সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার গভীরে গিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আজ শীর্ষ আদালতের ‘জাজেস চেম্বারে’ সিবিআই, আইবি এবং দিল্লি পুলিশের প্রধানকে ডেকে পাঠায় বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চ। বিচারপতি মিশ্রের মতে, অভিযোগ অনুযায়ী দালালেরা যদি এখনও সক্রিয় থাকে এবং বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তা হলে এই প্রতিষ্ঠান এবং ‘আমরা’ কেউ-ই টিকে থাকব না। বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামিকাল ফের এই মামলার শুনানি হবে।
উৎসব সিংহ বইন্স নামে এক আইনজীবী অভিযোগ করেছিলেন, প্রধান বিচারপতি গগৈয়ের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে। তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ বেঞ্চ। বইন্সের আইনজীবী আজ হাজির হয়েছিলেন এজলাসে। হলফনামা ছাড়াও বন্ধ খামে কিছু তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে বইন্সের তরফে। সে সব খতিয়ে দেখে বেঞ্চ জানায়, বিষয়টি শুধু প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে চক্রান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্য বিচারপতিরাও জড়িয়ে রয়েছেন এর সঙ্গে। শীর্ষ আদালতের বিশেষ বেঞ্চ বলেছে, ‘‘আমরা এ নিয়ে তদন্ত করব। অভিযোগ উঠেছে, দালালেরা সক্রিয় এবং তারা বিচার ব্যবস্থাতেও হস্তক্ষেপ করছে— আমরা এর গভীরে গিয়ে দেখত চাই। এরা যদি এমন কাজ চালিয়ে যেতে থাকে, তা হলে আমরা কেউই টিকে থাকব না।... দালালেরা এই ব্যবস্থায় থাকতে পারে না। আমরা যুক্তিসঙ্গত উপসংহারে পৌঁছতে চাই।’’ শীর্ষ আদালতের মতে, ‘‘বিষয়টি খুবই বিচলিত করার মতো। কারণ এর সঙ্গে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার প্রশ্নটিও জড়িয়ে রয়েছে।’’
তদন্তকারী সংস্থাগুলির প্রধানদের তলব করা প্রসঙ্গে বেঞ্চ বলেছে, ‘‘এটা কোনও তদন্ত নয়। আমরা ওই অফিসারদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছি। আমরা কোনও তথ্য প্রকাশ করতে চাই না।’’ বেঞ্চ জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এবং বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মধ্যে কোনও যোগাযোগ নেই। ফলে দু’টি অভিযোগের তদন্ত নিজস্ব পথে চলবে।
শীর্ষ আদালতে হাজির ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল এবং সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁরা আবেদন জানান, আদালতের নজরদারিতে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হোক। সিটের তদন্তে সত্য সামনে আসবে। বিচারপতি মিশ্রের মতে, এটি অত্যন্ত ‘সংবেদনশীল বিষয়’। তিনি বলেন, ‘‘দেশের ইতিহাসে এই প্রথম প্রধান বিচারপতি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করলেন। অতীতে কোনও প্রধান বিচারপতি এমন সাহস দেখাননি।’’
আদালতে বইন্সের আইনজীবী আজ অভিযোগ করেন, বেণুগোপাল তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। অভিযোগ উড়িয়ে বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি আর এফ নরিম্যান বলেন, ‘‘ওঁর (বেণুগোপাল) বিরুদ্ধে আপনার এক বিন্দু সন্দেহ থাকা উচিত নয়। উনি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন না। ওঁকে সম্মান করুন। না হলে আপনাকে আদালত থেকে বার করে দেব।’’
সুপ্রিম কোর্টের যে প্রাক্তন কর্মী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন, তাঁর জামিনের আবেদন খারিজের জন্য দিল্লির এক আদালতে আর্জি জানায় দিল্লি পুলিশ। আদালত জানিয়েছে, ওই আবেদনের শুনানি হবে আগামী ২৩ মে।