মন্ত্রীর মুখোমুখি। শিলচর সরকারি বালক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। শুক্রবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
বাংলায় কথা বলে বরাক মাতালেন স্মৃতি ইরানি।
বিমানবন্দর থেকে সার্কিট হাউস। সরকারি স্কুল থেকে জেলা গ্রন্থাগার— সব জায়গাতেই বাংলায় আলাপচারিতায় সবার মন জিতলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী।
শহরও তাই আজ আচ্ছন্ন ছিল স্মৃতিতেই। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ শিলচর বিমানবন্দরে নামে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীর বিমান। সেখান থেকে সার্কিট হাউস। গাড়ি থেকে নেমেই বিজেপি নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থকে দেখে স্পষ্ট বাংলায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কবীন্দ্রদা কেমন আছো।’’ আশপাশের লোকজন তখন অবাক! স্মৃতির মুখে এমন সুন্দর বাংলা শুনবেন স্বপ্নেও ভাবেননি। পরে তিনি কথা বলেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সহকারী বা দলীয় কর্মীকে দিয়ে নয়, প্রতিটি প্রয়োজনীয় কথা স্মৃতি লিখেছেন নিজের হাতেই। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তাই অনেকেই স্মৃতির স্মৃতিতে বিভোর। কেউ বললেন— ‘‘কী সুন্দর কথা বলেন উনি।’’ এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘স্মৃতিজির সঙ্গে তোলা ফোটোটা বাঁধিয়ে রাখব।’’
বিবেকানন্দ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় এবং শিলচর সরকারি বালক বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের পর জেলা গ্রন্থাগার প্রেক্ষাগৃহে নাগরিক সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। নেত্রী সেখানে পৌঁছনোর আধঘণ্টা আগেই তা ভর্তি। এক সময় ব্যালকনির দরজাও খুলে দিতে হয়। এর আগে কবে যে জেলা গ্রন্থাগারের ব্যালকনি ব্যবহার করা হয়েছিল, তা কেউ মনে করতে পারলেন না। এর পরও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। হিন্দি বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে মাইক্রোফোনের সামনে চলে বাংলায় আলাপচারিতাও। স্মৃতি বললেন, ‘‘কংগ্রেস হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির পরও বলত, দেশের তো কোনও ক্ষতি হয়নি। মোদীজি তা ভাবেন না। গত এক বছরে ২জি কেলেঙ্কারির ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি তহবিলে জমা পড়েছে। ২৭টি খনির জন্য মিলেছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা।’’
আধ ঘণ্টার বক্তৃতায় কত কথাই না বললেন স্মৃতি ইরানি। তিনি বললেন— ‘গরিবি দেখতে ঘুরছেন রাহুল গাঁধী। মোদীজির সে সবের প্রয়োজন হয় না। কারণ দারিদ্র্যের জ্বালা তিনি নিজে টের পেয়েছেন।’ জনতাকে জানালেন— ‘প্রধানমন্ত্রীজি জানেন, ক্ষুধার্ত শিশুরা কেমন করে কাঁদে। তাতে কতটা কষ্ট হয় মায়েদের।’ প্রধানমন্ত্রী জীবন সুরক্ষা বিমা যোজনার কথা উল্লেখ করে স্মৃতি বলেন, ‘‘গরিব মানুষ দেখলে আগে ব্যাঙ্ক দরজা বন্ধ করে দিত। মোদী সরকার ব্যাঙ্কগুলিকে তাঁদের ঘরে পাঠাচ্ছেন। গরিব মানুষের জন্য বিমা করতে বলছেন।’’
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের দিকেও তোপ দাগেন। স্মৃতির বক্তব্য, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে গগৈ অভিযোগ তুলছেন। তার জেরে শিক্ষকদের বেতন নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্ত কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী তা মানতে চাননি। তিনি দাবি করেন, ২০১৪-১৫ সালের তুলনায় এ বার অসমের জন্য বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৪১.৬ শতাংশ। গত বছর বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সর্বশিক্ষা অভিযানের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা দফতরের হিসেবও জানান। তাঁর কথায়, ‘‘গগৈ আগের মতো নিজের ইচ্ছায় কাজ করতে পারেন না। প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার পরই বরাদ্দ টাকা তিনি হাতে পান।’’ শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল, বিজেপির কাছাড় জেলা সভাপতি কৌশিক রায়ও নাগরিক সভায় বক্তৃতা করেন।