দমদমে সিদ্ধার্থ দাসের বাড়িতে তাঁকে জেরা করতে এসেছিলেন মুম্বইয়ের পুলিশ অফিসার উমেশ্বর কাম্বলে (মাঝখানে)। সংবাদমাধ্যমের ভিড় এড়িয়ে তাঁকে বার করে নিয়ে যাচ্ছেন সহকর্মীরা। বুধবার রাতে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
তিনি যে এই শহরে আছেন, তা নিশ্চিত ভাবে জানা গিয়েছিল দিন তিনেক আগে। বুধবার কলকাতায় এসেই শিনা বরার বাবা সিদ্ধার্থ দাসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলল মুম্বই পুলিশের তদন্তকারী দল।
বুধবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ তিন সদস্যের ওই দলটি সিদ্ধার্থবাবুর দমদমের বাড়িতে যায়। প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কথা বলেন অফিসারেরা। সিদ্ধার্থবাবুর স্ত্রী বাবলিদেবীর সঙ্গেও তাঁদের কথা হয় বলে সূত্রের দাবি। পরে সিদ্ধার্থবাবু জানান, মুম্বই পুলিশ তাঁর লিখিত বিবৃতি নিয়ে গিয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
শিনা খুনের তদন্তে বুধবার সকালেই কলকাতায় পৌঁছয় মুম্বই পুলিশের দলটি। দমদম থানা সূত্রে খবর, দুপুরের দিকে তারা খবর পায়, মুম্বই পুলিশের অফিসারেরা সন্ধেবেলা সিদ্ধার্থবাবুর বাড়িতে আসছেন। সেই মতো প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়। রাতে মুম্বইয়ের তদন্তকারীদের ওই বাড়িতে নিয়ে যায় দমদম থানার পুলিশ। সূত্রের খবর, বাড়ির দোতলায়, সিদ্ধার্থবাবুর বাড়িওয়ালার ঘরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মুম্বই পুলিশের অফিসারেরা। ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এবং তাঁদের দুই সন্তান শিনা ও মিখাইল সম্পর্কে সিদ্ধার্থবাবুর কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। তবে প্রয়োজনে সিদ্ধার্থবাবুকে মুম্বইয়েও ডাকা হতে পরে বলে তদন্তকারীরা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। সিদ্ধার্থবাবু নিজেও বলেছেন, তদন্তে তিনি সব রকম সহযোগিতা করবেন।
মঙ্গলবার রাতে সিদ্ধার্থবাবুর সঙ্গে ফোনে প্রথম বার মুম্বই পুলিশেকথা হয়। সিদ্ধার্থবাবু জানিয়েছেন, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মুম্বই পুলিশের এক পদস্থ কর্তা তাঁকে ফোন করেছিলেন। যদিও একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার সিদ্ধার্থবাবু নিজেই মুম্বই পুলিশের ডিএসপি পদমর্যাদার এক কর্তাকে ফোন করেছিলেন। তার পরেই এ দিন সকালে মুম্বই পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
সিদ্ধার্থবাবুর বাড়ি যাওয়ার আগে এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ আলিপুরের বেলভেডিয়ার রোডে ব্যবসায়ী অজয় রাওলার বাড়িতে যায় মুম্বই পুলিশের দলটি। শিনা খুনে ধৃত ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্নার বন্ধু এই অজয়বাবু। এই বাড়ি থেকেই সঞ্জীবকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ দিন অজয়বাবুর বাড়ি থেকে সঞ্জীবের ল্যাপটপ ও মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করে মুম্বই পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আলিপুর থানার কয়েক জন অফিসারও।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের অফিসারেরা জানিয়েছিলেন, অজয়বাবুর বাড়িতে সঞ্জীবের মোবাইল ও ল্যাপটপ রয়েছে বলে জেরায় জানা গিয়েছে। শিনা হত্যার চক্রান্তের হদিস পেতে ওই ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে অবশ্য মুম্বইয়ের অফিসারেরা কিছুই বলতে চাননি।
দমদমে সিদ্ধার্থবাবুর বড়ির সামনেও এ দিন সকাল থেকে ভিড় লেগে ছিল সংবাদমাধ্যমের। ইতস্তত কৌতূহলী অনেকেও ছিলেন। আশপাশের পাড়া থেকেও অনেকে ওই এলাকা ঘুরে যান। জায়গায় জায়গায় জটলা করে কখনও ইন্দ্রাণী কিংবা শিনা-মিখাইল, কখনও সিদ্ধার্থবাবুকে নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে তাঁদের।
প্রতিবেশীরা অবশ্য সিদ্ধার্থবাবুদের পাশেই থেকেছেন। সকলেই বলছিলেন, অতীতের একটি ঘটনার প্রভাব যাতে দাস পরিবারের কোনও ক্ষতি না করে, সেটা দেখা দরকার। প্রতিবেশীদের কেউ সকালে চা তৈরি করে নিয়ে এসেছেন, কেউ বা জলখাবার। দুপুরের খাবারও এসেছিল এক পড়শিরই বাড়ি থেকে।
আজ সারাদিন সপরিবার ঘরবন্দিই ছিলেন সিদ্ধার্থবাবু। বাড়ির দরজা-জানলা ছিল বন্ধ। ফোনে সিদ্ধার্থবাবু জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তাঁর প্রচণ্ড ধকল গিয়েছে। প্রায় সারা দিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাই এ দিন তিনি খুব ক্লান্ত। স্ত্রীর শরীরও বিশেষ ভাল নেই। তাই ঘরেই রয়েছেন।
রাত দশটা নাগাদ সিদ্ধার্থবাবুর বাড়ির সামনে সংবাদমাধ্যমের ঘেরাটোপ ভেঙে রীতিমতো টানাহেঁচড়া করে এক ভদ্রলোককে বের করে নিয়ে যান শক্তপোক্ত চেহারার দু-তিন জন যুবক। আপাত নিরীহ, টাকমাথা ওই মাঝবয়েসি ব্যক্তিটিই হলেন মুম্বই পুলিশের দুঁদে অফিসার উমেশ্বর কাম্বলে। তদন্তকারী দলের নেতা।
(সহ-প্রতিবেদন: কৌশিক ঘোষ ও শিবাজী দে সরকার)