Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হোক মুখ্যমন্ত্রী মমতার, একান্ত ভাবে চাইছে ঢাকা

মমতাকে শেখ হাসিনা চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতে আসছেন এবং তিনি আশা করেন সেই সফরে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হবে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২২ ০৬:০২
Share:

আগামী ৫ সেপ্টেম্বরে দিল্লি পৌঁছবেন শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র।

প্রায় তিন বছর পর ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৫ সেপ্টেম্বরে দিল্লি পৌঁছবেন তিনি। তাঁর আসন্ন সফরের আগে ঢাকা একান্ত ভাবে চাইছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন।

Advertisement

এর আগে মমতাকে শেখ হাসিনা চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতে আসছেন এবং তিনি আশা করেন সেই সফরে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে মমতার প্রশংসাবাক্যের জন্য হাসিনা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন তাঁর চিঠিতে। মমতাকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, ‘আপনার সৌহার্দ্য এবং অভিনিবেশ আমায় মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে।’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ঠিকই, কিন্তু রাজনৈতিক স্তরে কোনও যোগাযোগ হয়েছে কি না, তা সরকারি কর্তারা বলতে পারছেন না। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সব মিলিয়ে হাসিনার ভারত সফরের সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ভারত থেকে বাংলাদেশ ফেরার পরেই শেখ হাসিনার নিউ ইয়র্কে যাওয়ার কথা রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে যোগ দিতে। তার পরে বাংলাদেশ ধীরে‌ ধীরে নির্বাচনের আবহাওয়ায় ঢুকে পড়বে। আগামী বছর সে দেশে জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশ সূত্র বলছে, এ বারের নয়াদিল্লি সফরে ঢাকা এমন কিছু হাতে নিয়ে ফিরতে চায়, যা আওয়ামী লীগ সরকারকে ঘরোয়া রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দেবে। নয়াদিল্লি সফর সেরে দেশবাসীর কাছে স্বাভাবিক ভাবেই খালি হাতে ফিরতে চাইবেন না হাসিনা। ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তির রূপায়ণ নিয়ে এই সফরে যে কোনও অগ্রগতি হবে না তা জানে ঢাকা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বল কিছুটা গড়িয়ে দিতে পারলেও আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক লাভ। এই চুক্তি রূপায়ণে যে বাংলাদেশ সরকার ঐকান্তিক, সেই বার্তা দেশবাসীকে দেওয়া সম্ভব হবে।

Advertisement

হাসিনা ভারতে আসার ঠিক আগে, গত কাল থেকে নয়াদিল্লিতে শুরু হয়েছে যুগ্ম নদী কমিশনের বৈঠক। প্রায় ১২ বছর পর মন্ত্রী পর্যায়ের এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন হল। যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন জলসম্পদ দফতরের দুই মন্ত্রী জহিদ ফারুখ এবং এনামুল হক শামিম। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক। তার আগে দু’দিন সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়ে গিয়েছে। হাসিনার সফরের আগে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানানো হচ্ছে। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে গিয়েছে ৫৪টি নদী। তার মধ্যে ৬টি নদীর জলবণ্টন এবং বিভিন্ন দিক নিয়ে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা হয়েছে বলে জানাচ্ছে কূটনৈতিক সূত্র। তবে তিস্তা নিয়ে কোনও অগ্রগতি এই বৈঠকে হয়নি।

বাংলাদেশের এক কর্তার বক্তব্য, “এত বছর বন্ধ থাকার পরে আবার যে আলোচনা শুরু হল, সেটাই আপাতত সব চেয়ে বড় পাওনা। কূটনীতিতে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু আলোচনা চালিয়ে যাওয়া জরুরি। তিস্তা নিয়ে ভারত সরকারের সীমাবদ্ধতা আমরা বুঝি। তবে আজ না হোক কাল, তিস্তা চুক্তির রূপায়ণ হবেই।” তবে সূত্রের খবর, তিস্তা না হলেও কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন নিয়ে সমঝোতা পত্র

চূড়ান্ত হয়েছে কমিশনের বৈঠকে। হাসিনার সফরে এ’টি সই হওয়ার কথা। ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির মেয়াদও শেষ হওয়ার মুখে। সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ঢাকার এক শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, “দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত ভূকৌশল এবং ভূ-অর্থনীতির সাপেক্ষে ভারত নতুন কিছু পদক্ষেপ করুক যাতে বাংলাদেশ শক্তিশালী হয়। ভারতকে অবশ্যই তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে স্বীকৃতি দেওয়া— এই দুইয়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।” রোহিঙ্গা এবং তিস্তার মতো বিষয়কে ঠিকমতো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ হাসিনার সফরের প্রাক্কালে ভারতকে করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠাতে ভারতকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার অনুরোধও করা হচ্ছে ঢাকা শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে।

কূটনীতিকদের মতে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বোঝাপড়া, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে জ্বালানি তেল-সহ নিত্যপণ্যের সরবরাহে সঙ্কট এবং বাংলাদেশ ও ভারতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সফরটিতে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের মন্তব্যে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার তা করতে’ ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন— এই মর্মে সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী মন্তব্য করায় হইচই পড়ে যায়। তাঁর ওই মন্তব্যের এক দিন পরে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘‘ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন