লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়়ে কোনও মহাজোট হবে না। তবে কেন্দ্রে বিজেপি এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাজ্যের শাসক দলকে আটকাতে রাজ্যভিত্তিক সমঝোতার কৌশল আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে সিপিএম। এ বার বাংলায় নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নে কংগ্রেসের কোর্টেই বল ঠেলে দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
কলকাতায় গত দু’দিন প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত বৈঠকে জেলার নেতারা জোটের প্রশ্নে মতামত দিয়েছেন। বাংলার কংগ্রেসে প্রায় সর্বসম্মত মত উঠে এসেছে, তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু তৃণমূলকে বাদ রেখে বামেদের সঙ্গে সমঝোতা হবে, নাকি একলা চলা হবে— এই প্রশ্নে এখনও দ্বিমত আছে কংগ্রেসে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন, কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে একা লড়াই ভাল। যদিও প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ বঙ্গ নেতাদের একাংশ মনে করেন, একা লড়ে রাজ্যে বিশেষ কিছু করার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই। তার চেয়ে দু’বছর আগের বিধানসভা ভোটের মতো বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করলে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে কিছুটা লড়াই করা সম্ভব। এই প্রেক্ষিতেই ইয়েচুরির পাল্টা চাপ, কংগ্রেস আগে তাদের পথ ঠিক করুক!
দিল্লিতে এ দিন ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বাংলার কংগ্রেস নেতারা এক দিকে বলছেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট চাই না। আবার কেউ কেউ বলছেন, একা লড়াই করবেন। এখনও ২০১৯ সালের ভোটের আগে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়ানো বাকি! কংগ্রেস কোন দিকে যাবে, এখনও তো কেউ জানে না!’’ সিপিএম তা হলে কী করবে? ইয়েচুরির কৌশলী জবাব, ‘‘আমরা দরজা বন্ধ রাখছি, বলছি না। আবার দরজা খোলা আছে, এমনও বলছি না!’’ বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোটকে যে তাঁরা এক জায়গায় আনতে চান, তা অবশ্য ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
আলিমুদ্দিনের নেতাদের বড় অংশেরই মত, লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার অঙ্ক শুধু কিছু আসনের হিসেবে কষা সম্ভব নয়। কংগ্রেস-বাম একসঙ্গে লড়লে সাম্প্রতিক কালে সংখ্যালঘু ভোটে তৃণমূলের একচ্ছত্র দাপটে চিড় ধরানো যেতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘লড়াইটা হবে বিজেপিকে রোখার। সেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং বিকল্প সরকারের আশ্বাস দিতে গেলে কংগ্রেস, বাম-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যবদ্ধ চেহারা সামনে থাকা প্রয়োজন।’’