নাম আছে তো তালিকায়! প্রহর গুনছে অসম   

সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হতে চলেছে অসমে। কড়া নিরাপত্তায় মোড়া হয়েছে রাজ্য। প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সীমানাতেও চলছে কড়া নজরদারি। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি উত্তেজনা কমাতে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

প্রতীক্ষা: এনআরসি কেন্দ্রের বাইরে গ্রামবাসীরা। অসমের মরিগাঁও জেলার মায়ং গ্রামে। রয়টার্স

সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হতে চলেছে অসমে। কড়া নিরাপত্তায় মোড়া হয়েছে রাজ্য। প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সীমানাতেও চলছে কড়া নজরদারি। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি উত্তেজনা কমাতে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। দিসপুর ও সব জেলায় তৈরি হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এনআরসি-র সমন্বয়রক্ষাকারী আমলা প্রতীক হাজেলা জানিয়েছেন, এনআরসি কেন্দ্রের পাশাপাশি ৭৮৯৯৪০৫৪৪৪ নম্বরে এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপ করে, অনলাইনে ও ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন নম্বর ০৩৬১-২৪৬৩৩০৩-এ ফোন করে তালিকায় নাম উঠেছে কি না জানা যাবে।

Advertisement

১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাতের আগে অসমে আসা ব্যক্তি ও তাঁদের বংশধরদের নামই এনআরসিতে উঠবে। ২০১৫ সালে রাজ্যে এনআরসি নবীকরণের কাজ শুরু হয়েছিল। কয়েক দফায় তারিখ পিছোনোর পরে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম খসড়া প্রকাশিত হয়। ৬৮ লক্ষ ২৭ হাজার পরিবারের তিন কোটি ২৯ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে প্রথম খসড়ায় ১ কোটি ৯০ হাজারের নাম উঠেছিল। কিন্তু তথ্যে গরমিল, ৪৮ হাজারের বেশি বিবাহিত মহিলার জমা দেওয়া পঞ্চায়েতের প্রমাণপত্র গ্রাহ্য না হওয়া মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ নাম প্রথম তালিকা থেকে বাদ পড়বে বলে জানিয়েছেন হাজেলা। এনআরসি-র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা পড়েছিল সাড়ে ৬ কোটির বেশি নথি। অনেকের ‘লিগ্যাসি ডেটা’ ও বংশবৃক্ষ যাচাই করার জন্য ভিন্‌ রাজ্যে পাঠানো হলেও পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্য যাচাই প্রক্রিয়ায়

সাহায্য করেনি বলে আগেই দাবি করেছেন হাজেলা। ফলে তথ্য যাচাই অসম্পূর্ণ থেকেছে।

Advertisement

অসম পাবলিক ওয়ার্কসের দায়ের করা বৈধ নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলার জেরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও তদারকিতে এনআরসির কাজ চলছে। হাজেলা জানান, এনআরসি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশের পরে ফের নতুন করে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে।

প্রথম খসড়ায় বরাক এবং ব্রহ্মপু্ত্র উপত্যকায় বাঙালিদের নাম কম ওঠায় বাংলাভাষীদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের মনেও নাম বাদ পড়ার তীব্র আশঙ্কা। গৌহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে ডি-ভোটার ও তাঁদের বংশধরদের নামও তালিকার বাইরে রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: লালজিকে খুঁজেই পেল না কম্পিউটার!

মু্খ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কথায়, ‘‘৮৫৫ জন শহিদের প্রাণের বিনিময়ে হওয়া অসম চুক্তির ফলশ্রুতি এনআরসি। আগামিকালের তালিকা চূড়ান্ত খসড়া মাত্র। শেষ তালিকা নয়। নাম বাদ পড়লেই আটক শিবিরে নিয়ে যাওয়া হবে না বা বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হবে না।’’ তিনি জানান, প্রকৃত ভারতীয়েরা আবেদন জানানো ও নাম ওঠানোর পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। ৭ অগস্ট থেকে এনআরসি কেন্দ্র ও অনলাইনে তিন ধরনের আবেদনপত্র মিলবে।

প্রদেশ কংগ্রেসের অভিযোগ, এনআরসি প্রক্রিয়াকে বিভেদনীতির হাতিয়ার করতে চাইছে শাসক বিজেপি। ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। তাই নাম বাদ

পড়া ভারতীয়দের সাহায্য করতে প্রত্যেক জেলায় আইনি সাহায্যকেন্দ্র খুলবে দল।

এ দিকে রাজ্যের আটক শিবিরে বন্দি ৫২ জন বাংলাদেশিকে আগামিকাল বাংলাদেশে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সোমবার পরিস্থিতি সংবেদনশীল থাকবে আঁচ করে দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর সীমান্ত দিয়ে আজই তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন