কংগ্রেস জুজু দেখিয়ে সেনার চাপ বিজেপিকে

বিজেপি চায় ঝগড়া ভুলে ভাব করতে। কিন্তু শিবসেনা এখনও তর্জন-গর্জন চালিয়ে যাচ্ছে। কংগ্রেসের কাছে জানতে চাইছে, ভাব করবে কি না। কংগ্রেসের নিজের ঘরেই এ নিয়ে দ্বন্দ্ব। তার মধ্যেই কংগ্রেস বলছে, শিবসেনা আগে পাকাপাকি ভাবে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করুক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

বিজেপি চায় ঝগড়া ভুলে ভাব করতে। কিন্তু শিবসেনা এখনও তর্জন-গর্জন চালিয়ে যাচ্ছে। কংগ্রেসের কাছে জানতে চাইছে, ভাব করবে কি না। কংগ্রেসের নিজের ঘরেই এ নিয়ে দ্বন্দ্ব। তার মধ্যেই কংগ্রেস বলছে, শিবসেনা আগে পাকাপাকি ভাবে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করুক। তার পরে ভাবা যাবে। বিজেপি আবার শিবসেনাকে সাবধান করছে, কংগ্রেস এনডিএ-তে ফাটল ধরাতে চায়। ওই ফাঁদে পা দিও না। শিবসেনা জেদ ধরে আছে, গোটা এশিয়ায় সব থেকে ধনী পুরসভার সিন্দুকের চাবি তারা কিছুতেই বিজেপির হাতে তুলে দেবে না। পুরভোটের ফল বেরনোর পরেও তারা বিজেপিকে নিশানা করে চলেছে। অন্য দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রস্তাব দিয়েছে গোপনে। যদিও সে বার্তা আর গোপন নেই।

Advertisement

সব মিলিয়ে বৃহন্মুম্বই পুরসভায় কে বা কারা ক্ষমতা দখল করবে, সে-ই প্রশ্নে আরব সাগরের তিরে নাটক তুঙ্গে। দেশের আর্থিক রাজধানীর এই ঘটনাপ্রবাহে প্রশ্ন উঠছে, মুম্বইয়ে কি আদৌ শিবসেনা-বিজেপির জোট হবে ফের? নাকি মহারাষ্ট্র বিধানসভা ও সেই সঙ্গে দিল্লিতেও বিজেপি-শিবসেনা জোট ভেঙে যাবে? মহারাষ্ট্রের সরকার অস্থিরতার মধ্যে পড়বে?

মহারাষ্ট্রে এ বারের পুরভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে একা লড়েছিল শিবসেনা। ফল বেরনোর পরে দেখা যাচ্ছে, শিবসেনা প্রথম হলেও ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। ক্ষমতা দখল করতে হলে আবার সেই বিজেপির সঙ্গেই জোট বাঁধতে হবে শিবসেনাকে। বৃহন্মুম্বই পুরসভায় শিবসেনা পেয়েছে ৮৪টি আসন, বিজেপি ৮২টি। বাকি যে দশটি পুরসভায় ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ৮টিই বিজেপি দখল করেছে। যা দেখে উত্তরপ্রদেশের ভোটেও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের। কিন্তু শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, বিজেপি ভাল ফলের বেলুন যতটা ফোলাচ্ছে, তাদের পক্ষে হাওয়া ততটা রয়েছে কি না, সেটা বিতর্কের বিষয়। বিজেপির ভোটের হার বাড়লেও অনেক জায়গায় ধাক্কাও খেয়েছে। আসলে কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার সুবাদেই বিজেপি জিতেছে।

Advertisement

বিজেপি বুঝতে পারছে, কংগ্রেসের জুজু দেখিয়ে তাদের চাপে ফেলতে চান উদ্ধব ঠাকরে। যাতে জোট হলেও দর কষাকষিতে সুবিধা হয়। আবার মতাদর্শগত ভাবে একেবারে বিপরীত মেরুতে থাকা শিবসেনার থেকে জোটের প্রস্তাবে দ্বিধাবিভক্ত কংগ্রেসের শিবির। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চহ্বাণ, নারায়ণ রাণের মতো নেতারা অবশ্য সব সম্ভাবনাই খোলা রাখতে আগ্রহী। তাঁদের মতে, রাজনীতিতে পাকাপাকি শত্রু-মিত্র বলে কিছু হয় না। শিবসেনা বিজেপির থেকে কম ক্ষতিকর। কিন্তু গুরুদাস কামাত, সঞ্জয় নিরুপমদের যুক্তি, কংগ্রেস এত দিন গেরুয়া দলগুলির বিরুদ্ধে লড়ে এসেছে। এখন তাদের কারও সঙ্গে হাত মেলালে মানুষ ক্ষমা করবে না। রাহুল গাঁধীকেও এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। কামাতরা আসলে সংখ্যালঘু ভোট খোয়ানোর ভয় পাচ্ছেন। সঞ্জয়ের সাফ কথা, বিরোধী আসনে বসবে। শিবসেনা-বিজেপি কী ভাবে মুম্বই পুরসভার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়ে মারামারি করে, সেটাই তুলে ধরবে।

আসল চালটি চেলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চহ্বাণ। তাঁর কথায়, ‘‘শিবসেনা যদি রাজ্যে ও কেন্দ্রে সরকার থেকে বেরিয়ে আসে, এক মাত্র তবেই আমরা ভাবতে পারি। ওরা আগে সেই সিদ্ধান্ত নিক।’’ কংগ্রেসের কৌশল স্পষ্ট, এনডিএ-তে ফাটল ধরানো। মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোটের পরে এবং পুরভোটের আগে শরদ পওয়ার ঠিক এটাই করছিলেন। বলছিলেন, শিবসেনা জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও এনসিপি মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকারকে সমর্থন করবে। আবার তামিলনাড়ুতেও বিজেপি এডিএমকে-র দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব থেকে ফায়দা তুলতে চেয়েছে। এখন সেই কৌশলই নিচ্ছে কংগ্রেস।

বিজেপির সমস্যা হল, পুরভোটে ভাল ফল করেও তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। শিবসেনা জোট থেকে বেরিয়ে গেলে মহারাষ্ট্রে সরকার পড়ে যাবে। এনসিপি সমর্থন দিলেও শরদ পওয়ার নির্ভরযোগ্য শরিক নন। রাজ্যে জোট ভাঙলে কেন্দ্রেও মোদী সরকার থেকে বেরিয়ে যেতে হবে শিবসেনাকে। সে ক্ষেত্রে বার্তা যাবে, মোদীর সরকারে কোনও শরিক দল থাকতে পারে না। সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০১৯-এ লোকসভা ভোট। তার আগে শরিক হারানোটা কাজের কথা নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ী তাই বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের লক্ষ্য মহারাষ্ট্র সরকারে অস্থিরতা তৈরি। তাই ওরা শিবসেনাকে সমর্থন করতে চাইছে। কিন্তু মানুষের রায় শিবসেনা-বিজেপির দিকে। তাই দু’দলের হাত মেলানো উচিত।’’ উদ্ধবকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে বিজেপির সেরা বাজি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসই। কিন্তু শিবসেনার মুখপত্রের মেজাজ থেকেই স্পষ্ট, উদ্ধব সহজে সুর নরম করবেন না। মেয়র নির্বাচন ৯ মার্চ।

ফলে সব দলের নেতারা ভালই বুঝতে পারছেন, মুম্বইয়ের নাটক শেষ হতে এখনও অনেক দেরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন