কনভয়ের চাপে বড় যন্ত্রণা, মোদীকে লিখবেন সীতা

বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন অনেকে। সংসদে আসার পথে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয় মাঝরাস্তায়। সরকারি অনুষ্ঠান বা নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা থাকে, ‘অনেক আগে চলে আসবেন।’ অন্যথা হলে গাড়ি ছেড়ে পদব্রজেও যেতে হয়। এ সবের মূলে এক মহাগুরুত্বপূর্ণ কনভয়। যাতে সওয়ার হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! সেই কনভয় ঘিরে নিরাপত্তার কড়াকড়িতেই এত জটিলতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:০০
Share:

বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন অনেকে। সংসদে আসার পথে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয় মাঝরাস্তায়। সরকারি অনুষ্ঠান বা নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা থাকে, ‘অনেক আগে চলে আসবেন।’ অন্যথা হলে গাড়ি ছেড়ে পদব্রজেও যেতে হয়।

Advertisement

এ সবের মূলে এক মহাগুরুত্বপূর্ণ কনভয়। যাতে সওয়ার হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! সেই কনভয় ঘিরে নিরাপত্তার কড়াকড়িতেই এত জটিলতা।

রাজ্যসভার সাংসদ তথা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কিন্তু বৃহস্পতিবার সাফ বলে দিয়েছেন, কনভয়-জনিত যন্ত্রণার কথা জানিয়ে তিনি এ বার সটান মোদীকেই চিঠি লিখবেন। ইয়েচুরির বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর কনভয় নিয়ে নিরাপত্তার কড়াকড়ির ধাক্কায় প্রায়শই তিনি ঠিক সময়ে সংসদে পৌঁছতে পারছেন না। সংসদের কাছাকাছি এসেও আটকে যেতে হচ্ছে। কারণ, মোদীর কনভয় যাওয়া না পর্যন্ত অন্য কোনও গাড়িকে যেতে দেওয়া হয় না। দীর্ঘক্ষণ ট্রাফিক আটকে থাকায় মোদীর কনভয় যাওয়ার পরেও যানজট তৈরি হচ্ছে। ফলে দেরি বাড়ছে। প্রথমে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারদের কাছেই নালিশ করেছিলেন ইয়েচুরি। রাস্তায় কর্তব্যরত জওয়ানদের কপট রাগ দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা আমার সংসদীয় কাজে বাধা দিচ্ছেন। এই অপরাধে আপনারা গ্রেফতার হতে পারেন।’ নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারেরা নাকি হাত জোড় করে বলেন, তাঁরা শুধুই নির্দেশ পালন করছেন।

Advertisement

অন্যান্য দলের সাংসদেরা কেউই অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু সকলেরই বক্তব্য, অতীতে আর কোনও প্রধানমন্ত্রীর কনভয় নিয়ে এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। সমাজবাদী পার্টির এক সাংসদ বলেন, ‘‘কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতা দিল্লিতে এলে তাঁর কনভয় ঘিরে নিরাপত্তার বাড়তি ব্যবস্থা দেখা যায়। সে সময় রাস্তায় আটকে থাকতে হয়। কিন্তু দিল্লিতেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কনভয় ঘিরে এত বাড়াবাড়ি আর চোখে পড়েননি। তা-ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে দফতর বা সংসদে যাওয়ার রোজকার রাস্তায়।’’

কনভয়ের নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নিয়ে নেতা-সাংসদদের ক্ষোভ চরমে ওঠে কয়েক দিন আগে। রফি মার্গে কনস্টিটিউশন ক্লাবে নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। ইয়েচুরির মতো অনেক রাজনীতিকই সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। আমন্ত্রণ ছিল প্রধানমন্ত্রীরও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আসার পরেই গোটা রফি মার্গ আটকে দেওয়া হয়।
মোদী বিয়েবাড়ি থেকে না বেরোনো পর্যন্ত আর কোনও গাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। অন্য সব আমন্ত্রিতকে বলা হয়েছিল গাড়ি থেকে নেমে ক্লাব-চত্বরের পিছনের গেট গিয়ে আসতে। একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে যেতে গিয়েও এমন হয়রানির মুখে পড়ে অনেকেই বিরক্ত হন। এক সাংসদ বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে এক রাষ্ট্রনেতার সম্মানে হায়দরাবাদ হাউসে নৈশভোজ ছিল। সেখানেও প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আসবে বলে বহু আগে পৌঁছে যেতে বলা হয়েছিল।’’

কিন্তু কেন এত নিরাপত্তার বাড়বাড়ি? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, আল-কায়দা থেকে শুরু করে লস্কর-ই-তইবার মতো জঙ্গি-সংগঠনগুলির নিশানায় রয়েছেন মোদী। সে কথা মাথায় রেখেই কনভয়ে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক সময় প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার জন্য দু’টি সম্ভাব্য রাস্তা বেছে রাখা হয়। শেষ মুহূর্তে ঠিক হয়, প্রধানমন্ত্রী আসলে কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন। ফলে দু’টি রাস্তাতেই সমস্ত যানবাহন আটকে থাকে। কখনও একটি রাস্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসল কনভয় যায়। অন্যটি দিয়ে যায় নকল কনভয়, যেখানে কোনও গাড়িতেই মোদী নিজে থাকেন না। সে ক্ষেত্রেও দু’টি রাস্তাতেই অন্য সব গাড়ি আটকে থাকে।

ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘আমি নিজেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন