শক্তিকান্ত দাস
মোদী সরকারের দাবি, বাজারে নোটের জোগান বাড়ছে। কিন্তু টাকা তোলার বিধিনিষেধ তা হলে কবে উঠবে, সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোটে বাজার থেকে এখনও পর্যন্ত ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের নোট তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, বাজারে নতুন ৫০০-২০০০ টাকার নোটে ইতিমধ্যে ৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি জোগান দেওয়া হয়েছে। আর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ৪৫-৫০ শতাংশ ঘাটতি মিটে যাবে বলে আজ দাবি করল কেন্দ্র। ব্যাঙ্ক বা এটিএম থেকে টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা তা হলে উঠবে কবে? কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস সে উত্তর দিতে পারেননি। তাঁর জবাব, সবটাই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। তাঁর যুক্তি, বাজার থেকে পুরনো নোটে ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের নোট তুলে নেওয়া হয়েছে বলেই যে সমমূল্যের নোট ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হবে, এমন কোনও লক্ষ্য নেই। সবটাই নির্ভর করছে মানুষের চাহিদার উপর।
অথচ বাস্তব ঘটনা হল— নোট বাতিল করে কালো টাকা উদ্ধার এবং সন্ত্রাসবাদের মূলে আঘাত করার যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছিলেন, মানুষের ভোগান্তির চোটে তা দিনদিন ফিকে হচ্ছে। শক্তিকান্ত এ দিন স্পষ্ট জবাব দিতে না পারায়, সেই ভোগান্তির শেষ কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। সু্প্রিম কোর্ট আজ কড়া সুরে বলেছে, সরকার নিজেই যখন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার সাপ্তাহিক ঊর্ধ্বসীমা ২৪ হাজারে বেঁধে দিয়েছে, তখন তাকে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই হবে। অথবা ঊর্ধ্বসীমা বদলাতে হবে। কোর্টের পর্যবেক্ষণ, সাধারণ মানুষ ২৪ হাজার টাকা তুলতেই নাকানিচোবানি খাচ্ছেন। বেশির ভাগ সময়েই প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না। অথচ এর মধ্যেও কিছু লোকের হাতে লক্ষ লক্ষ নতুন নোট দেখা যাচ্ছে কী ভাবে, প্রশ্ন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরই আজ প্রশ্নটি তোলেন। উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতাগি বলেন, কিছু ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এই অসাধু লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতিতে চিঁড়ে ভিজবে কি? বিজেপির অন্দরমহলেই এখন প্রশ্নটা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। আজ দলের পদাধিকারী ও উত্তরপ্রদেশের সাংসদদের সঙ্গে দু’টি পৃথক বৈঠকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকেও এই প্রশ্নের মুখেই পড়তে হয়েছে। বিজেপির নেতা-সাংসদরা অভিযোগ তুলেছেন, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা মিলছে না। অবিলম্বে সমস্যা না মিটলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে মানুষের মনে যে জমি তৈরি হয়েছিল, তা খোয়াতে হবে। ভোটে সমস্যায় পড়তে হবে। সমবেত অভিযোগের সামনে অমিত খানিকটা মেজাজ হারান বলেও খবর। দলের নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলতে থাকেন, ব্যাপারটা ব্যুমেরাং হয়ে গেল। আগে থেকে সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলে এমনটা হতো না।
নেতারা যখন দলের সভাপতির কাছে নোটের অভাব নিয়ে সরব হচ্ছেন, তখন অর্থ মন্ত্রকের দাবি, পরিস্থিতি অনেকটাই শুধরেছে। কারণ এখন ২০০০ টাকার নোটের বদলে ৫০০ টাকার নোট ছাপানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। দেশ জুড়ে ২ লক্ষ ২০ হাজার এটিএম-এর মধ্যে ২ লক্ষ এটিএম-কেই নতুন নোট ছাড়ার উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অধিকাংশ সময়ই এটিএম-এ টাকা মিলছে না কেন? শক্তিকান্তর যুক্তি, ‘‘আসলে ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে চাইছে। তাই এটিএম-এর বদলে শাখা থেকে টাকা দিতে চাইছে। আমরা নির্দেশ পাঠিয়েছি যাতে এটিএম-এও টাকা দেওয়া হয়।’’
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরনো ১৫.৪৪ কোটি টাকার নোটের মধ্যে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই ১২.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা ফেরত চলে এসেছে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় সবটাই ফেরত চলে আসবে বলে অনুমান। অথচ প্রায় প্রতিদিনই আয়কর দফতরের তল্লাশিতে লক্ষ লক্ষ টাকার পুরনো নোট ধরা পড়ছে। কী ভাবে? সচিবের যুক্তি, কত নোট ফেরত আসছে, তা হিসেব করতে গিয়ে কোথায় কোথাও দু’বার যোগ হয়ে থাকতে পারে। শক্তিকান্ত বলেন, ‘‘যারা বেআইনি ভাবে টাকা মজুত করছেন, একেবারে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ধাঁচে অভিযান চলছে। আয়কর দফতরের তল্লাশিতে যে সব নতুন নোট আটক হচ্ছে, তা-ও বাজারে ছাড়া হবে।’’