উপত্যকায় সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন শালওয়ালাদের 

মির বাশাত হোন বা আজাদ আহমেদ, কিংবা অন্য কাশ্মীরি —সুর একই। প্রতি বছরের মতো এ বারও শাল-সোয়েটার-জ্যাকেটের পসরা নিয়ে কাশ্মীর থেকে ওঁরা চলে এসেছেন হাওড়ার বাগনানে।

Advertisement

নুরুল আবসার

বাগনান শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২২
Share:

সন্তানদের সঙ্গে মির বাশাত। —নিজস্ব চিত্র

লাভের গুড় পিঁপড়ে খাবে, ওঁরা ধরে নিয়েছেন। তবু পাঁচ মাসের জন্য নিশ্চিন্ত। পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না। কারণ, এ বার স্ত্রী-সন্তানেরাও সঙ্গে এসেছেন।

Advertisement

মির বাশাত হোন বা আজাদ আহমেদ, কিংবা অন্য কাশ্মীরি —সুর একই। প্রতি বছরের মতো এ বারও শাল-সোয়েটার-জ্যাকেটের পসরা নিয়ে কাশ্মীর থেকে ওঁরা চলে এসেছেন হাওড়ার বাগনানে। অবশ্য শুধু বাগনানই বা কেন? প্রতি বছর দুর্গাপুজোর পর শীত-পোশাকের পসরা নিয়ে বাংলার নামা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন ওই কাশ্মীরি বিক্রেতারা। ঘর ভাড়া নেন। মার্চের শেষে ফিরে যান। বাগনানে আসা বেশির ভাগ কাশ্মীরিই এ বারই প্রথম এলেন সপরিবারে।

‘‘কাশ্মীরের যা অবস্থা, ওখানে স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে রেখে এখানে ব্যবসায় মন বসবে না।’’— বলছেন ওঁরা। এই বাংলা যাঁদের ‘শালওয়ালা’ হিসেবে চেনে। তিন মাস আগে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হয়। রাজ্য ভাগ হয়ে গিয়েছে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। রাস্তাঘাট এখনও পুলিশ ও সেনার অধীনে। ব্যবসাপত্র কার্যত বন্ধ।

Advertisement

আরও পড়ুন: কাশ্মীরের স্কুলে হাজিরা নিয়ে কেন্দ্রের বক্তব্যে প্রশ্ন

স্কুল-কলেজ বন্ধ। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসেনি বলে অনেকেরই দাবি। কিন্তু পেটের টান তো আছে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ আছে। অসুখ-বিসুখ আছে। অর্থ জোগাবে কে? তাই উপত্যকা ছেড়ে পাড়ি দিতে হয়েছে বাগনানে। কিন্তু বাড়তি খরচের হিসেব কষেও ওঁরা পরিবারকে কাছছাড়া করতে চাননি।

মির বাশাতের কথাই ধরা যাক। ৩১ বছর ধরে বাগনানে আসছেন পহেলগাঁওয়ের লালবাজারের ওই বাসিন্দা। এ বারই প্রথম স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়েকে সঙ্গে আনলেন। ‘‘এ বারের পরিস্থিতি অন্য রকম। আমি না থাকলে যদি ঝামেলা হয়, কে সামলাবে? এখানে ওঁদের এনে নিশ্চিন্তে থাকতে পারব।’’— বলছেন বাশাত। এ জন্য বাড়তি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করতে হচ্ছে বাশাতকে। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ জনের আসা-যাওয়ার বিমানভাড়াই তো ৬২ হাজার টাকা! এখানে একটি বাড়তি ঘরও নিতে হয়েছে। তার ভাড়া, সংসার খরচ— সব মিলিয়ে বিপুল টাকার বোঝা ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু কী আর করা যাবে!’’

কাশ্মীরের ইলাহিবাজারের বুচপাড়ার বাসিন্দা আজাদ আহমেদ বাগনানে আসছেন ২৫ বছর ধরে। তিনিও এ বার পরিবারকে সঙ্গে রাখছেন। তাঁদের আসার ব্যবস্থা করে নিজে ক’দিন আগে চলে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে পরিবারের নিরাপত্তা আগে। ওখানে চারদিকে ভয়ের পরিবেশ। ওখানে ওঁরা থাকবে কী করে? তার চেয়ে আমার সঙ্গে এখানে পাঁচ মাস থাকুক।’’ বাশাতের প্রশ্ন, ‘‘মেয়ের স্কুল কবে খুলবে কে জানে! আসার আগে কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে মেয়ের স্কুল থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে আসি। মেয়ে উত্তর লেখার পরে তা স্কুলে গিয়ে জমা দিই। এ ভাবে পড়াশোনা চলে?’’

শুধু এই পাঁচ মাসের ব্যবসায় কারও গোটা বছর চলে না। কাশ্মীরেও তাঁরা ছোট ব্যবসা করেন। অনেকের দোকানও আছে। কিন্তু এ বার সেই সব দোকান এখনও পর্যন্ত বন্ধ বলে তাঁরা জানান। আজাদের কথায়, ‘‘আল্লা জানেন, দেশে ফেরার পরে আমি দোকান ফের খুলতে পারব কিনা।’’ বাসাত বাড়িতেই ব্যবসা করেন। তিনিও বলেন, ‘‘এখানে যা লাভের বেশিরভাগ টাকাই খরচ হয়ে যাবে। ওখানে ফেরার পরেও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, নিজের ব্যবসাও চালাতে পারব না। খুব সমস্যা হবে।’’ সকলেই চান, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক। দোকানপাট খুলুক। সন্তানেরা স্কুলে যাক। শান্তি ফিরুক উপত্যকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন