National News

ইসরোর ‘গুপ্তচর’ মামলা: মুক্ত হয়েও ক্ষতিপূরণ অধরা রইল শর্মার

একই অভিযোগে জেল খাটতে হয়েছিল ইসরোর বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণনকে। তাঁকেও নির্যাতিত হয়েছিল জেলে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:২১
Share:

এস কে শর্মা। ছবি- সংগৃহীত।

ইসরোর মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্যাদি পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে যাঁকে জেল খাটতে হয়েছিল প্রায় মাসদু’য়েক, দারুণ ভাবে হতে হয়েছিল নির্যাতিত, গোটা সমাজে যিনি ও যাঁর পরিবার হয়ে পড়েছিলেন ব্রাত্য, সেই এস কে শর্মার মৃত্যু হল ক্যানসারে। সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় টানা ২০ বছর অপেক্ষা করে।

Advertisement

একই অভিযোগে জেল খাটতে হয়েছিল ইসরোর বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণনকে। তাঁকেও নির্যাতিত হয়েছিল জেলে। হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল কেরল পুলিশের হাতে। কিন্তু জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রশাসনের ‘অকারণ হেনস্থা’র জন্য ইসরোর বিজ্ঞানীকে দেওয়া হয়েছিল ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ। নারায়ণন ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় শর্মা ও তাঁর পরিবারের আশা ছিল, ক্ষতিপূরণ পাবেন শর্মাও। কিন্তু বেঙ্গালুরুর লেবার কন্ট্রাক্টরের কপালে তা আর জোটেনি।

গত সেপ্টেম্বরে একটি সাক্ষাৎকারে শর্মা জানিয়েছিলেন তাঁর ৫০ দিনের জেল-জীবনের অভিজ্ঞতা, জেলের বাইরে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সামাজিক হেনস্থার কথা।

Advertisement

আরও পড়ুন- ভারতীয় উপগ্রহের চোখে ধরা পড়ল ‘পাগলাটে’ ব্ল্যাক হোল​

আরও পড়ুন- কলকাতা-সহ সব বড় শহরের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্ররোধী ঢাল তৈরি করছে ভারত​

শর্মা সেই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘ওরা জেলে আমাকে ঘুষি মারত, চড় মারত, লাথি মারত। তার পর শুরু করল বেত দিয়ে মারধর। আধ ঘণ্টা অন্তর মারধরের লোকজন বদলে যেত। এক জন যেত, আসত আরও এক জন। মারতে মারতে ওরা বলত, ‘তুমি ইসরো আর প্রতিরক্ষার গোপন তথ্যাদি পাকিস্তানের কাছে পাচার করেছ। আমি কান্নাকাটি করলেও ওরা আমাকে ছাড়ত না। পেটাত। টানা তিন দিন ওরা আমাকে মেঝেতে বসতে দেয়নি।’’

সেই ‘জেল’-এর আবহাওয়াটা ছিল জেলের বাইরেও। মূল সামাজিক স্রোতে দীর্ঘ দিন ব্রাত্য হয়ে ছিলেন শর্মা ও তাঁর পরিবার।

শর্মা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমার মেয়েদের চরম অপমান করে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ওদের বলা হত, ‘তোমরা দেশদ্রোহী, পাকিস্তানের এজেন্ট।’ এমনকি, শিক্ষকরাও আমার মেয়েদের আঘাত দিয়ে কথা বলতেন।’’

৫০ দিন জেল খেটে বেরিয়ে আসার পর শর্মার পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকাটাই দুরূহ হয়ে উঠেছিল। শর্মা বলেছিলেন, ‘‘আমার কাছের লোকজনও আমাকে এড়িয়ে চলতেন। কোনও ক্লাবে-টাবে দেখা হলে ওঁরা আমাকে দেখলেই বেরিয়ে যেতেন। এই সব দেখে এক দিন আমি ক্লাবে যাওয়াই ছেড়ে দিলাম।’’

মাসদু’য়েক আগে এক স্মৃতিচারণে শর্মা বলেছিলেন, ‘‘তখন আমার ছোট মেয়ের বয়স দু’বছর। আমার স্ত্রী ওকে জেলে নিয়ে এসেছিল আমাকে দেখানোর জন্য। জেলারকে আমার স্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন আমি যাতে জেলের পোশাক ছেড়ে ওই দিন সাধারণ পোশাকে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারি। মেয়েকে চকোলেট খাওয়াতে পারি। মেয়েকে চকোলেট খাওয়াতে গিয়ে সে দিন আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল।’’

শর্মার সেই ছোট মেয়ে মনীষা ২০টা বছর পেরিয়ে এখন অনেকটাই বড় হয়েছেন। বললেন, ‘‘খুব ছোট ছিলাম বলে সেই দিনটার কথা ভুলে গিয়েছি। তবে ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার ক্ষোভে বাবাকে কাঁদতে দেখেছি।’’

স্ত্রী কিরণের কথায়, ‘‘আমাদের পরিবারের একটি সামরিক-ঐতিহ্য রয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ না পাওয়াটা আমাদের খুব আঘাত দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন