‘ভেবেছিলাম বাবা এ বারও ফিরে আসবে’

বাবার ছবি থেকে চোখ সরছে না যুধবীরের। বারো বছরের ছেলেটা বলে চলছে, ‘‘বাবার হাতটা শক্ত করে ধরেছিলাম। ওরা হাত ছাড়িয়ে বাবাকে নিয়ে গেল। বলল তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবে।’’ 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৩
Share:

ছবি: ফাইল চিত্র।

বাবার ছবি থেকে চোখ সরছে না যুধবীরের। বারো বছরের ছেলেটা বলে চলছে, ‘‘বাবার হাতটা শক্ত করে ধরেছিলাম। ওরা হাত ছাড়িয়ে বাবাকে নিয়ে গেল। বলল তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবে।’’

Advertisement

শুক্রবার দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানে যে তিন পুলিশকর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জঙ্গিরা খুন করেছে, যুধবীরের বাবা কুলবন্ত সিংহ তাঁদেরই এক জন। বাকিরা নিসার আহমেদ এবং ফিরদৌস আহমেদ। সকলেই বাতাগুন্দ গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই কুলবন্তদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হিজবুল মুজাহিদিনের জঙ্গিরা। ঘণ্টাখানেক পরে সূর্য যখন আকাশে ঝকঝক করছে, কয়েক কিলোমিটার দূরের এক ফলবাগানে মিলেছিল ওঁদের গুলিবিদ্ধ দেহ।

কুলবন্তরা রাজপুত। বাতাগুন্দ গ্রামের একমাত্র হিন্দু পরিবার। এলাকায় ওঁদের একটি মণিহারি দোকান আছে। শনিবার প্রতিবেশীরা ভিড় করে এসেছিলেন কুলবন্তদের বাড়িতে। সান্ত্বনা দিতে। কুলগাম পুলিশে কর্মরত ওই স্পেশ্যাল অফিসারের ছেলে যুধবীর তখনও বাবার ছবিটা বুকে আঁকড়ে রেখেছে। বলল, ‘‘ওরা সাত জন বাড়িটাকে ঘিরে ফেলেছিল। বাবা তখন ঘুমোচ্ছে। আমি পাশে শুয়েছিলাম। দাদি সবে রান্নাঘরে ঢুকেছে। বাবাকে ওরা টেনে তুলল। বাবা পুলিশে চাকরি করে কি না, পরিচয়পত্র আছে কি না, এ সব জানতে চাইছিল। বাবা ওদের বলল, চাকরিটা সে দিনই ছেড়ে দেবে। মণিহারি দোকান থেকেই আমাদের দিব্যি চলে যায়। তবু ওরা বাবাকে ছাড়ল না। ওদের মধ্যে লম্বা মতো, মাথায় টুপি, দাড়িওয়ালা এক জন বাবাকে টেনে নিয়ে গেল। ও-ই আমায় বলেছিল, বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’ চোখ জলে ভরে উঠছিল কিশোরের। ধরা গলায় বলল, ‘‘যখনই বায়না করতাম, বাবা চলে আসত। এ বারও ভেবেছিলাম বাবা ফিরে আসবে।’’

Advertisement

স্ত্রী রুকসানার চোখের সামনে ৩৮ বছরের নিসার আহমেদকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জঙ্গিদের হাতে পায়ে ধরেছিলেন রুকসানা। ওরা বলেছিল, ১০ মিনিটে নিসারকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ‘‘মিনিট দশেক পরে শুধু গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম’’, দু’চোখে এক রাশ শূন্যতা নিয়ে থেমে থেমে বলছিলেন সদ্য স্বামীহারা ওই কাশ্মীরি তরুণী।

২০১৭ সালে কাশ্মীরে ৩২ জন পুলিশকর্মীকে খুন করেছিল জঙ্গিরা। এ বছর ইতিমধ্যেই সংখ্যাটা ৩৭। চাকরি না ছাড়লে আরও পুলিশকর্মী খুন হবেন বলে সম্প্রতি হুমকি দিয়েছিল জঙ্গিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন