বাইরে নিঃসঙ্গ হয়েছেন আগেই, এ বারে ঘরেও নিঃসঙ্গ আডবাণী

এই পুরনো বাংলোগুলির ভিতর ঘুণ ধরা দেওয়াল। লালকৃষ্ণ আডবাণী দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর যখন ৩০ নম্বর পৃথ্বীরাজ রোডের এই বাংলোটিতে আসেন তখন তিনি পাক-সন্ত্রাস, সংসদ আক্রমণ নিয়ে যতই হিমশিম খান না কেন, তাঁর স্ত্রী কমলা আডবাণী ব্যস্ত ছিলেন এই বাড়িটার দেওয়াল ভেঙে লাখ লাখ উড়ন্ত উইপোকা নিধন যজ্ঞে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ১৫:৩৯
Share:

শুনতেই ল্যুটেনস দিল্লি।

Advertisement

এই পুরনো বাংলোগুলির ভিতর ঘুণ ধরা দেওয়াল। লালকৃষ্ণ আডবাণী দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর যখন ৩০ নম্বর পৃথ্বীরাজ রোডের এই বাংলোটিতে আসেন তখন তিনি পাক-সন্ত্রাস, সংসদ আক্রমণ নিয়ে যতই হিমশিম খান না কেন, তাঁর স্ত্রী কমলা আডবাণী ব্যস্ত ছিলেন এই বাড়িটার দেওয়াল ভেঙে লাখ লাখ উড়ন্ত উইপোকা নিধন যজ্ঞে। এক দিন নর্থ ব্লক থেকে মধ্যাহ্নভোজনে এসে আডবাণী দেখেন বাড়ি তো নয় খন্ডহর। সিপিডব্লিউডি-র কর্মীদের বাহিনী উইপোকা মারতে ব্যস্ত। নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কমলা।

এই বাংলোটিতে আগে থাকতেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অনন্ত কুমার। তাঁকে ডেকে তো কমলাজির খুব ধমক। ব্যাপারটা কী? এই বাড়িতে থাকতে? এ তো জঙ্গলবুক।

Advertisement

আরও পড়ুন: লালমাটিতে গেরুয়া ঝড় তুলে দিয়েছেন ‘দিদি’, কঠিন চ্যালেঞ্জে অনুব্রত

সাত দিন ধরে চলল দেওয়াল ভেঙে উইপোকা বের করে করে আবার চুন-সিমেন্ট-পলেস্তারা লাগানো। এক দিন গিয়ে সাইট-সিংয়ের মতো বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখালেন শ্রীমতি আডবাণী। এমনই দাপুটে গৃহকর্ত্রী ছিলেন তিনি। বলতে খুব ভালবাসতেন, ‘আই অ্যাম দ্য রিয়েল হোম মিনিস্টার। আই অ্যাম আডবাণীস হোম মিনিস্টার।’

শেষ পর্যন্ত আডবাণীর হোম মিনিস্টারই আগে বিদায় নিলেন। পঞ্চাশ বছরের বেশি দীর্ঘ বিবাহিত জীবন। এক জন আর এক জনের অসাধারণ বন্ধু ছিলেন। গতকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগেও একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে স্মৃতিভ্রংশ অসুখের শিকার হন তিনি। সে-ও এক অদ্ভুত ঘটনা। কমলাদেবীর ভাই থাকেন নিউ জার্সিতে। কিন্তু বিমানে চড়তে খুব ভয় ছিল তাঁর। মুম্বই পর্যন্ত তিনি যেতেন ট্রেনে। বিমানে উঠলেই দম বন্ধ হয়ে আসত। ক্লস্টোফোবিয়া। তখন আডবাণী উপপ্রধানমন্ত্রী। তিনি গেলেন নিউ ইয়র্কে। এই প্রতিবেদকও ছিলেন সে সফরে। নিউ জার্সির বাড়িটি ছিল অসাধারণ। বাড়ির বাগানে হরিণ খেলছে। কিন্তু কী যে হল কমলাদেবীর! তিনি শুধু ভাবছেন, দিল্লিতেই আছেন। দিল্লির পুরনো ভৃত্যকে ডাকছেন, ‘ভবানী কী হল, এখনও চা দিলে না আডবাণীকে! গাছে জল কে দেবে?’

তখন আডবাণী ও তাঁর শ্যালক ভেবেছিলেন, এ সব বোধহয় জেটল্যাগের ফল। এর পরও বহু বছর কেটে গিয়েছে। ব্যস্ত জীবনে আডবাণী বুঝতেই পারেননি কমলাদেবীর অসুস্থতা। গত ২-৩ বছরে হঠাৎ দেখা গেল, ধীরে ধীরে কমলাদেবী সব ভুলে যাচ্ছেন। কাউকে চিনতে পারছেন না। তিনি কোথায় আছেন, বুঝতে পারছেন না। মনোচিকিৎসকেরা এলেন। তাঁরা রায় দিলেন, দশ বছর আগে নিউ জার্সিতে আসলে কমলাদেবীর একটা স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষ ধরনের ‘অ্যাটাক’ হয়েছে। এ-ও হার্ট অ্যাটাকের মতো। আগেই হয়তো চিকিৎসা করা উচিত ছিল।

ধীরে ধীরে আর কাউকেই তিনি চিনতে পারতেন না। এক জন ফিজিও থেরাপিস্ট আর এক জন মেন্টাল কাউন্সিলর তাঁর সঙ্গে সারাক্ষণ থাকতেন। ঘরের মধ্যেও হুইল চেয়ারে ঘুরতেন তিনি। কিন্তু খাওয়াদাওয়া ছিল শারীরিক। অন্য কোনও ব্যাধি ছিল না শরীরে। মেয়ে প্রতিভা নিজের সমস্ত কাজকর্ম ছেড়ে সারা দিন বাড়িতেই থাকতেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসেছেন, সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসেছেন। আজ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও সম্পন্ন। কিন্তু এ বার যিনি যেখানে আছেন, তিনি সেখানে চলে যাবেন। বিজেপি এখন ক্ষমতার আসনে। তাই বিজেপি বড় ব্যস্ত বিজেপিকে নিয়ে।

দলে আগেই নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছেন আডবাণী। কিন্তু কাউকে মনে ধরতে না পারলেও শেষ দিন পর্যন্ত আডবাণীকেই একমাত্র চিনতে পারতেন তিনি। এ বার সত্যি সত্যিই বড় একা হয়ে গেলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন