২৪ ফেব্রুয়ারি: তিনি হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে শাস্তি দেওয়ার তাগাদা দিতে উপাচার্যকে আড়াই মাসে পাঁচবার চিঠি লেখেন।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনাহারে মৃত্যুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে তিনি বলেন, ভারতমাতায় অপমান তিনি সহ্য করবেন না।
দেশপ্রেমের ধ্বজা ওড়াতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০৭ ফুট উঁচু দণ্ডে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর নিদান দেন।
দল ও সরকারে তাঁর সতীর্থরা বলেন, স্মৃতি ইরানি শুধু অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ নন। তিনি উদ্ধতও।
হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে আজ রাজ্যসভায় স্মৃতি ইরানি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন, ‘‘যদি আমার জবাবে আপনারা সন্তুষ্ট না হন, তা হলে আমি আমার মাথা কেটে আপনার চরণে রেখে দেব।’’ (অগর মেরে উত্তরসে আপ সন্তুষ্ট না হো তো ম্যায় আপনা সর কলম করকে আপকে চরণো মে ছোড় দুঙ্গি)।
দাঁতে দাঁত চেপে, ছাতি ঠুকে, উদ্ধত স্বরে স্মৃতি ইরানি এ কথা বলেছেন ঠিকই। কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর এ হেন জবাবে রাজ্যসভা জুড়ে হাসির রোল উঠেছে। এমনকী বিজেপির সাংসদরাও স্মৃতির মন্তব্যে হাসি চেপে রাখতে পারেননি।
আজ রাজ্যসভায় হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জেএনইউ-র ঘটনা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী দাবি তোলেন, হায়দরাবাদে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে একজন দলিতকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে হায়দারাবাদের ঘটনা নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা করতে হবে। বসপা সাংসদরা স্লোগান তোলেন, স্মৃতি ইরানিকে ইস্তফা দিতে হবে। কারণ তাঁর চিঠির চাপেই রোহিতের শাস্তি হয়। তারপরই ওই দলিত ছাত্র আত্মহত্যা করেন। এতেই চটে ওঠেন স্মৃতি। প্রথমে বসপা-সাংসদ সতীশ মিশ্রকে চ্যালেঞ্জ করেন, ‘আপনি মুখোমুখি কথা বলুন’। তারপরই মায়াবতীকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন।
স্বাভাবিক নিয়মেই স্মৃতির এই চ্যালেঞ্জে লাভের লাভ কিছু হয়নি। সারাদিনের জন্যই রাজ্যসভা অচল হয়ে থেকেছে। মায়াবতী তো বটেই, গুলাব নবি আজাদ থেকে সীতারাম ইয়েচুরি প্রশ্ন তুলেছেন, তদন্ত কমিটিতে একজন দলিতকে রাখার প্রতিশ্রুতি দিতে অসুবিধা কোথায়? স্মৃতি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, কোনও বিচারকের কর্মদক্ষতা কি জাতপাত দিয়ে বিচার হবে? মায়াবতী মন্তব্য করেছেন, ‘‘এখানে প্রধানমন্ত্রী থাকলে হয়তো এই দাবি মেনে নিতেন। কিন্তু তাঁর চ্যালাচামুণ্ডাদের মানসিকতাই ঠিক নয়।’’
রাজ্যসভার মতো লোকসভাতেও হায়দরাবাদ-জেএনইউ নিয়ে বিতর্কের জবাবে সেই একই উদ্ধত ভঙ্গিতে দেখা গিয়েছে স্মৃতি ইরানিকে। নাটকীয় ভঙ্গিতে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ক্ষমা চাইব না। নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।’’ কখনও তাঁর মন্তব্যে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মন্তব্য করেছেন, ‘‘সঙ্ঘ পরিবার নাকি সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে। আমার অতীব সংখ্যালঘু পরিবারে (পার্সি) বিয়ে হয়েছে। আমাকে কেন নিজের কথা বলতে বাধা দেওয়া হবে!’’
কংগ্রেসের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, স্মৃতি কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়র চিঠি পেয়ে পাঁচ বার রোহিত ভেমুলার শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর চাপ দিয়েছিলেন? তার জবাবেও ব্যক্তিগত আক্রমণে গিয়ে স্মৃতি কংগ্রেসের রঞ্জনা যাদবকে বলেছেন, ‘আপনার সুপারিশ করা চিঠি পেয়ে ছেলেমেয়েদের কোটার বাইরে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।’ কখনও আবার যুক্তি দিয়েছেন, সৌগত রায়, প্রদীপ ভট্টাচার্যরাও তাঁকে বিশ্বভারতীর উপাচার্যর বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কখনও বলেছেন, তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ৬৫ হাজার সাধারণ মানুষের চিঠি পেয়েছেন। ৬১ হাজার চিঠির সমস্যার সমাধান করেছেন। উত্তেজিত স্মৃতিকে শান্ত হয়ে, এ সব বিষয়ে না ঢোকার জন্য স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে অনুরোধ করতে হয়েছে।
বিজেপি-র নেতারা বলছেন, স্মৃতি ইরানির কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যাচ্ছে যে তিনি কতখানি চাপের মধ্যে রয়েছেন। এক দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। অন্য দিকে তাঁকে মন্ত্রিপদ থেকে সরানোর গুঞ্জন। আজ স্মৃতি নিজের গদি বাঁচানোরই আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিতে তিনি এখন নিজের মাথা কেটে ফেলতেও রাজি।