বিজেপির শর্তেই মাথা মুড়িয়ে মন্ত্রিসভায় শিবসেনা

কয়েক সপ্তাহ আগের ঘটনা। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করবেন নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এ জন্য কয়েক দিন আগেই উদ্ধব ঠাকরেকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি নাম দেওয়ার জন্য প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। উদ্ধব চাইছিলেন আগে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিসভা নিয়ে ফয়সালা। পাশাপাশি, কেন্দ্রে একটি পূর্ণমন্ত্রীর দাবিও ছিল তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

কয়েক সপ্তাহ আগের ঘটনা।

Advertisement

মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করবেন নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এ জন্য কয়েক দিন আগেই উদ্ধব ঠাকরেকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি নাম দেওয়ার জন্য প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। উদ্ধব চাইছিলেন আগে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিসভা নিয়ে ফয়সালা। পাশাপাশি, কেন্দ্রে একটি পূর্ণমন্ত্রীর দাবিও ছিল তাঁর। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মুম্বই নিয়ে ফয়সালা না হলেও উদ্ধব দলের নেতা অনিল দেশাইকে মন্ত্রী করতে পাঠিয়েছিলেন দিল্লিতে। বিমানবন্দরের ভিতরে সে দিন বসে রয়েছেন দেশাই, তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যেতে বাইরে অপেক্ষায় বিজেপির নেতারা। তখনই উদ্ধব জানতে পারেন মহারাষ্ট্রের ফয়সালা তো হচ্ছেই না বরং দেশাইকে প্রতিমন্ত্রী করার পরিকল্পনাই নিয়েছেন মোদী। উল্টে দলের অন্য শিবিরের নেতা সুরেশ প্রভুকে পূর্ণমন্ত্রী করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুব্ধ উদ্ধব শেষ মুহূর্তে কথা বলতে চেয়েছিলেন মোদীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ দেখাননি। ফলে দেশাইকে সোজা দিল্লি বিমানবন্দর থেকে মুম্বইয়ে ফেরার নির্দেশ দেন শিবসেনার শীর্ষনেতা।

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ছবিটা পুরোপুরি বদলে যেতে চলেছে। মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফডনবীস সরকারে মাথা মুড়িয়ে যোগ দিচ্ছে শিবসেনা, একে বারে বিজেপির শর্তেই। দু’দলের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা অবশেষে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। অথচ যে ভাবে শিবসেনার প্রার্থীকে খারিজ করে, সেই দলেরই নেতা সুরেশ প্রভুকে মোদী সরকারের মন্ত্রী করা হয়েছিল, তাতে বেজায় চটেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। যদিও সে দিন অনন্ত গীতেকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেননি, তবে দলের মুখপত্র ‘সামনা’-য় বিবৃতির তোপ দেগে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মোদীর চাপের সামনে সেই ক্ষোভকে আর ধরে রাখতে পারলেন না শিবসেনার শীর্ষনেতা। শেষ পর্যন্ত সমঝোতার রাস্তাতেই হাঁটতে হল তাঁকে। নিজের দল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল তাঁর।

Advertisement

এ বার মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রশ্নে দিল্লি ও মুম্বইয়ের সমীকরণকে মাথায় রেখেই রফাসূত্র বের করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় পাঁচ জন পূর্ণমন্ত্রী ও সাত জন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হবে শিবসেনাকে।

পাশাপাশি, নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভাতেও আরও একজন পূর্ণ মন্ত্রী পাবে তারা। বিজেপি সূত্রের খবর, ফডনবীস মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ এখন সময়ের অপেক্ষা।

মহারাষ্ট্রের ভোটে বিজেপির পৃথক ভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত, শিবসেনাকে না নিয়েই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথ উদ্ধবের উপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করেছিল। এর নেপথ্যে ছিলেন মোদী ও অমিত শাহ। তবে এখন দু’পক্ষের সমঝোতার পিছনেও বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে।

কোণঠাসা শিবসেনার তরফ থেকে আসা উপ-মুখ্যমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি এখন খারিজ করে দিয়েছে বিজেপি। পুর দফতর ছাড়া খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও নেই। তবে মহারাষ্ট্রে বারো জন মন্ত্রী দেওয়া হচ্ছে তাদের।

দীর্ঘ আলোচনার প্রক্রিয়ার মধ্যে শিবসেনার দরকষাকষির রাস্তা প্রায় বন্ধ করে এনেছিল বিজেপি। তবে সংখ্যালঘু সরকারে শিবসেনার সমর্থন পাওয়ার তাগিদ ছিলই। পাশাপাশি, দিল্লিতে মোদী সরকারের আর্থিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলি এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যেই সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলেছে বিজেপি। এ ক্ষেত্রে মোদী সরকারে অনন্ত গীতে ছাড়াও আরও এক জন মন্ত্রী পাওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

যদিও ভবিষ্যতে হাত ধরার রাস্তাকে খুলে রেখেই এ বার মহারাষ্ট্রের ভোটে পরস্পরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি ও শিবসেনা। মন্ত্রিসভায় শিবসেনার যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে সেই বৃত্ত সর্ম্পূণ হতে চলেছে। বিজেপিকে আস্থা ভোটে ঘুরিয়ে সমর্থন করেও শরদ পওয়ারের দল এনসিপি পরে ফডনবীস সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে শুরু করেছিল। পুরনো বন্ধুদের নতুন করে সম্পর্ক গড়ার পিছনে এই বিষয়টিও কাজ করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন