স্করপেন নিয়ে আরও নথি প্রকাশ্যে

স্করপেন ডুবোজাহাজ সংক্রান্ত আরও কিছু ফাঁস হওয়া নথি আজ প্রকাশ্যে এল। ফলে আরও বাড়ল দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অস্বস্তি এবং উদ্বেগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

স্করপেন ডুবোজাহাজ সংক্রান্ত আরও কিছু ফাঁস হওয়া নথি আজ প্রকাশ্যে এল। ফলে আরও বাড়ল দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অস্বস্তি এবং উদ্বেগ।

Advertisement

ভারতীয় নৌসেনার ওই নতুন ডুবোজাহাজ সংক্রান্ত ২২,৪৩৯ পাতার গোপন নথি তারা দেখেছে বলে দাবি করেছিল ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ সংবাদপত্র। স্করপেনের যুদ্ধ করার ধরন, লুকিয়ে থাকার কৌশল, টর্পেডো ছোড়া সংক্রান্ত নানা তথ্য ছিল সেই নথিতে। আজ ফের ওই সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটেই তুলে আনা হয়েছে কিছু নতুন তথ্য। যার মধ্যে রয়েছে ডুবোজাহাজের ‘সোনার’ ব্যবস্থা, তার বিভিন্ন যন্ত্রাংশের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য। যা ধরে এগোলে শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজের পক্ষে এই ডুবোজাহাজকে খুঁজে বের করে টর্পেডো ছুড়ে উড়িয়েও দেওয়াও খুব অসম্ভব নয়।

ডুবোজাহাজের কার্যকারিতার পুরোটাই নির্ভর করছে জলের তলায় সে শত্রুকে কত দূর ফাঁকি দিয়ে ঘোরাফেরা করতে পারে, তার উপর। যদিও আজই নৌসেনার তরফে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, যে নথি ওই সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে রয়েছে, তাতে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা নেই। কারণ তাতে ডুবোজাহাজের যুদ্ধপদ্ধতি নিয়ে কোনও তথ্য নেই। কিন্তু নতুন করে ফাঁস হওয়া নথি উল্টো কথাই বলছে। ওই সব নথিতে স্করপেন-এর যে সব মাপকাঠি রয়েছে, তা কালো কালিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, সে সব তথ্য আসলে ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

গত কালই অস্ট্রেলিয়ার ওই সংবাদপত্রে নৌসেনার স্করপেন ডুবোজাহাজের যাবতীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লাম্বাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কী তথ্য ফাঁস হয়েছে এবং তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আগাগোড়া খতিয়ে দেখা হোক। অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিকের দাবি, ফাঁস হওয়া নথি তাঁরা দেখেছেন। এই দাবি কতটা সত্যি, সেটাই ফ্রান্সের সরকারকে তদন্ত করে দেখতে বলছে নয়াদিল্লি। কারণ ফরাসি সংস্থা ডিসিএনএস-এর সঙ্গে মিলে মুম্বইয়ের মাজগাঁও ডকে ছ’টি স্করপেন ডুবোজাহাজ তৈরি হচ্ছে। একটি তৈরির পর ইতিমধ্যেই মহড়া শুরু করেছে। বাকিগুলি চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা।

এই পরিস্থিতিতে আচমকা এমন বিড়ম্বনার পর কূটনৈতিক স্তরে ফ্রান্সের ডিরেক্টর জেনারেল অফ আর্মানেন্ট-এর কাছে দরবার করেছে নৌসেনা। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রে জিয়েগলার জানিয়েছেন, গোপন নথি ফাঁসের বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এই সব তথ্যের গুরুত্বও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও নৌসেনার অফিসারদের একটি দলকে তদন্তে বিদেশে পাঠানো হবে।

নৌসেনার বক্তব্য, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তৈরি উচ্চস্তরীয় কমিটি এই তথ্য ফাঁসের সম্ভাব্য ফল কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখছে। এর ফলে ডুবোজাহাজের নিরাপত্তায় যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, নৌসেনা তা দেখছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে নৌসেনা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা জানতে পারেন, অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রে এই তথ্য ফাঁসের খবর প্রকাশ হয়েছে। মাঝরাতেই বিষয়টি নৌসেনা প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়। সারা রাত জেগে নৌসেনার কর্তারা কোথা থেকে, কী ধরনের নথি ফাঁস হয়েছে, তার পরীক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন। ভোররাত পর্যন্ত জেগে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। সকালে নৌসেনা কর্তাদের থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী তা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যান। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রাথমিক ভাবে নথি পরীক্ষার পরে কী পাওয়া গিয়েছে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবারও দফায় দফায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন নৌসেনা প্রধান।

যে মাজগাঁও ডকে ডুবোজাহাজ তৈরি হচ্ছে, সেখানকার এক কর্তা আজ জানান, ‘‘আমরা তদন্তে নৌসেনাকে সাহায্য করছি। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, আমাদের তরফ থেকে কোনও তথ্য ফাঁস হয়নি। ফাঁস হওয়া নথি আসল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।’’ নৌসেনা ও মাজগাঁও ডক কর্তাদের দাবি, ডুবোজাহাজের মাপকাঠি সংক্রান্ত গোপন তথ্য ফাঁস হলেও ডুবোজাহাজ তৈরির পর সেগুলি অনেকটাই বদলে যায়। কাজেই তথ্য ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে সঙ্কট না-ও আসতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন