নেমে এসো কপ্টার, ছবি তুলি একটা

দুর্গত মানুষকে উদ্ধারের জন্য গত কয়েক দিনে ঝুঁকি নিয়ে ছাদে হেলিকপ্টার নামিয়েছেন পাইলট, দড়ি ধরে আসন্নপ্রসবা মহিলাকে তুলে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে। সেই খবর ছ়়ড়িয়ে যেতেই এ বার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কপ্টার নামিয়ে এনে নিজস্বী তুলে ফেরত পাঠাচ্ছেন কিছু মানুষ!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫২
Share:

এই ভাবেই দুর্গত মানুষকে উদ্ধারের জন্য গত কয়েক দিনে ঝুঁকি নিয়ে ছাদে হেলিকপ্টার নামিয়েছেন পাইলট।

মেষপালক রোজই বলত, ভেড়ার পালে বাঘ পড়েছে। ছুটে এসে লোকজন দেখত, নিছক মজা! সত্যিই যে দিন বাঘ পড়ল, সে দিন আর কেউ এগিয়ে আসেনি তাই। এই গল্পের ঠিক উল্টোটা যদি বাস্তবে হয়? বাঘ আসে প্রায় রোজই। কিন্তু এক দিন বাঘ এসে যদি দেখে, ভেড়া ভেবে দৌ়ড়ে এলেও তারা আসলে ভেড়া নয়?

Advertisement

বন্যাবিধ্বস্ত কেরলে ঘটেছে এমনই উলটপুরাণ। জন্তু-জানোয়ারের ব্যাপার নয় অবশ্য। নিখাদ মনুষ্য কাহিনি! দুর্গত মানুষকে উদ্ধারের জন্য গত কয়েক দিনে ঝুঁকি নিয়ে ছাদে হেলিকপ্টার নামিয়েছেন পাইলট, দড়ি ধরে আসন্নপ্রসবা মহিলাকে তুলে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে। সেই খবর ছ়়ড়িয়ে যেতেই এ বার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কপ্টার নামিয়ে এনে নিজস্বী তুলে ফেরত পাঠাচ্ছেন কিছু মানুষ! প্রাণরক্ষার দায় তাঁদের ছিল না, নেহাতই মজা করার উদ্দেশ্য ছিল। বিপর্যয়ের সময়ে এমন রসিকতায় ক্ষুব্ধ বিমান ও নৌ-বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডারেরা। দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য নাগরিকদের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীও।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত দেড় দিনে তিরুঅনন্তপুরম ও ইদুক্কির দু’টি জায়গায় ভুল কারণে চপার নামানোর রিপোর্ট এসেছে। তিরুঅনন্তপুরমের আরুভিপ্পুরমে বিমান বাহিনীর একটি কপ্টারের কর্মীরা দেখেন, কিছু মানুষ জামা উ়়ড়িয়ে এবং গাছের ডাল হাতে নিয়ে তাঁদের ইঙ্গিত করে সাহায্য চাইছেন। লোকালয়ের মধ্যে ঝুঁকি নিয়েই কপ্টার নীচে আসে। কপ্টারের দিকে এগিয়ে আসতে বলা হয় সাহায্যপ্রার্থীদের। কিন্তু তাঁদের কয়েক জন এগিয়ে এসে মোবাইল বার করে কপ্টার ও কর্মীদের ফ্রেমে রেখে নিজস্বী তুলে জানিয়ে দেন, এ বার কপ্টার ফিরে যেতে পারে! ইদুক্কিতে বাঁধের কাছাকাছি একটি জায়গায় একই রকম সঙ্কেত পেয়ে নেমে এসেছিল ত্রাণবাহী একটি চপার। ওই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি গোড়া থেকেই সঙ্গিন ছিল। কিন্তু সেখানেও চপার নামানোর পরে একই অভিজ্ঞতা। মোবাইলে ছবি তুলে প্রভূত ধন্যবাদ জানিয়ে চপার ফেরত পাঠায় এক দল লোক!

Advertisement

আরও পড়ুন: রান্না মাদ্রাসায়, খাওয়া গির্জায়, বিশ্রাম মন্দিরে

উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে বেরিয়ে তেল পুড়িয়ে, সময় নষ্ট করে এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কপ্টারের কর্মীরা। রিপোর্ট পেয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনও। বিপর্যয়ের সময়ে দুঃসাহসিক ও মানবিক একের পর এক দৃষ্টান্ত যখন তৈরি হচ্ছে কেরলে, তারই মধ্যে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে গোটা অভিযানের তাল কেটেছে। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী ই চন্দ্রশেখরনের বক্তব্য, ‘‘সেনা ও আধা-সেনার জওয়ান, চিকিৎসক বা মৎস্যজীবী— সব অংশের মানুষ বিপদের সঙ্গে সাধ্যমতো লড়াই করছেন। মানুষের প্রাণ বাঁচানো ও বাঁচার রসদ জোগাড়ের সময়ে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত!’’

প্রত্যন্ত এলাকায় মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে বহু মানুষ যেমন বিপদে পড়েছেন, তারই পাশাপাশি মোবাইল হাতেই নিজস্বীর ঝোঁকে বিচিত্র কাণ্ড ঘটাচ্ছে জনতার একাংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো ছবি পোস্টের অভিযোগও উঠেছে। কোথাও কোথাও ‘দেখানো’ হচ্ছে, ত্রাণ শিবিরে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। যার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে বলতে হয়েছে, ‘‘রাজ্য পুনর্গঠনের সময়ে সকলের কাছেই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement