চিন-ঘেঁষা ওলিই ফের চিন্তা দিল্লির

সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের সঙ্গে ওলির তিক্তটা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, তাঁর নেতৃত্বে নেপালের নতুন বাম সরকার বিদেশনীতির প্রশ্নে ভরপুর চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে চলেছে সাউথ ব্লকের সামনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪০
Share:

খড়্গপ্রসাদ ওলি। —ফাইল চিত্র।

কয়েক বছর আগেও সম্পর্কটা মধুরই ছিল। এতটাই যে খড়্গপ্রসাদ ওলির কিডনি সংক্রান্ত সমস্ত চিকিৎসাই ভারতে হতো। নয়াদল্লির তত্ত্বাবধানে।

Advertisement

কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের সঙ্গে ওলির তিক্তটা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, তাঁর নেতৃত্বে নেপালের নতুন বাম সরকার বিদেশনীতির প্রশ্নে ভরপুর চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে চলেছে সাউথ ব্লকের সামনে।

চিন-ওলি ঘনিষ্ঠতার প্রশ্নটি নতুন নয় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে। কূটনীতির জগতের অনেক মনে করেন, নেপালে মাওবাদী এবং কমিউনিস্টদের একসঙ্গে নিয়ে এসে সরকার গড়ার যে নকশা, তার পিছনে বেজিংয়ের প্রয়াস রয়েছে যথেষ্ট। সিপিএন-ইউএমএল নেতা ওলি নেপালে সরকার চালিয়েছেন ২০১৫-র অক্টোবর থেকে ২০১৬-র অগস্ট পর্যন্ত। ভারত-নেপাল সম্পর্কের খুবই অবনতি হয় সে সময়ে। ফের তাঁর হাতেই যাচ্ছে নেপালের ভার। ভোটের ফল স্পষ্ট হতেই সরকার গড়া নিয়ে আজ মাওবাদী নেতা প্রচণ্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ওলি। প্রচণ্ড আগেই জানিয়েছেন ওলি-র নেতৃত্বেই হবে নয়া সরকার। ওলির এই দফাতেও ভারতের সীমান্ত রাষ্ট্রটিতে চিনের প্রভাব আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতেও বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর কিন্তু ভারতের ধরাবাঁধা অবস্থানকেই ফের তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, প্রথমত, প্রতিবেশী রাষ্ট্রে যে সরকারই আসুক না কেন, তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক ভাবেই গড়াবে। দুই, কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনও তৃতীয় রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল নয়। এরই পাশাপাশি আরও একটি যুক্তিও খাড়া করছে সাউথ ব্লক। সেটা হল, নেপালের সঙ্গে ভারতের যে আবহমান ধর্মীয় সাংস্কৃতিক যোগসূত্র রয়েছে, কখনওই তা অর্থ দিয়ে কিনতে পারবে না চিন। ভারতকে পরোপুরি বাদ দিয়ে কিছু করা সম্ভবও নয় নেপালের পক্ষে।

কিন্তু কঠোর বাস্তবের জমিতে এই যুক্তিগুলি যে তেমন জুতসই হচ্ছে না, সে কথা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছেন বিদেশ মন্ত্রকের একটি বড় অংশ। ডোকলাম প্রশ্নে দীর্ঘ সংঘাত আপাত ভাবে মিটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে ড্রাগন। এই অবস্থায় নেপালে তাদের আধিপত্য-বৃদ্ধি আদৌ কাঙ্ক্ষিত নয়।
নয়াদিল্লি ভোলেনি যে গত বছর প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে এই ওলি-ই চিন সফরে গিয়ে একটি চুক্তি সই করে দু’দেশের মধ্যে রেল আর বন্দর যোগাযোগ-সহ সামগ্রিক ভাবে বাণিজ্যিক ঘনিষ্ঠতাকে এক ধাপে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন। মদেশীয় বিক্ষোভের সময়ে ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অবরোধের কারণে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, সেই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চিনের প্রতি নির্ভরতা অনেকটাই বাড়িয়ে নেয় তৎকালীন ওলি সরকার। পাশাপাশি, ওই সময়ে উগ্র ভারত-বিরোধিতার রাজনৈতিক আবহ তৈরি করা হয় নেপালে। যা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement