‘প্রধানমন্ত্রীর জেল হওয়া উচিত’, রাফালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে মন্তব্য রাহুলের

নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এ বার রাফাল চুক্তিতে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’-এর অভিযোগ তুললেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাফাল চুক্তিতে অনিল অম্বানীর মধ্যস্থতাকারী (‘মিডলম্যান’) হিসেবে কাজ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এ বার রাফাল চুক্তিতে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’-এর অভিযোগ তুললেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাফাল চুক্তিতে অনিল অম্বানীর মধ্যস্থতাকারী (‘মিডলম্যান’) হিসেবে কাজ করেছেন। সরকারি গোপনীয়তা আইন ভেঙে আগেভাগেই রাফাল চুক্তি হতে চলেছে বলে অনিল অম্বানীকে জানিয়ে দিয়েছেন। রাহুলের যুক্তি, ‘‘এ তো ফৌজদারি অপরাধ। শুধু এর জন্যই প্রধানমন্ত্রীর জেল হওয়া উচিত।’’

Advertisement

নতুন ফাঁস হওয়া একটি ই-মেলকে আজ মোদীর বিরুদ্ধে অস্ত্র করেছেন রাহুল। বিমান সংস্থা এয়ারবাস-এর এক কর্তার লেখা ওই মেল অনুযায়ী, ২০১৫-র মার্চে অনিল অম্বানী তৎকালীন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। অম্বানী তাঁকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ফ্রান্স সফরে একটি চুক্তি সই করার প্রস্তুতি চলছে।

তথ্য বলছে, এর ঠিক ১০ দিন পরে, ২০১৫-র এপ্রিলে মোদীর ফ্রান্স সফরের সময়ই যৌথ বিবৃতিতে ভারত ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনবে বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়। তার ঠিক আগেই, মার্চে অম্বানী রিলায়্যান্স ডিফেন্স সংস্থা খোলেন। অম্বানীর সংস্থাই রাফাল চুক্তির শর্ত মেনে দাসো-র থেকে বরাত পায়। কংগ্রেসের অভিযোগ অস্বীকার করে আজ রিলায়্যান্স ডিফেন্স জানায়, মেলে রিলায়্যান্স ডিফেন্সের সঙ্গে এয়ারবাস হেলিকপ্টারের সমঝোতার কথা বলা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: যেখানে প্রিয়ঙ্কার ভয়, সেখানে গোয়েন্দা রয়!

মঙ্গলবারেই সংসদে রাফাল নিয়ে সিএজি-র রিপোর্ট পেশ করার কথা ছিল। বিজেপি নেতারা ভেবেছিলেন, সেই রিপোর্টকে ঢাল করে রাহুলের আক্রমণের জবাব দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিএজি রিপোর্ট আজ সংসদে পেশ হয়নি। বুধবার ওই রিপোর্ট পেশ হতে পারে।

রাহুলের যুক্তি, এর পরে সিএজি রিপোর্ট এলেও তার কোনও দাম নেই। কারণ সিএজি আসলে ‘চৌকিদার অডিটর জেনারেল’ হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে রাহুলের মন্তব্য, সিএজি রিপোর্ট চৌকিদারই লিখেছেন, চৌকিদারকে বাঁচানোর জন্যই লেখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: করো নয় মরো: যুদ্ধের মেজাজে শুরু প্রিয়ঙ্কার

যাঁর দিকে তির, সেই প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে মুখ না-খুললেও হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘যাঁরা ভ্রষ্ট, মোদীকে নিয়ে তাঁদেরই কষ্ট। চৌকিদারের প্রতি সৎ মানুষের আস্থা রয়েছে।’’ বিরোধীদের মহাজোটকে ফের ‘মহাভেজাল’ বলে মোদীর মন্তব্য, ‘‘মহাভেজালের মুেখরা আদালত, সিবিআইকে হুমকি আর মোদীকে গালিগালাজ করতে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।’’

কিন্তু কংগ্রেস সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘ফ্রান্স সফরে যে রাফাল চুক্তি হবে, তা তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের জানা ছিল না। বিদেশসচিব জানতেন না। অথচ অনিল অম্বানী ১০ দিন আগে থেকেই কী করে জানতেন যে বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা চুক্তির বরাত তিনি পেতে চলেছেন? এর জবাব প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘চরেরা যে কাজ করে, প্রধানমন্ত্রী সেই কাজ করছেন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহের থেকে কোনও অংশে কম নয়। উনি গোপনীয়তার শপথ নিয়েছেন। অথচ দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য অনিল অম্বানীকে দিয়ে দিচ্ছেন।’’ তাঁর যুক্তি, এত দিন রাফাল-এ দুর্নীতির প্রশ্ন ছিল, নিয়ম ভাঙার প্রশ্ন ছিল। এখন প্রধানমন্ত্রীর গোপনীয়তার শর্ত ভাঙার প্রশ্ন।

সিএজি রিপোর্ট না আসায়, খালি হাতেই কেন্দ্রের আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ রাহুলকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘‘উনি বিদেশি সংস্থার ‘লবিস্ট’ হিসেবে কাজ করছেন।’’ একই সুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি ব্লগ লিখে অভিযোগ তোলেন, কংগ্রেসের রাজপরিবারকে রক্ষা করার জন্য মিথ্যের জাল বোনা হচ্ছে। কংগ্রেসের নেতারা এতটাই পরিবারের দাসানুদাস যে, তাঁরা সত্যিটাও বলেন না।

সরকারি সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতির কাছে জমা পড়লেও তাতে এখনও অর্থ মন্ত্রকের সিলমোহর পড়েনি। কংগ্রেস লোকসভায় এ নিয়ে সরব হলে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন জানান, সিএজি রিপোর্ট পেশ হয়ে গিয়েছে। তাতে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বাস্তবে অন্য বিষয়ে সিএজি রিপোর্ট পেশ হয়েছিল। আজকের পরে কংগ্রেস নতুন করে জেপিসি তদন্তের দাবি তুলেছে। কিন্তু সরকার তাতে সম্মত না হওয়ায় কংগ্রেস লোকসভা থেকে ওয়াক-আউট করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন