রহস্যগল্পের একটি চরিত্রকে মাকড়সার রস খাইয়েছিলেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের কুলীন ট্রেনে মধ্যাহ্নভোজের মেনুতে মিলল নয়া পদ দই-মাকড়সা!
ইঁদুর-আরশোলার নাচন ট্রেনযাত্রীদের নিত্য বিনোদন জোগায়। ধুলো ওড়া নোংরা কম্বল আর ছোপ ধরা চাদরে রেলঘুম ছুটে যায় রাজধানী-দুরন্তের মতো নামী ট্রেনেও। তবে ট্রেনে খাবারের সঙ্গে দেওয়া দইয়ে আস্ত মাকড়সা এর আগে পাওয়া গিয়েছে কি না, প্রবীণ যাত্রীরাও মনে করতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্প রেলে এসে কতটা অস্বচ্ছ হয়ে পড়েছে, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ এই দই-মাকড়সা।
মঙ্গলবার হাওড়ামুখী নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের মধ্যাহ্নভোজে দেওয়া দইয়ের ভিতরে আস্ত মাকড়সা পান কল্যাণ মল্লিক নামে সি-৭ কামরার এক যাত্রী। রেলকর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন যাত্রীদের একাংশ। শেষে তাঁদের ক্ষোভ ফেটে পড়ে হাওড়া স্টেশনে। ট্রেনটি হাওড়ায় পৌঁছলে রেল পরিষেবার মান তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখানো হয়। লিখিত অভিযোগ জানানো হয় ডেপুটি স্টেশন ম্যানেজারের কাছে।
ট্রেনে বিছানাপত্রের দুর্দশা থেকে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বিকল হয়ে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় যখন-তখন। নষ্ট খাবার, নিম্ন মানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগে বিক্ষোভ হয়েছে অজস্র। জলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেসেই এর আগে খাবারের মধ্যে আরশোলা পাওয়া গিয়েছিল। তার পরে এ দিন দইয়ে মাকড়সা আবিষ্কার করে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।
পরিবেশনকারীরা বিষয়টিকে আমল দিতে চাননি বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ট্রেনটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের। কিন্তু ওই রেলের অফিসারেরা জানান, রাত পর্যন্ত এই ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা কোনও তথ্য পাননি। ‘‘শুনেছি, কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু পূর্ব রেল কিছুই জানায়নি,’’ বলেন ওখানকার জনসংযোগ দফতরের কর্তারা। পূর্ব রেল জানায়নি কেন? পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ফোন না-ধরায় এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। রেল কী ব্যবস্থা নিল, জানা যায়নি তা-ও। রেল বোর্ডের দাবি, পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানালে এখন পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেই দাবি যে কত অসার, এ দিনের দই-মাকড়সা কাণ্ডে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসিই তার প্রমাণ।