জেএনইউ-অস্ত্র হাতে আসরে সনিয়া

জেএনইউ বিতর্কে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে আসরে নেমে পড়লেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী। কাল থেকে শুরু সংসদের বাজেট অধিবেশন। কংগ্রেসের লক্ষ্য, এ বারেও রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি সরকারকে কী ভাবে প্যাঁচে ফেলা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৮
Share:

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল ও সনিয়া গাঁধী। ছবি: পিটিআই

জেএনইউ বিতর্কে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে আসরে নেমে পড়লেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী।

Advertisement

কাল থেকে শুরু সংসদের বাজেট অধিবেশন। কংগ্রেসের লক্ষ্য, এ বারেও রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি সরকারকে কী ভাবে প্যাঁচে ফেলা যায়। তাই আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে আলোচনা করেন সনিয়া গাঁধী। ঠিক হয়, জেএনইউ-এর ঘটনা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে।

জেএনইউ বিতর্কে শাসক দল ও সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে কয়েক দিন আগেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। বলেছিলেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর জোর করে ‘মৃত মতাদর্শ’ চাপিয়ে দিতে চাইছে আরএসএস। কিন্তু কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এখন বুঝতে পারছেন, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বার্তা সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছয়নি। উল্টে কংগ্রেসের অবস্থানের অপব্যাখ্যা করে পাল্টা প্রচারে বিজেপি অনেকটাই সফল।

Advertisement

এ বার তাই মাঠে নামতে হল খোদ সনিয়াকে। তিনি আজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রে শাসক দলের বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছে! দেখে মনে হচ্ছে, দেশে মুক্ত চিন্তা, বিতর্ক-বিবেচনার সংস্কৃতি বন্ধ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার।’’ এখানেই না থেমে কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, ‘‘প্রথমে সংসদে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। তার পর সমাজের বিশিষ্ট জনদের চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ওপর নজর পড়েছে সরকারের।’’ সনিয়ার মন্তব্য, ‘‘কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা বরাবরই স্বাধীন ভাবে মত ও পথের কথা প্রকাশ করে। তাও বন্ধ করে দিতে চায় শাসক দল!’’

কংগ্রেস সভানেত্রীর কথায় স্পষ্ট, জেএনইউ-এর ঘটনা নিয়ে দলের নিচুতলায় ও মানুষের কাছে বার্তা দিতে কতটা তেড়েফুঁড়ে নামতে চাইছেন তিনি। কিন্তু কেন? রাহুল কি তা হলে পারছেন না? জবাবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য বলেন, জেএনইউ বিতর্ক আর পাঁচটা বিষয়ের মতো সোজাসাপ্টা নয়। জাতীয়তাবাদের নামে মানুষকে ভুল বোঝানোর বিস্তর সুযোগ রয়েছে বিজেপির সামনে। বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবার মানুষের কাছে এটাই তুলে ধরছে যে, আফজল গুরুর সমর্থনে যারা স্লোগান তুলেছিল তাদের সমর্থন করছেন বাম-কংগ্রেস নেতারা। রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে ওঁরা মদত দিচ্ছেন।

ব্যাপারটা যে মোটেই তা নয়, সেটা এখন মানুষকে বোঝানো কংগ্রেস কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। বোঝাতে হবে যে, কংগ্রেস কোনও ভাবেই রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগানকে সমর্থন করছে না। কংগ্রেসের দাবি, বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে বছরের পর বছর ধরে পড়ুয়ারা তাঁদের মুক্ত চিন্তা প্রকাশ করেছে, সেখানে কথায় কথায় তাঁদের রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করা গণতন্ত্রের পক্ষে অশুভ লক্ষণ। ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিজেপি এবং আরএসএস এখন ছাত্রদেরও মগজধোলাই করে সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে। কংগ্রেসের ওই শীর্ষ নেতার কথায়, সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক ওজন রাহুলের থেকে বেশি। তা ছাড়া দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষ থেকে শুরু করে কংগ্রেসের নিচুতলার নেতারাও জানেন, কোনও বিষয়ে ওয়ার্কিং কমিটিতে প্রস্তাব নেওয়া মানে তার গুরুত্ব কতটা। তাই আজ ওই বৈঠক ডেকে দেশকেও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন সনিয়া।

কংগ্রেস নেতাদের মতে, বিজেপি জাতীয়তাবাদের নকল বিতর্ক তৈরি করে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। সনিয়া যদি দলের অবস্থান মানুষকে ঠিক মতো বোঝাতে পারেন, তা হলে শাসক দলকে প্যাঁচে ফেলা যাবে। কারণ, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কখনওই বিজেপির সঙ্গে ছিল না। আর এখন জেএনইউ-কে নিয়ে বিজেপির রাজনীতির ফলে হিন্দুদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে। উগ্র হিন্দুত্বের জন্য যাঁরা বিজেপি অনুরাগী তাঁরা এর পরেও মোদীর সঙ্গে থাকবেন। কিন্তু যাঁরা উদারপন্থী হিন্দু, যাঁরা মনে করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, বিনিয়োগ আসবে, শিল্প হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তাঁদের মোহভঙ্গ হচ্ছে। এই সব মানুষকে কাছে টানতে হবে কংগ্রেসকে। বোঝাতে হবে কী ভাবে অর্থনৈতিক ব্যর্থতা মেরুকরণের রাজনীতি দিয়ে ঢাকতে চাইছেন মোদী।

এই কথাটাই আজ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বলেছেন সনিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের লম্বা-চওড়া বক্তৃতা সত্ত্বেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না। কৃষক ও গ্রামীণ মজুররা ঘোর সঙ্কটে। অত্যাবশকীয় পণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। সেই সব ব্যর্থতা ঢাকার জন্য জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন