তেজস্বী যাদব। —ফাইল চিত্র।
তুঙ্গে পৌঁছনো বিহার নির্বাচনের প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করে আরজেডি প্রধান তেজস্বী যাদব প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারের ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ নিয়ে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানে নীতীশকে দেখা গিয়েছে জোড়হাত করে চুপ করে বসে থাকতে। আর তাঁর বক্তব্য পড়ে শোনাচ্ছেন বিজেপি নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরি। তেজস্বীর কথায়, ‘‘এটা স্পষ্ট, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর আর রাজ্য প্রশাসন চালানোর ক্ষমতা নেই। তাঁকে সামনে রেখে কলকাঠি নাড়ছে একটি সিন্ডিকেট। খুব শীঘ্রই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’
তেজস্বী সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্টে বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যের এই হালের কারণ তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচরেরা। যাঁরা হয়তো তাঁর খাবারে ওষুধ মেশাচ্ছেন। হয়তো জোট শরিক বিজেপিই রয়েছে এর পিছনে।’’ সাংবাদিকদেরও তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী এমন আচরণ করছেন, যাতে বোঝা যাচ্ছে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক নেই। আমার মা রাবড়ি দেবী সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করেছেন তিনি। এক বার তো তাঁকে ক্যামেরার সামনে অদ্ভুত আচরণ করতে দেখা গিয়েছে, যখন পিছনে জাতীয় সঙ্গীত বাজছে।’’
তবে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, নীতীশের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতই প্রশ্ন তুলুন প্রতিপক্ষ, এখনও তিনিই বিহারে শাসক জোটের মুখ। বিপক্ষের মহাগঠবন্ধন বা ‘ইন্ডিয়া’ শিবির যেমন তাঁকে নিশানা করছে, তেমনই নীতীশ তথা বিহার নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিজেপিকেও চিন্তার মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। এক পর্যবেক্ষকের মতে, বিষয়টি রাজনৈতিক ধাঁধার মতো।
জেডিইউ বেশি আসন পেয়ে সরকার গড়লে বিহারে বিজেপির লাভ, কিন্তু জাতীয় জোটের প্রশ্নে ক্ষতি বেশি। আবার নীতীশ মুছে গেলে বিহারে হয়তো ফায়দা তুলতে পারবে না বিজেপি। কিন্তু দিল্লির রাজনীতিতে এনডিএ জোটের শরিক জেডিইউ-কে তখন তারা আত্মসাৎ করে নিতেসক্ষম হবে।
নীতীশের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার অভিযোগ আজ থেকে নয়। গত কয়েক বছর ধরেই সেটা সামনে এসেছে। কিন্তু বিহারের ন’বারের মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখেই বিজেপি এ বারও বিহার নির্বাচনে লড়তে বাধ্য হচ্ছে। কারণ নীতীশকে চটালে ‘হাওয়া মোরগ’ হিসাবে খ্যাত এই প্রবীণ নেতা যে দিল্লিতে এনডিএ-র নৌকাকে টলোমলো করে ইন্ডিয়া-র দিকে ঝাঁপ মারবেন না, তার নিশ্চয়তা নেই। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের কুর্সি থেকে বঞ্চিত করলে নীতীশ আরজেডি-র সঙ্গে জোট করতে পারেন। অতীতে এমন ইতিহাস বার বার রচনা করেছেন তিনি। অন্য দিকে জেডিইউ প্রবল ভাবে চায়, তাদের নেতৃত্বেই সরকার চলুক বিহারে। একটি হলেও বিজেপির থেকে বেশি আসনে তারা লড়তে চায়। ভোটের পর ক’টা আসন নীতীশ এবং তাঁর দল পায়, সে দিকে তাই বিজেপিওতাকিয়ে রয়েছে।
অন্য দিকে এখনও নীতীশের অটুট ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে বিহারের যে সব নির্বাচনী ক্ষেত্রে, সেখানেও কোনও ভুল বার্তা যাতে না যায়, তার জন্য সতর্ক থাকতে হচ্ছে বিজেপিকে। যাদব ভোট ছাড়াও ওবিসি শ্রেণি, মহাদলিত, পসমন্দা মুসলিম এবং বিশেষত বিহারের নারীশক্তি গত দু’দশক ধরে নীতীশকে ক্ষমতায় ধরে রেখেছে। এ বারেও তিনি একের পর এক জনমোহিনী যোজনা আনছেন ভোটের আগে। সব মিলিয়ে নীতীশের নেতৃত্বে এবং জেডিইউ-এর ভাগে অধিক সংখ্যক আসন নিয়ে বিহারে জয় এলে, তা বিজেপির জাতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একটু সমস্যার বলেই মনে করছে রাজনতিক মহল। এনডিএ-র শরিক হিসাবে দিল্লিতে বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষমতা সে ক্ষেত্রে বাড়বে নীতীশের। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এটা মাথায় রেখে চলতে হচ্ছে যে, এ বারে তাঁদের কেন্দ্রীয় সরকার জেডিইউ (১২টি আসন) এবং টিডিপি (১৬টি আসন)-র উপরে নির্ভরশীল।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এনডিএ যদি বিহারে পরাস্ত হয়, তা হলে তা জোট রাজনীতির প্রশ্নে দিল্লিতে বিজেপির হাত শক্তই করবে। কারণ নীতীশ সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন হয়ে পড়বেন, জেডিইউ-এর একটি বড় অংশকে ভাঙিয়ে নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে পারবে নরেন্দ্র মোদীর দল। সূত্রের খবর, সেই চেষ্টা এমনিতেই শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।
আরও একটি বিষয় হিসাবের মধ্যে রাখছে বিহারের রাজনৈতিক শিবির। বিধানসভায় এনডিএ হারলে ভোটার তালিকার নিবিড় পর্যালোচনা বা এসআইআর নিয়ে বিরোধীদের বিতর্ক থেকে হাওয়া বেরিয়ে যাবে। রাহুল গান্ধী ভোট চুরিকেই তাঁর প্রধান নির্বাচনী বিষয় করেছেন। তৃণমূলও একই ভাবে এই নিয়ে সরব। বিহারে হার হলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পরবর্তী ভোটমুখী রাজ্যগুলিতেও বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে