COVID-19

একচুল দূরত্বও নেই, করোনাবিধি শিকেয় তুলে রেমডেসিভির কিনলেন চেন্নাইবাসী

চেন্নাই স্টেডিয়ামের বাইরে এমন গা ঘেঁষাঘেঁষি ভিড় দেখে আঁতকে উঠেছে দেশবাসী। করোনা আবহে প্রশ্ন উঠেছে তামিলনাড়ু প্রশাসনের দায়িত্ববোধ নিয়েও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ১৩:১২
Share:

চেন্নাই স্টেডিয়ামের বাইরে রেমডেসিভির কেনার ভিড়। শনিবার। পিটিআই।

করোনা প্রতিরোধের ওষুধ রেমডেসিভির কিনতে চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভিড় করলেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে একে অপরের গা ঘেঁষে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন ওষুধ হাতে পাওয়ার অপেক্ষায়। এই আশায় যে, ওষুধ পেলে প্রিয়জনকে বাঁচাতে পারবেন।

এঁদের মধ্যে অনেকেই গত ১০-১৫ দিন ধরে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন রেমডেসিভিরের একটি ইঞ্জেকশনের জন্য। লাইনে দাঁড়িয়েছিসলেন ৩০ বছরের যুবক সন্দীপ রাজ। শনিবার সকালে সন্দীপের বাবা মারা গিয়েছেন। তাঁর দেহ বাড়িতেই রেখে মায়ের জন্য ওষুধ নিতে এসেছেন তিনি। সন্দীপ জানালেন, বাবা-মা দু’জনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ দিন আগে। দু’জনকেই রেমডেসিভির নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু গত ১০ দিনে সব রকম চেষ্টা করেও একটিও ইঞ্জেকশন জোগাড় করে উঠতে পারেননি সন্দীপ। ওষুধ না পেয়েই বাবা মারা গিয়েছেন। আপাতত মাকে বাঁচানোই সন্দীপের একমাত্র লক্ষ্য। অসাবধানতায় তিনি নিজে সংক্রমিত হতে পারেন, বা তাঁর থেকে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন সেই হুঁশ আপাতত নেই তাঁর। তবে চিন্তা একটাই। শেষ পর্যন্ত ওষুধ নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেন কি না। সন্দীপ বলছেন, ‘‘ওষুধ পাওয়ার বৈধ টোকেন আছে। দরকারি নথিও রয়েছে। তবু ওষুধ পাব কি না জানি না। প্রচুর ভিড় হয়েছে। এঁদের মধ্যে কাদের টোকেন আছে আর কাদের নেই, তা বোঝা মুশকিল।’’

Advertisement

করোনা ভাইরাসের দ্রুত সংক্রামক প্রজাতি যেখানে এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, তখন চেন্নাই স্টেডিয়ামের বাইরে এমন গা ঘেঁষাঘেঁষি ভিড় দেখে আঁতকে উঠেছে দেশবাসী। প্রশ্ন উঠেছে তামিলনাড়ু প্রশাসনের দায়িত্ববোধ নিয়েও।

করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে শনিবার থেকেই তা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে শুরু করেছে তামিলনাড়ু সরকার। চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে প্রতিদিন ৩০০ জনকে এই ওষুধ বিক্রি করা হবে বলেও ঘোষণা করা হয় সরকারের তরফে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মাস্ক পরে, দূরত্ববিধি বজায় রেখেই এই ওষুধ কিনতে হবে। কিন্তু সরকারের সেই পরামর্শ কার্যক্ষেত্রে মানা হয়নি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাঁদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন লাইনে অপেক্ষারতদের একাংশ।

Advertisement

সন্দীপের মতোই রাত ১টা থেকে টোকেন নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মুতামিজ আজগাঁ। তাঁর বাবা-মা-ভাই তিনজনেই করোনা আক্রান্ত। বাঁচাতে হলে রেমডেসিভির দরকার। কিন্তু যে ভাবে মানুষ ভিড় করেছেন, তাতে বৈধ টোকেন থাকলেও ওষুধ পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করছেন মুতামিজ। তামিলনাড়ুর নব নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্তালিনকে তাঁর পরামর্শ, ‘‘আপনার কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। দয়া করে অবিলম্বে এই ওষুধ সরবরাহের একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া তৈরি করুন।’’

উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে তামিলনাড়ু প্রতিদিন ৭ হাজার রেমডেসিভিরের জোগান পাচ্ছে। তবে স্তালিন সরকার জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন ২০ হাজার ইঞ্জেকশনের জোগান প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন