ছুটি না নিয়ে এ ভাবেই কাজে নেমেছে পড়ুয়ারা।
কেন্দ্রীয় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় স্বচ্ছ ভারতের রূপায়ন ও প্রচারে। রেডিও, টিভিতে কান পাতলে প্রতি ঘণ্টায় একাধিকবার শোনা যায় অমিতাভ বচ্চন বা বিদ্যা বালনের গলা। ব্যাপক প্রচারে কিছুটা উন্নতি হলেও বেশ কিছু এলাকায় পরিস্থিতিটা তেমন পাল্টায়নি। যেমন এত দিন পাল্টায়নি কারভেলের ছবিটা। সকালে উঠেই লোঠা হাতে মাঠে যাওয়ার লাইন— এমনটা দেখতেই অভ্যস্ত মহারাষ্ট্রের এই প্রত্যন্ত গ্রাম। ২০০৫-এর আগে এই গ্রামের মাত্র একটি বাড়িতেই ছিল শৌচালয়। বাকি সকলের ভরসা ছিল আশপাশের মাঠ, পুকুরপাড় বা অন্য কোনও আড়াল। গ্রামের মেয়ে, বৌ-দের অবস্থা আরও সঙ্গীন। প্রকৃতির ডাক এলেও অপেক্ষা করতে হয় আঁধার নামার।
এ ভাবে গ্রামের পরিবেশ ক্রমেই দূষিত হচ্ছিল। সংক্রামক অসুখের কবলে পড়ছিলেন বাসিন্দারা। দুরাবস্থার এই চিত্রটাই নাড়া দিয়েছিল ওঁদের। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় একটাই। শৌচালয় তৈরি। কিন্তু শুরুটা কী ভাবে হবে?
সালটা ২০০৫। মুম্বইয়ের কিষিনচাঁদ চেলারাম কলেজের ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম(এনএসএস)-এ কারভেল গ্রামে একটি ক্যাম্প করা হয়। শৌচালয় নিয়ে একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয় সেখানে। দেখা যায়, গ্রামে মাত্র একটি বাড়িতেই শৌচালয় রয়েছে। এমনকী গ্রামের একমাত্র স্কুলটিতেও কোনও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। স্কুলের ছাত্ররা মাঠে-ঘাটে যেতেই অভ্যস্থ। কিন্তু দেখা গিয়েছিল, বয়ঃসন্ধির ছাত্রীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে স্কুলছুটের প্রবণতা। মাসিক চলাকালীন স্কুলে উপস্থিত থাকছে না বেশির ভাগ ছাত্রীই। তাই প্রাথমিক পদক্ষেপটা শুরু হয় স্কুল থেকেই। ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিমের আওতায় স্থানীয় বিদ্যালয়ে একটি শৌচালয় তৈরি করে দেয় কিষিনচাঁদ চেলারাম কলেজের ছাত্ররা।
গল্পটা শেষ হয়ে যেতে পারত এখানেই। ক্যাম্প শেষ হলেও কারভেলে-কে এই অবস্থায় ফেলে যেতে মন সায় দেয়নি কলেজের পড়ুয়াদের। সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয় তখনই। ঠিক হয়, এই গ্রামের প্রতিটি ঘরকে ‘নির্মল ঘর’-এর তকমা এনে দেবে তাঁরাই।
মুম্বইয়ের কিষিনচাঁদ চেলারাম কলেজ
প্রাথমিক ভাবে শুরু হয় প্রচার অভিযান। প্রতিটি ঘরের প্রতিটি ব্যক্তিকে রাজি করানো সহজ ছিল না, মানছেন পড়ুয়ারাই। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস অর্জন করতেই লেগে যায় বেশ কয়েক বছর। তবে শেষ পর্যন্ত পেরেছেন তাঁরা। দু’বছর আগে থেকে শুরু হয় আসল কাজ। চুন, বালি, সিমেন্ট মাখা হাতে কোদাল, গাঁইতি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন পড়ুয়ারাই। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে্ দিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা, আর অবশ্যই কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রবিবার ছুটির দিন। তাই সেই দিনটাই বেছে নিয়েছিলেন কলেজের পড়ুয়া এবং এনএসএস-এর স্বেচ্ছাসেবকরা। দল বেঁধে কাজে নেমে পড়েছিল ওঁরা মোট ৩০০ জন। টানা দু’বছর কোনও ছুটি নেননি তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে তৈরি হল ৪৯টি শৌচালয়। ২০১৬-তে সংখ্যাটা কিছুটা বেড়ে দাঁড়াল ৬৭। এই মুহূর্তে সংখ্যাটা ১০৭।
কলেজেরই এক পড়ুয়া সিমরন বলেন, ‘‘প্রথমে যখন কাজ শুরু হল তখন শৌচালয় কী ভাবে তৈরি করা হয়, সে বিষয়ে কোনও ধারণাই ছিল না পড়ুয়াদের। এনএসএস-এর তরফে চিকিত্সক সতীশ কোলটের তত্ত্বাবধানেই সফল হয়েছিল এই কর্মকাণ্ড। এখন প্রতিদিনই শিফ্টিং-এ কাজ চলছে। আমরা খুবই আনন্দে কাজ করছি।’’
তবে শুধুই শৌযালয় তৈরি নয়। নির্মল গ্রাম তৈরির পাশাপাশি কারভেলে-তে স্বাক্ষরতা অভিযানও শুরু করেছে এনএসএস। সিমরন জানালেন, ‘নট মি, বাট ইউ’ এটাই পড়ুয়াদের ট্যাগ লাইন। আর এই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।