—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বছরের পর বছর ধরে পলি জমছে। আর তার জেরেই দেশের বহু বাঁধ এবং জলাধারগুলির ধারণক্ষমতা কমে গিয়েছে। একটু আধটু নয়, প্রায় ৫০ শতাংশ। এর ফলে যেমন ধাক্কা খাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন, তেমনই বৃদ্ধি পেতে পারে বন্যা এবং ক্ষরার সম্ভাবনা। ভোপালের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর) এই নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছে। সরকারের তৈরি স্বায়ত্ত্বশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে স্টকাস্টিক এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট (সেরা) জার্নালে। প্রায় ৩০০টি জলাধার, যাদের ধারণক্ষমতা ১০ কোটি কিউবিক মিটারের বেশি, সেগুলি নিয়ে সরকারি রিপোর্ট খতিয়ে দেখে এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে আইআইএসইআর।
সমীক্ষা বলছে, দেশের বহু বাঁধ এবং জলাধারের ধারণক্ষমতা ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে আরও অনেক নদীর উপরে তৈরি জলাধারের ধারণক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমে যাবে। হিমালয় অঞ্চল, নর্মদা-তাপী অববাহিকা, পশ্চিমঘাট, গাঙ্গেয় সমভূমির নদীগুলি রয়েছে সেই তালিকায়। গবেষকেরা বলছেন, কৃষিকাজের কারণে মাটি কাটা, জঙ্গল কেচে ফেলা এবং বন্যার কারণেই নদীগুলিতে ধারণক্ষমতা কমতে চলেছে।
এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন আইআইএসইআরের অধ্যাপক সোমিল স্বর্ণকার। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের বাঁধ সুরক্ষা আইন (২০২১) কার্যকর করে দেশের ৫,৭০০টি বাঁধের পরিকাঠামোয় নজরদারি চলছে। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, শুধু বাঁধের দেওয়াল এবং লকগেট ঠিক থাকলেই তা সুরক্ষিত হয় না। যে জলাধারের ধারণক্ষমতা অর্ধেক কমে গিয়েছে, তা হয়তো ভেঙে পড়বে না। কিন্তু তা ‘সুরক্ষিতও হবে না’। বিশেষজ্ঞেরা বাঁধে জমা পলির উপরেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বাঁধের জলাধার থেকে নিয়মিত পলি নিষ্কাশনের উপরে জোর দিতে বলেছেন তাঁরা।
কানপুর আইআইটির ভূ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, দেশের বাঁধ নিয়ে স্বর্ণকারের এই গবেষণা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে সাহায্য করবে। বাঁধগুলিকে সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে আধিকারিকদের। আইআইএসইআর এই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে সতর্কও করেছে। তারা জানিয়েছে, এখন থেকে ব্যবস্থা না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের বহু বাঁধ অক্ষম হয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন। জল সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে। এমনকি, নদী অববাহিকায় পলি জমে বন্যা হতে পারে।