আরএসএসের চাপেই অর্থসচিবের পদ থেকে বাদ গর্গ

বাজেটের ২০ দিনের মাথায় বুধবার রাতে মোদী সরকার অর্থসচিবের পদ থেকে সুভাষচন্দ্র গর্গকে সরিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিল, তার পিছনে আরএসএসের চাপই প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০২:০৫
Share:

সুভাষচন্দ্র গর্গ

আরএসএসের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ প্রবল বিরোধিতা শুরু করেছিল। বাজেট ঘোষণা মতো বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়া হলে দেশের অর্থনীতি ঘোর সঙ্কটে পড়বে বলে সতর্ক করেছিলেন মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন। তাঁর অভিযোগ, অর্থ মন্ত্রকের আমলারা সরকারকে ভুল পথে চালিত করছেন।

Advertisement

এর পরে বাজেটের ২০ দিনের মাথায় বুধবার রাতে মোদী সরকার অর্থসচিবের পদ থেকে সুভাষচন্দ্র গর্গকে সরিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিল, তার পিছনে আরএসএসের চাপই প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, এ ক্ষেত্রে তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ করে নতুন আর্থিক বিষয়ক সচিব করা হল গুজরাত ক্যাডারের বাঙালি অফিসার অতনু চক্রবর্তীকে। গর্গ বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাজেটের যাবতীয় সিদ্ধান্তে জড়িত ছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। বাজেটের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারামনও দায় এড়াতে পারেন না। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যনও একই সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু যাবতীয় দায় অর্থসচিব গর্গের উপরেই চাপিয়ে দেওয়া হল। ‘অপমানিত’ গর্গ আজ স্বেচ্ছাবসরের কথা জানিয়েছেন।

স্বভাবতই সঙ্ঘ-পরিবারের নেতারা এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত। রাখঢাক না করেই, গর্গকে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়ে অশ্বিনীর কটাক্ষ, ‘‘আমার বিশ্বাস বিদেশ থেকে ধার করার অসাধারণ ভাবনার জন্যই ওঁকে পুরস্কৃত করা হল!’’ রঘুরাম রাজন, সি রঙ্গরাজন, ওয়াই ভি রেড্ডির মতো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরেরাও এর বিরোধিতা করেছেন। বর্তমান গভর্নর শক্তিকান্ত দাস অবশ্য মুখ খোলেননি। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের আর এক নেতা এস গুরুমূর্তি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ডের সদস্য। মহাজনের দাবি, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এর বিরুদ্ধে। বোর্ডের পরবর্তী বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।’’ তাঁরা যে এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে চাপ তৈরি করেছিলেন, তা স্পষ্ট করে মহাজন বলেছেন, ‘‘যাঁদের বললে কাজ হয়, আমরা সেখানেই জানিয়ে এসেছিলাম।’’

Advertisement

গর্গের আমলে বিতর্ক

• রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে অর্থ রাজকোষে পাঠানোর দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের সাত নম্বর ধারা কাজে লাগানোর হুঁশিয়ারি। গভর্নরের পদ থেকে উর্জিত পটেল, ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে বিরল আচার্যর বিদায়
• সেবি-র বাড়তি তহবিলের ৭৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় রাজকোষে পাঠানোর প্রস্তাবে সেবি-র চেয়ারপার্সন

অজয় ত্যাগীর আপত্তি

• বাজেটে বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার
সিদ্ধান্তে অখুশি স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রথীন রায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নররা

আরএসএস, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রথীন রায় এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরদের মূল আপত্তি ছিল, ডলারে ঋণ নিলে ডলারের দামের ওঠাপড়ার ঝুঁকি নিতে হবে। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার যখন উপচে পড়ছে, সেখানে ডলারে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এক বার এই ফাঁদে পড়লে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মতোই দুর্দশা হবে। কিন্তু গর্গ তাতে কান না দিয়ে জানান, মোট রাজকোষ ঘাটতির অন্তত ১০ শতাংশ এ বার বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। তার সময়সূচিও তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি।

নতুন আর্থিক বিষয়ক সচিব

• গুজরাত ক্যাডারের বাঙালি অফিসার অতনু চক্রবর্তী
• গুজরাতে থাকাকালীন দীর্ঘ সময় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কাজ করেছেন
• গুজরাত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরে সচিব ছিলেন
• অর্থ মন্ত্রকের বিলগ্নিকরণ দফতরের সচিব হিসেবে গত অর্থ বছরে বিলগ্নিকরণ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলেছেন

সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, প্রধানমন্ত্রীর দফতর এখন বাজেটের ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্তটাই পর্যালোচনা করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর চায়, বিদেশে সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বন্ড ছেড়ে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত অর্থ মন্ত্রক আর এক বার খতিয়ে দেখুক। সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হোক। ডলারে ঋণ নেওয়ার পিছনে মূল যুক্তি ছিল, কম সুদে ঋণ মিলবে। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এলে রাজকোষের গোটা ঘাটতি পূরণ করতেই দেশের বাজার থেকে ঋণ নিতে হবে। তাতে সুদের বোঝা বাড়বে। দেশের বাজারে শিল্প মহলের জন্য ধার নেওয়ার অর্থও কমে যাবে। সর্বোপরি বাজেটের সিদ্ধান্ত থেকে এই ভাবে সরে এলে অর্থ মন্ত্রকের মুখ পুড়বে বলেই মনে করছেন আমলারা।

গর্গকে অর্থসচিবের পদ থেকে সরিয়ে বিদ্যুৎসচিব করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই সিদ্ধান্তে গর্গের অপমানিত হওয়ার কথা। আজ তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি স্বেচ্ছাবসর নিতে চান বলে সরকারের কাজে আবেদন করেছেন। তিন মাসের নোটিসকালীন সময় কেটে গেলে নভেম্বর থেকে তিনি আর চাকরি করতে চান না। তবে শুক্রবার বিদ্যুৎসচিব পদে যোগ দেবেন। আজ নতুন আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন গর্গ। এর আগে আর্থিক বিষয়ক দফতরের সচিব হিসেবে গর্গের আমলে নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্রের বক্তব্য, গর্গকে সরানোর সিদ্ধান্ত আগেই হয়ে গিয়েছিল। সরকার সংসদে বাজেট পাশের অপেক্ষায় ছিল। মঙ্গলবার সেটা হয়ে যেতে বুধবার তাতে সিলমোহর পড়ে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকেরই এক আমলার আক্ষেপ, ‘‘মোদী সরকারই গর্গকে সামনে রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংঘাতে যায়। এখন বিদেশ থেকে ডলারে ঋণের সিদ্ধান্তের যাবতীয় দায় ওঁর উপরে চাপিয়ে বিদায় করা হল তাঁকে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন