্যকার স্কুল অবিলম্বে খুলতে যা করা দরকার, আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতো পড়শি দেশগুলোয় শিক্ষাঙ্গনে হামলার ঘটনা নতুন নয়। তালিবান মাঝেমধ্যেই বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয় সেখানকার স্কুল-কলেজ। নারীশিক্ষার বিরোধী হিসেবেও বিশেষ পরিচিতি রয়েছে তালিবানি জঙ্গিদের। কিন্তু কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার এই নতুন ধরন দেখে চিন্তিত উপত্যকার পুলিশ-প্রশাসন। এ ভাবে এতগুলি স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার পিছনে কারা রয়েছে তা জানতে পারছে না পুলিশও। মূলত রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়েই হামলাগুলি চালানো হচ্ছে। বাদ পড়ছে না বেসরকারি স্কুলও।
জুলাইয়ে হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে বন্ধ উপত্যকার সমস্ত স্কুল-কলেজ। গত মাসে বন্ধ স্কুল খোলার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নইম আখতার। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সইদ আলি শাহ গিলানিকে একটি খোলা চিঠি লিখে শিক্ষাকে এই অশান্তির বাইরে রাখতে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরই লস্করের হুমকির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। লস্করের মুখপাত্র আবদুল্লা গজনভি জম্মু-কাশ্মীরের শিক্ষামন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘কাশ্মীরের মানুষ যথেষ্ট শিক্ষিত হয়ে গিয়েছে। কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, তাঁরা খুব ভালই জানেন। এ ভাবে জোর করে উপত্যকায় স্কুল খুলতে চাইলে তার ফল ভুগতে হবে মন্ত্রীকে।’’ এর মধ্যে দিন কয়েক আগে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার দিন ঘোষণা করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে শিক্ষা দফতরকে। এক দিকে অর্ধেকেরও বেশি সিলেবাস শেষ হয়নি। অন্য দিকে উপত্যকার বেশির ভাগ ছাত্রই হয় পাথর ছোড়ার ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে। নয়তো আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ১৫ নভেম্বর থেকে দশম ও ১৪ তারিখ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এই অবস্থায় উপত্যকার পুলিশকেও বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, পড়ুয়ারা নির্বিঘ্নে যাতে স্কুলে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশকেই।
পুলিশ জানিয়েছে, গত দু’দিনে শ্রীনগর, অনন্তনাগ, বান্দিপোরা আর বদগামের পাঁচটি স্কুল পুড়ে গিয়েছে। বারামুলা, কুলগাম, সোপিয়ান, গান্ধেরবাল পুলওয়ামাতেও একের পর এক স্কুলে হামলা চলেছে। শিক্ষা দফতরের মুখ্য অফিসার রউফ শাহমিরি বলেন ‘‘রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে হামলা চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। স্কুলের রেকর্ডও তছনছ করে ফেলা হচ্ছে। পুলিশ তাদের খোঁজার চেষ্টা করেছে। যে ক’টি স্কুল নষ্ট হয়েছে, তাতে কম করে ২০০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়ত। নতুন করে স্কুলগুলি শুরু করতে এখন বহু বছর সময় লাগবে। ওরা চায় না আমাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা পাক। পুরো সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে এখানে।’’
এ ভাবে মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ থাকায় উদ্বিগ্ন শিশুদের অভিভাবকেরাও। শ্রীনগরের বাসিন্দা গুলাম মহম্মদ বললেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে। কারা এ সব করছে, সরকারের উচিত তাদের অবিলম্বে খুঁজে বার করা। কাল বাচ্চারা স্কুলে গেলে যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় কে নেবে?’’ শিক্ষা দফতরের ডিরেক্টর ইজাজ আহমেদের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। যারা এ সব করছে তারা তো উপত্যকায় শান্তি চায় না। অফিসে অফিসেও হামলা চলছে। আমরা পুলিশের সাহায্য নিচ্ছি।’’