UGC

UGC: ‘গেরুয়া রঙে’ ইতিহাস বই ইউজিসি-র!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১ ০৬:১৬
Share:

ফাইল চিত্র।

বাবরকে বলা হয়েছে ‘ইনভেডর’ বা হানাদার। আকবরের উল্লেখই নেই! মধ্যযুগের ইতিহাসকে প্রায় অগ্রাহ্য করে স্নাতক স্তরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি ইতিহাসের পাঠ্যক্রম প্রকাশ করেছে। অভিযোগ, ইউজিসি-কৃত স্নাতক স্তরের ৯৯ পাতার এই পাঠ্যক্রমের ছত্রে ছত্রে গেরুয়াকরণের ছাপ! ‘রেফারেন্স’ বইয়ের তালিকায় ইরফান হাবিব, রামশরণ শর্মা বাদ। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেদ, পুরাণ, উপনিষদকে।

Advertisement

ভারতের প্রাচীনতম ইতিহাস রাখা হয়েছে ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, এই পত্রের মাধ্যমে ভারত সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার কথা। কিন্তু ‘আইডিয়া অব ভারত’ নামে একেবারে আলাদা একটি পত্রও রাখা হয়েছে। তাতে গুরুত্ব পেয়েছে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ। গোটা পাঠ্যক্রমে পুরাণকে অত্যধিক জোর দেওয়া হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

‘দ্য গ্লোরি অব ইন্ডিয়ান লিটারেচার’ অংশে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কালিদাস, চরক সংহিতা বাদ গিয়েছে বলে অভিযোগ। ‘রেফারেন্স’ বইয়ের তালিকায় হিন্দি ভাষার প্রচুর বই রাখা হয়েছে। এই বইগুলো কাদের অনুমোদিত, উঠেছে সেই প্রশ্নও। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নামে বিভিন্ন হিন্দু তীর্থক্ষেত্র, হিন্দুদের ধর্মীয় মেলা, হিন্দুদের আচার-ব্যবহার, হিন্দুদের বিভিন্ন স্থাপত্যকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। নীতিশিক্ষার নামে রামায়ণ, মহাভারতের সঙ্গে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে পঞ্চতন্ত্র, জাতকের গল্পকে। ভজন, হরিকথা, বৈদিক মন্ত্র পড়ানো হবে বলেও ঠিক হয়েছে। এখানেও মধ্যযুগ সম্পূর্ণ উপেক্ষিত বলে অভিযোগ।

Advertisement

পড়ানো হবে নারদ, কৃষ্ণ। প্রশ্ন উঠছে, এঁরা কি ঐতিহাসিক চরিত্র? পড়াতে বলা হয়েছে ন্যায়শাস্ত্র, পঞ্চতন্ত্র, রামচরিত মানস। এখানেও প্রশ্ন, মধ্যযুগে সাহিত্য কি রচিত হয়নি? ‘ভিজ়ুয়াল আর্ট অ্যান্ড লিটারেচার’-এও মধ্যযুগ সম্পূর্ণ গরহাজির।

‘সরস্বতী সভ্যতা’ শব্দবন্ধ একাধিক বার ব্যবহার করা হয়েছে ওই পাঠ্যক্রমে, যা আগে কখনওই করা হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, সঙ্ঘ পরিবার ‘সরস্বতী সভ্যতা’ নামটি চাইছে বলেই কি এই পরিবর্তন? রাণা প্রতাপ, হিমু, রানি দুর্গাবতীর উল্লেখ পাঠ্যক্রমে থাকলেও আকবরের কোনও উল্লেখ নেই! একমাত্র আওরঙ্গজেবের উল্লেখ রয়েছে, তা-ও সেটা শিবাজির সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রে। ওই পাঠ্যক্রমে মরাঠা ইতিহাস অতি গুরুত্ব পেয়েছে বলে শিক্ষাবিদদের পর্যবেক্ষণ।

ইউজিসি-র এই নতুন পাঠ্যক্রম ইতিহাস শিক্ষাকে পুরোপুরি গেরুয়া আঙ্গিকে বিকৃত করার পরিকল্পনা, এমনই মত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষিকা সুচেতনা চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর অভিযোগ, বর্ণ ব্যবস্থা, মধ্যযুগীয় ইতিহাসের বৈচিত্রময় বহুত্ব, ঔপনিবেশিক যুগের মুক্ত বাণিজ্য নীতি ও তার প্রভাব, সতীদাহ রদ, বাংলায় ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ— ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভারতের ইতিহাসের এই দিকগুলি কোনও ভাবেই জানতে না-পারেন, সেই ভাবেই সাজানো হয়েছে এই পাঠ্যক্রম।

‘অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি’র সম্পাদক তরুণ নস্করের মতে, ইতিহাসের এই পাঠ্যক্রম তৈরি করার উদ্দেশ্যই হল, ইতিহাসের নামে অনৈতিহাসিক ও পৌরাণিক চরিত্রের চর্চা করা। তিনি বলেন, ‘‘কনসেপ্ট অব ভারতবর্ষ’-এর নামে বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ, পুরাণের চর্চা করাতে চাইছে। বাবরকে বলা হচ্ছে ইনভেডর, কিন্তু ইংরেজদের তা বলা হয়নি।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক কিংশুক চট্টোপাধ্যায় জানান, এই পাঠ্যক্রমে ইউরোপ, আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এশিয়ার আধুনিক ইতিহাস বই পড়ানোর কথা বলা হলেও ভারতীয় ইতিহাসের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে অনেক পুরনো বইয়ের উপরে। বইগুলি সমমানের নয়। সেই সঙ্গে হিন্দি বইয়ের উপরে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন