প্রতীকী ছবি।
তেল চুরি বন্ধে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ রাজ্য জুড়ে অভিযানে নামতেই বন্ধ হয়ে যাওয়া পেট্রোল-ডিজেল পাম্পগুলি আজ ফের খুলেছে। যদিও তেল চুরি নিয়ে সমস্যা এখনও মেটেনি। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের নির্দেশ, ‘‘উত্তরপ্রদেশের সব ক’টি পাম্প পরীক্ষা করে দেখতে হবে। একই পরীক্ষা করতে হবে দেশে অন্যান্য অংশেও।’’ তেল সংস্থাগুলি সূত্রের খবর, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এই ধরনের ঘটনার তদন্তে ‘টাস্ক ফোর্স’ তৈরি করতে বলেছে। একটি তেল সংস্থার কর্তা জানান, মঙ্গলবারই রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছ থেকে তাঁরা সেই নির্দেশ পেয়েছেন। ওই টাস্ক ফোর্স-এ তেল সংস্থাগুলি ছাড়াও রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর খাদ্য দফতরের প্রতিনিধি থাকবেন।
উত্তরপ্রদেশের ঘটনা সামনে আসায় গোটা দেশেই গ্রাহকদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, তাঁদেরও ঠকানো হচ্ছে না তো? বিশেষ করে তেল চুরির ফাঁদ পাতাটা যেখানে মোটেই শক্ত কিছু নয়। একটা ‘ইলেকট্রনিক চিপ’ আর একটা ‘রিমোট কন্ট্রোল’। খরচ বড় জোর তিন হাজার টাকা। এই ছোট্ট ব্যবস্থাটি লাগালেই লিটারে কিছুটা করে তেল কম বেরোয় পাম্প থেকে। ৫০ থেকে ১০০ মিলিলিটার কিংবা তার বেশিও। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের হিসেব, তাদের রাজ্যে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ টাকা ও মাসে অন্তত ২০০ কোটি টাকা গায়েব হচ্ছে গাড়ির মালিকদের পকেট থেকে।
উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি পাম্পে ওই কারসাজি ধরা পড়ার পরেই যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ রাজ্য জুড়ে অভিযান শুরু করে। কিন্তু তাতে আবার অন্য বিপদ বাড়ে। তেল সংস্থাগুলির নিজস্ব ও ব্যক্তিগত মালিকানার অল্প কয়েকটি পাম্প বাদে বাকি সব তেলের পাম্প বন্ধ হয়ে যায় রাতারাতি। সোমবার লখনউ শহরের ১৫২টির মধ্যে ৪টি মাত্র পাম্প খোলা ছিল কাল। অনেককেই ফিরতে হয় তেল না নিয়ে। পাম্প মালিকদের সংগঠন জানায়, কর্মীরাই যাদি পুলিশের ভয়ে কাজে না আসেন, তবে তাঁরা কী করতে পারেন। কর্মীদের দোহাই দিলেও তেল চোর পাম্প মালিকদের বিপদটাও কম নয়। তেল চুরি ধরা পড়লে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার কথা। উত্তরপ্রদেশে পাম্পের সংখ্যা ৬ হাজার ৩০০। টাস্ক ফোর্স বলছে, রাজ্যের ৮০% পাম্প তেল চুরি করে। এই পাম্প মালিকরা যে অন্যায় করছেন, সে কথা কবুল করে নিয়েও তাঁদের সংগঠন রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের, এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগীর সঙ্গেও দেখা করেন আজ। চুরির জন্য তাদের ক্ষমা করা ও ত্রুটি শুধরে নেওয়ার জন্য কয়েকটা দিন সময় চেয়েছেন তাঁরা।
পশ্চিমবঙ্গেও অনেক দিন ধরে এমন অভিযোগ উঠছে। তেল সংস্থাগুলির দাবি, কম তেল দেওয়া বা বা তেলের যন্ত্রের ‘সিল’ ভাঙার অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। আর তেলের মাপ দেখার বিষয়টি রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের ‘লিগাল মেট্রোলজি’ বিভাগ ও খাদ্য দফতরের অধীন। ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে জানান, পাম্প এবং তেল সংস্থা, উভয়েই উভয়ের বিরুদ্ধে কম তেল দেওয়ার অভিযোগ তোলে। তিনি বলেন, ‘‘দু’পক্ষকে নিয়ে অনেক বার বৈঠক করেছি। অভিযোগ প্রমাণ হলে পাম্পগুলিকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে টাস্ক-ফোর্স হলেই শুধু হবে না। তাদের কাজের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোও গড়ে দিতে হবে।’’
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি তুষার সেন বলেন, ‘‘কেউ অন্যায় করলে সংশ্লিষ্ট দফতর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা তা সমর্থন করি না।’’ যদিও তাঁর অভিযোগ, পাম্পগুলিও অনেক সময় কম তেল পায়। তেল
সংস্থাগুলির বক্তব্য, কোনও পাম্প কম তেল পাওয়ার কথা নিয়ম মেনে সংস্থাকে জানালে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।