সেনার সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মনে করছে, অভিযুক্ত মেজর কোনও ভুল করেননি। বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছিল বাহিনীকে। —প্রতীকী ছবি / এএফপি।
সোপিয়াঁ কাণ্ডে পাল্টা এফআইআর করল সেনাবাহিনী। গনোভপোরায় সেনার কনভয় যে ভাবে আক্রান্ত হয়েছিল শনিবার, তাতে গুলি চালানো ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না বলে বাহিনীর তরফে আগেই জানানো হয়েছিল। কনভয়ের নেতৃত্বে থাকা মেজরের বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন যে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে, তাকে ‘অপরিণত’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছিল সেনার তরফে। তবে শুধু মৌখিক বিরোধিতাতেই থামল না সেনা। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগও দায়ের করা হল বুধবার।
এফআইআর-এ সেনা কারও নাম উল্লেখ করেনি। ইট-পাথর ছুড়ে কারা সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল, কারা সেনাকর্মীদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছিল এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছিল, তা খুঁজে বার করুক পুলিশ, এমনই দাবি জানানো হয়েছে সেনার পক্ষ থেকে।
শনিবার সন্ধ্যায় জম্মু-কাশ্মীরের সোপিয়াঁ জেলায় সেনার গুলিতে জাভেদ আহমেদ বাট এবং সুহেল জাভেদ লোন নামে দুই তরুণের মৃত্যু হয়। সেনার দাবি, প্রবল পাথর হামলার মুখে পড়ে আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি মনে করছেন, ওই ঘটনা সেনার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। যে কনভয় আক্রান্ত হয়েছিল, সেটির নেতৃত্বে থাকা মেজরের বিরুদ্ধে মেহবুবা প্রশাসন খুনের অভিযোগ দায়ের করে।
আরও পড়ুন: নৌসেনার হাতে তৃতীয় স্করপেন, ক্রমশ বাড়ছে সাবমেরিন বহর
সেনা মেজরের বিরুদ্ধে এফআইআর প্রত্যাহারের দাবিতে বিজেপি প্রবল হইচই শুরু করেছে। শরিক দলকে শান্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি সুপ্রিমো মেহবুবা মুফতি সোমবার নিজেই বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘‘হত্যাকাণ্ডের পরেই আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি এবং তিনি খুব ইতিবাচক ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, যদি গাফিলতির কারণে কিছু ঘটে থাকে বা ভুল কিছু ঘটে থাকে তা হলে আমি ব্যবস্থা নিতে পারি। তার পরেই আমরা এফআইআর দায়ের করেছি এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।’’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বয়ান কিন্তু অন্য কথা বলছে। মন্ত্রকের মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বিবৃতি দিয়ে সোমবার জানান, সোপিয়াঁ জেলার গনোভপোরা এলাকায় আচমকাই আক্রান্ত হয়েছিল সেনা কনভয়। কোনও প্ররোচনা ছাড়াই বাহিনীর কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া শুরু হয় বলে তিনি জানান। ১০০-১২০ জন পাথর ছোড়া শুরু করেছিল, দ্রুত সেই সংখ্যা বেড়ে ২০০-২৫০ হয়ে যায় বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, পাথরের ঘায়ে এক জুনিয়র কমিশনড অফিসার জ্ঞান হারান এবং অচৈতন্য হয়ে পড়া ওই অফিসারকে গণপ্রহারের চেষ্টা হয়, তাঁর আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখেই সেনা গুলি চালাতে বাধ্য হয় বলে দাবি করেন কর্নেল কালিয়া।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ সব কথায় কান দিতে রাজি হননি। সেনা আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলবে বলে তিনি জানিয়ে দেন। সেনার তরফেও এ বার অভিযোগ দায়ের করা হল। যারা বাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের খুঁজে বার করার দাবি তোলা হল সেনার তরফে।