এ স্মৃতি সুখের স্মৃতি নয়

স্মৃতি সততই সুখের! এক সময়, নাকতলার বিখ্যাত ‘কবিতা ভবন’-এর আড্ডা এবং বুদ্ধদেব বসুর যাবজ্জীবন সাহচর্যকে এই নামেই ধরে রেখেছিলেন কবিপত্নী এবং সাহিত্যিক প্রতিভা বসু।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ২০:৩৯
Share:

স্মৃতি সততই সুখের!

Advertisement

এক সময়, নাকতলার বিখ্যাত ‘কবিতা ভবন’-এর আড্ডা এবং বুদ্ধদেব বসুর যাবজ্জীবন সাহচর্যকে এই নামেই ধরে রেখেছিলেন কবিপত্নী এবং সাহিত্যিক প্রতিভা বসু।

কিন্তু আজ, দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দ থেকে টুইটার-বিশ্ব— ওই বাক্যটিই যেন সমসাময়িক রিং টোন! মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক থেকে ‘স্মৃতি’র বিদায়ে সুখ যেন উপচে পড়ছে রাজনৈতিক শিবির থেকে শিক্ষাজগতে। তাঁর বস্ত্রমন্ত্রকের ঠাঁই পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও সার্বিক আহ্লাদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জেএনইউ-এর ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার থেকে ঐতিহাসিক রাম গুহ, অথবা বিজেপি-র মহিলা সাংসদ থেকে মানবউন্নয়ন সম্পদের একাংশ— সুখের ছবিটা কিন্তু স্পষ্টই।

Advertisement

২০১৪ সালের নির্বাচনে জিতে আসার পর প্রথম দিন থেকেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে মন্ত্রিত্বের দরবার করে যাচ্ছিলেন দিল্লির এক বিজেপি মহিলা সাংসদ। এখনও পর্যন্ত শিকে ছেঁড়েনি। অথচ তাঁর চোখের সামনেই রাজ্যসভা থেকে আসা স্মৃতি ইরানি পেয়ে গিয়েছেন হাইপ্রোফাইল মন্ত্রিত্বের চেয়ার। প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত সুনজরে থেকেছেন স্মৃতি গোড়া থেকেই। মনোবেদনায় জর্জরিত সেই প্রমীলা সাংসদ একদা এ কথাও অরুণ জেটলিকে বলে বসেছিলেন যে, তাঁকে যখন মন্ত্রী করাই হচ্ছে না তখন তিনি রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন। বাড়ি বসে রূপচর্চা করবেন দিল্লির অনেক অভিজাত গৃহবধূর মতো! সেই তিনিই গতকাল গভীর রাতে ঘনিষ্ঠ মহলে স্মৃতি-বিদায় প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘মন্ত্রী হই বা না হই, এখন আমার আর কোনও দুঃখ নেই! এ বার কাজে মন দেব।’’

আরও পড়ুন: সঙ্ঘের চাপে সরলেন স্মৃতি, গুরুত্ব বাড়ল জাভড়েকরের

বিহারের শিক্ষামন্ত্রী তথা রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অশোক চৌধুরীও গতকাল মধ্যরাতে হর্ষ প্রকাশ করেছেন বলে খবর! জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে স্মৃতিকে টুইট করে জানতে চেয়ে কিছু দিন আগে বিরাট ফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছিলেন অশোক। তাঁর অপরাধ, ‘ডিয়ার’ স্মৃতি ইরানিজী লিখেছিলেন তিনি। তৎক্ষণাৎ রিটুইট করে জানতে চান তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী, ‘‘মহিলাদের কবে থেকে ডিয়ার বলা চালু করলেন অশোকজী?’’ জল গড়ায় অনেকটা। আজ অশোক অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও আহ্লাদ প্রকাশ করেননি। কিন্তু তাঁর হয়ে ব্যাট করেছে সোশ্যাল মিডিয়া। একটি সরস টুইট, ‘‘এই সবের মধ্যে একটাই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হল, তাঁকে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে সরানোর যে সরকারি চিঠিটি পাঠানো হয়েছে, সেখানে সম্বোধনে কী লেখা রয়েছে? ডিয়ার স্মৃতি, নাকি শুধুই স্মৃতি!’’

‘সাস ভি কভি বহু থি’ সিরিয়ালের সেই প্রাণবন্ত বধূ, বাঙালি মায়ের (শিবানি বাগচী) সন্তান, বাংলা-সহ একাধিক ভাষায় পারদর্শী স্মৃতি গোড়া থেকেই রাজনীতিতে ছিলেন স্পট লাইটের নীচে। জীবনের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে (২০০৪) যখন লড়েছিলেন দিল্লির চাঁদনি চক থেকে, তরুণী স্মৃতিকে দেখার জন্য ভিড় জমত পুরনো দিল্লিতে। তাঁর সেই সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী কপিল সিব্বল এক ঘরোয়া আড্ডায় সহাস্যে বলেছিলেন, ‘‘ওঁর কাছে হেরে গিয়েও সুখ!’’ সেই ‘সুখ’ অবশ্য কবি এবং রাজনীতিক সিব্বল পাননি! পরাজিত হয়েছিলেন স্মৃতি।

কিন্তু আজ মন্ত্রক থেকে সরে যাওয়ার পরেও তাঁকে ঘিরে জনতার আমোদ অন্তহীন। ‘টেক্সটাইল ধামাকা’ নামে একটি নতুন কয়েন-ই আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে গত কয়েক ঘণ্টায়। সেই ‘টেক্সটাইল ধামাকা’য় অবিরত পোস্ট হয়ে চলেছে বিভিন্ন ছবি, সরস টিকাটিপ্পনি। কেউ লিখছেন, মন্ত্রী হিসাবে প্রথমেই যে কাজটি করবেন স্মৃতি, তা হল, ‘চোলি কে পিছে ক্যায়া হ্যায়’ গানটি নিষিদ্ধ করা! মোদীর মুখের ছবি দেওয়া শাড়ি এবং ব্লাউজের ছবিও পোস্ট হচ্ছে একের পর এক। এগুলি নাকি আগামী দিনে বস্ত্রমন্ত্রকের সিগনেচার শাড়ি হতে চলেছে!

সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবই চলছে স্মৃতি-কেন্দ্রিক। মন্ত্রিসভার রদবদলের পর কোনও মন্ত্রীকে ঘিরে যা সচরাচর দেখা যায়নি অতীতে। আজ কিশোরকুমারের একটি বিখ্যাত হিন্দি গান উদ্ধৃত করে খোদ নতুন বস্ত্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘লোগোকা কাম হ্যায় কহেনা!’

এহ বাহ্য। বড় মন্ত্রক চলে যাওয়ায় স্মৃতি ইরানির নিজস্ব বিষণ্ণতা নিশ্চয়ই রয়েছে।

তবে এটা ঠিক, ‘স্মৃতি তুমি বেদনা’— একদা জনপ্রিয় এই গানটি অন্তত প্রকাশ্যে কেউ গাইছেন না তাঁকে ঘিরে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন