বিজেপি শরণে শিবসেনা

কোনও শর্ত না রেখে বার্তা পাঠালেন উদ্ধব

শরদ পওয়ারের তাস হাতে রেখেই উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল বিজেপি। গত কাল বিধানসভা ভোটের ফল স্পষ্ট হতেই শরদ পওয়ার যে ভাবে নিঃশর্ত সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন, তার পর শিবসেনাকে পাশে না নিয়েই অনায়াসে সরকার গড়তে পারে বিজেপি। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপি জোট পেয়েছে ১২৩টি আসন। শরদ পওয়ারের এনসিপি ৪১টি। ফলে ৬৩টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করা শিবসেনাকে বিরোধী আসনে বসতে বাধ্য করতেই পারে রাজ্যে তাদের ২৫ বছরের জোটসঙ্গী।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

মুম্বই শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১১
Share:

হাসতে হাসতে দাওয়াই। চিকিৎসা গবেষণায় এখনও বহু পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। তাই শেখার মনটা যেন হারিয়ে না যায়, দেশের চিকিৎসকদের পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর। সোমবার এইমসের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পিটিআইয়ের ছবি।

শরদ পওয়ারের তাস হাতে রেখেই উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল বিজেপি।

Advertisement

গত কাল বিধানসভা ভোটের ফল স্পষ্ট হতেই শরদ পওয়ার যে ভাবে নিঃশর্ত সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন, তার পর শিবসেনাকে পাশে না নিয়েই অনায়াসে সরকার গড়তে পারে বিজেপি। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপি জোট পেয়েছে ১২৩টি আসন। শরদ পওয়ারের এনসিপি ৪১টি। ফলে ৬৩টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করা শিবসেনাকে বিরোধী আসনে বসতে বাধ্য করতেই পারে রাজ্যে তাদের ২৫ বছরের জোটসঙ্গী। উদ্ধব ঠাকরের নাছোড় দাবির মুখে যে জোট ভেঙেছে এই ভোটের আগে।

শিবসেনার রক্তচাপ বাড়িয়ে আজ রাত পর্যন্ত পওয়ারের প্রস্তাব খারিজ করেনি বিজেপি। যদিও এনসিপি-র দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার করে ভোটে জেতার পরে তাদের সমর্থনে সরকার গড়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে দলের অন্দরে। মহারাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডি অবশ্য আজ মুম্বইয়ে পা রেখেই বলে দিয়েছেন, রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার দাবি পেশ করতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখানোর প্রয়োজন নেই। রাজনাথ সিংহ মুম্বই এলেই দলের মুখ্যমন্ত্রী স্থির করে বিজেপি সরকার গড়ার দাবি জানাতে পারে। অন্য দিকে আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক ভাইয়াজি জোশী আজ লখনউয়ে বলেছেন, “শিবসেনা বা এনসিপি, কার সমর্থন নিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়া হবে, সেটা বিজেপি-ই ঠিক করবে। এ ব্যাপারে সঙ্ঘের কিছু বলার নেই।”

Advertisement

এ হেন চাপের মুখে ক্রমেই সুর নরম হচ্ছে শিবসেনার। গত কাল ভোটের ফল বেরনোর পরে উদ্ধব নিজেই ফোন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে, ভোট-প্রচারে যাঁদের প্রতি খড়্গহস্ত ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং রাজ্য নেতা ওম মাথুরকেও ফোন করেন উদ্ধব। বিজেপি-কে সমঝোতার বার্তা দেওয়ার সেটাই ছিল প্রথম উদ্যোগ। আজ সন্ধ্যায় শিবসেনা নেতা অনিল দেশাই আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “গত ২৪ ঘণ্টা ধরে আমরা বিজেপির সঙ্গে কথা বলছি। এবং সেই আলোচনায় আমরা শর্ত রাখিনি। শিবসেনা এখন বিজেপির প্রস্তাবের অপেক্ষায় রয়েছে। যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, আমরা যে তা খোলা মনে গ্রহণ করব, সেটা উদ্ধবজি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন।”

যদিও এ দিন দুপুরে দলীয় বিধায়কদের সম্মেলনে উদ্ধব নিজে বলেছেন, “যদি সম্মানজনক প্রস্তাব আসে, তা হলেই তা বিবেচনা করা হবে। তা না হলে বিরোধী দলে বসতেই পছন্দ করব।” বিজেপি সূত্র বলছে, প্রাথমিক ভাবে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, অর্থ এবং পূর্ত দফতর চেয়েছে শিবসেনা। ১৯৯৫ সালে সেনা-বিজেপি জোট সরকার গড়ার সময় বিজেপি-কে এই পদগুলিই ছেড়েছিলেন বালাসাহেব ঠাকরে। উদ্ধব এখন ফের সেই ফর্মুলা মানার কথা বলছেন। বিজেপির অবশ্য বক্তব্য, তখন শিবসেনার আসন সংখ্যা ছিল বিজেপির থেকে বড়জোর খানদশেক বেশি। আর এখন বিজেপি এগিয়ে দ্বিগুণ আসনে। ফলে বিশ বছরের পুরনো ওই সূত্র মানা সম্ভব নয়।

তবে এ নিয়ে দরাদরি দূরস্থান, মোটের উপর মানটা বাঁচে এমন কোনও প্রস্তাব এলেই সিকি শতকের জোটসঙ্গীর সঙ্গে ফের গাঁটছড়া বাঁধতে তৈরি শিবসেনা। কারণ, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তাদের ছাপিয়ে বিজেপি-ই এখন ‘বড় দাদা’। তা ছাড়া, শিবসেনার সাংগঠনিক অবস্থাও মোটেই ভাল নয়। এই অবস্থায় আরও পাঁচ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলে দল ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়েই সন্দিহান অনেক শিবসেনা নেতা। এখন তাই যেনতেন প্রকারে বিজেপির সঙ্গে যেতে চাইছেন উদ্ধব।

বিজেপি-ও ঠিক এমনই পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। যাতে শিবসেনা জোটে এলেও তাদের বিষদাঁত না থাকে। তাই তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠনিক আলোচনা শুরুর আগেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঠিক করে ফেলতে চান বিজেপি নেতারা। পারলে সরকার গড়ার দাবিও পেশ করে ফেলা হবে। (যদিও মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে বিজেপির অন্দরে। দেবেন্দ্র ফডণবীসের নামে আপত্তি রয়েছে নিতিন গডকড়ীর। আজ অমিত শাহের সঙ্গে প্রাতরাশের সময় নিজের ঘনিষ্ঠ এক নেতার নাম প্রস্তাব করেছেন তিনি।)

বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একটি বড় অংশ আবার উদ্ধবকে সঙ্গে নেওয়ার পক্ষপাতী নয়। কারণ, ভোটের আগে যে ভাবে মোদীকে গালমন্দ করেছেন উদ্ধব, তা আদৌ ভাল চোখে দেখেননি রাজ্য বিজেপি নেতারা। আজও শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’তে আগের মতো কড়া ভাষায় না হলেও সমালোচনা করা হয়েছে মোদীর। বলা হয়েছে, মোদী ঝড় আসলে ফানুস। মহারাষ্ট্রে কোনও দলই একার জোরে সরকার গড়ার অবস্থায় নেই।

রাজ্য বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, উদ্ধবকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়লে তাঁকে একেবারে খালি হাতে তো রাখা যাবে না। একটা-দু’টো হলেও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দিতে হবে। শরদ পওয়ারের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। এমনিতেই বেশ কয়েক জন নির্দল বিধায়ক বিজেপি-কে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। তার পর বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সময় পওয়ারের দল নিজের থেকে সমর্থন দিলে কারও কিছু বলার নেই। আর পরে অন্য কোনও দল ভেঙে কিছু বিধায়ক যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন করেন, তা হলে তো সোনায় সোহাগা। সেই প্রস্তুতিও তলে তলে চলছে।

কিন্তু এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, পওয়ারের দলের দুর্নীতি নিয়ে জোরদার সওয়াল করার পরে সরাসরি হোক বা ঘুরপথে তাদের সমর্থন নিয়ে সরকার চালানো উচিত নয়। তাতে ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়বে। এবং সেই বিচারে শিবসেনা অনেক ভাল বিকল্প। প্রথমত, হিন্দুত্ববাদী দল হিসেবে নীতিগত ভাবে তারা বিজেপির অনেক কাছাকাছি। তা ছাড়া, মহারাষ্ট্রে আলাদা লড়লেও এখনও তারা এনডিএ-র শরিক। শিবসেনা সাংসদ অনন্ত গীতে এখনও কেন্দ্রে মোদী সরকারের মন্ত্রী। আজ মোদীর ডাকা নৈশভোজেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। আর সবচেয়ে বড় কথা, বিজেপি কংগ্রেসের ভোট কেটে রাজ্যে তাদের শক্তি অনেক বাড়িয়ে নিতে পারলেও শিবসেনা একেবারে হীনবল হয়ে পড়েনি। ফলে পাঁচ বছর পরে যে তাদের দরকার হবে না, তাই বা কে বলতে পারে।

এই অবস্থায় উদ্ধবের সঙ্গে কথা বলতে মুম্বই আসছেন রাজনাথ। তাঁর সঙ্গে শিবসেনার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। উদ্ধব তাঁর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারবেন। তবে শিবসেনাকে যে তাঁরা চাইছেন, এটা প্রকাশ্যে দেখাতে চাইছেন না বিজেপি নেতারা। উল্টে কাজে লাগাতে চাইছেন উদ্ধবের তাগিদকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন