বাবাকে দেখেননি, তাঁর লড়াই দেখলেন মেয়ে

বন্ধুত্ব বাড়াতে চিনে গিয়ে সবে নিভৃত আলাপচারিতা শুরু করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সময়েই অসমে তেজপুরে দেখা গেল, মাত্র ২০ জন সৈন্যকে নিয়ে প্রায় ৬০০ চিনা সেনার সঙ্গে মরণপণ লড়ছেন  সুবেদার যোগীন্দর সিংহ! এ লড়াই অবশ্য পর্দায়। আসলটা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। অসীম বীরত্ব দেখিয়ে প্রাণ দেন যোগীন্দর।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

তেজপুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০৪:৪১
Share:

যোগীন্দরকে নিয়ে ছবি দেখার পরে তাঁর মেয়ে কুলবন্ত, জামাই সুরজিৎ। নিজস্ব চিত্র

বন্ধুত্ব বাড়াতে চিনে গিয়ে সবে নিভৃত আলাপচারিতা শুরু করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সময়েই অসমে তেজপুরে দেখা গেল, মাত্র ২০ জন সৈন্যকে নিয়ে প্রায় ৬০০ চিনা সেনার সঙ্গে মরণপণ লড়ছেন সুবেদার যোগীন্দর সিংহ! এ লড়াই অবশ্য পর্দায়। আসলটা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। অসীম বীরত্ব দেখিয়ে প্রাণ দেন যোগীন্দর। দেশ মরণোত্তর পরমবীর চক্রে ভূষিত করে তাঁকে।

Advertisement

এখন অবশ্য গুলি-বারুদ-রক্তের আবহ নেই। ডোকলামের মতো সংঘাতের পরিস্থিতিও পেরিয়ে এসেছে দু’দেশ। তবু তেজপুরের ৪ কোর সদর দফতরে অ্যালবার্ট এক্কা প্রেক্ষাগৃহে শীতল আরামে বসে পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠা যোগীন্দরকে দেখে চোখ ভিজে উঠল মেয়ে কুলবন্ত কৌর ও জামাই সুরজিৎ সিংহের। যোগীন্দর যখন মারা যান, কুলবন্ত তখন মায়ের গর্ভে। বাবাকে হারানোর শোকে মৃত্যু হয়েছিল বড় মেয়ের। এহেন যোগীন্দরের সাহসী জীবন সেলুলয়েডবন্দি করেছেন পরিচালক সিমরজিৎ সিংহ। রবিবার ছবির বিশেষ প্রিমিয়ারে হাজির ছিলেন জিওসি জি এ সাংঘা। সেনাকর্তা, জওয়ানদের সঙ্গে বসে মেয়ে-জামাই দেখলেন যোগীন্দরের লড়াই।

চিন তখন তাওয়াং দখল করতে উদ্যত। ম্যাকমাহন লাইনের কাছে ‘আইবি রিজ’-এ জোড়া শৃঙ্গ রক্ষার ভার পড়েছে সুবেদার যোগীন্দরের উপরে। মাত্র ২০ জন জওয়ানকে নিয়ে চিনা ফৌজের দু’টি আক্রমণ ঠেকানোর পরে গুলি শেষ হয়ে আসে যোগীন্দরদের। চিনারা যোগাযোগের মাধ্যম কেটে দেয়। সদর দফতর থেকে পিছু হঠার বার্তা দিলেও ১ শিখ ব্যাটালিয়ানের সুবেদার ৪১ বছর বয়সি যোগীন্দর পিছু হঠতে রাজি হননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বর্মা ফ্রন্টে লড়েছেন। ১৯৪৮-এ কাশ্মীরে পাক আক্রমণের মোকাবিলাতেও অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু এ বারে অসম লড়াইয়ে যোগীন্দরের সব সঙ্গীই মারা যান। জখম যোগীন্দর একা ঝাঁপিয়ে পড়েন। মেশিনগান তুলে নিয়ে মারতে থাকেন চিনা সেনাদের। গুলি শেষ হয়। জখম অবস্থায় যুদ্ধবন্দি হন চিনা বাহিনীর হাতে। কিন্তু তাদের চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করে প্রাণ দেন তিনি।

Advertisement

মরণোত্তর পরমবীর চক্র মেলার পরে চিনা বাহিনী তাঁর অস্থিভস্ম ও পাগড়ি ফেরত দিয়েছে। সেই পাগড়ি এখন মেরঠে গুরুদ্বার সাহিবে। তাওয়াংয়ের ‘আইবি রিজ’-এ স্মারকস্থল তৈরি হয়েছে তাঁর স্মরণে। বুম লা সীমান্তের সেই রণস্থল এখন মৈত্রীস্থল। বছরে দু’বার যেখানে দু’পারের সেনা ও জনতা মিলিত হন।

চিন বাহিনী সে বার প্রায় তেজপুর পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিল। সেই তেজপুরে বাবার কাহিনি পর্দায় ফিরে পেয়ে যোগীন্দর-কন্যা বলেন, “বাবার লড়াইয়ের গল্প সকলের মুখে শুনেছি অনেক বার। কিন্তু যে সেনা কোরে বাবা কর্মরত ছিলেন, সেখানে বসে জওয়ানদের সঙ্গে বাবার জীবনটা চোখের সামনে দেখার অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।”

জিওসি সাংঘার মতে, এমন সেনারা বাহিনীর সকলের মনে দেশপ্রেম ও আত্মবলিদানের প্রেরণা জোগান। কিন্তু মৈত্রীর আবহে চিন যুদ্ধের তিক্ত স্মৃতির এই সমাপতন কি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে? সেনাকর্তাদের মতে, এটা ইতিহাস। সত্যটা তুলে ধরা হয়েছে। বীরগাথার সঙ্গে বৈরিতার কোনও সম্পর্ক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন