বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। মঙ্গলবার সকালেই তা শক্তি বৃদ্ধি করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়েছে। — ফাইল চিত্র।
শক্তি বাড়িয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনমের মাঝে কাকিনাড়ার কাছাকাছি কোথাও আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়। এই অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বিশাখাপত্তনম শহরও। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিশাখাপত্তনম, পূর্ব গোদাবরী, পশ্চিম গোদাবরী, কোনাসীমা জেলার নিচু এলাকাগুলি থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ওড়িশা, তেলঙ্গানা এবং তামিলনাড়ুর প্রশাসনও। সাবধানতার কারণে বাতিল রাখা হয়েছে অন্ধ্র উপকূল সংলগ্ন এলাকা দিয়ে চলাচল করা বেশ কিছু প্যাসেঞ্জার এবং দূরপাল্লার ট্রেনও।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে মোন্থা। ওই সময়ে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি থাকতে পারে ৯০-১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। সোমবার রাতে মছলিপত্তনম থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে, বিশাখাপত্তনম থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কাকিনাড়া থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল ঘূর্ণিঝড়টি। ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালেই মোন্থা একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে ভারী ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা উপকূলবর্তী এলাকায় জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া, রাজামুন্দ্রে, কাকিনাড়া, বিশাখাপত্তনম এবং ভীমবরম হয়ে চলাচল করা অন্তত ৬৫টি ট্রেন মঙ্গল এবং বুধবারের জন্য বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আবহওয়া কেমন থাকে, সেই অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেল আধিকারিকেরা। দুর্যোগের আশঙ্কায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরেও। ইন্ডিয়ো এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিশাখাপত্তনম থেকে উড়ানের সব বিমান মঙ্গলবার বাতিল রাখা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সে রাজ্যের নিজস্ব বিপর্যয় মোকাবিলা দলও মোতায়েন রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। নিচু এলাকাগুলি থেকে মানুষকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যেতে শুরু করেছে তারা। দুর্যোগের সময়ে যাতে বিদ্যুৎ এবং জলের পরিষেবা অবিচ্ছিন্ন থাকে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রশাসন।
সতর্ক রয়েছে ওড়িশার প্রশাসনও। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিলকা হ্রদে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্যোগের আশঙ্কায় ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রাখা হয়েছে। নিচু এলাকাগুলি থেকে ইতিমধ্যে মানুষজনকে সেই আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা শুরু হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বেশ কিছু মাছ ধরার নৌকা ওড়িশার উপকূলে চলে এসেছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই নৌকাগুলি এখন আর অন্ধ্র উপকূলের দিকে ফিরতে পারছে না। এমন ৩০টি নৌকা ওড়িশার গোপালপুর বন্দরে নোঙর করা হয়েছে। ওই নৌকাগুলির মৎস্যজীবীদেরও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে গঞ্জামের জেলা প্রশাসন।
মোন্থার প্রভাব পড়তে চলেছে বাংলাতেও। বেশ কয়েকটি জেলায় রয়েছে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। দুর্যোগের পূর্বাভাস কলকাতাতেও। মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েক জেলায় দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া বইতে পারে। ওই জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে হতে পারে ভারী (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার) বৃষ্টি। বুধ এবং বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা ঝো়ড়ো হাওয়ার সতর্কতা রয়েছে। বুধবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবারও এই জেলাগুলিতে ঝড়বৃষ্টির জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বীরভূম, মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।