রাজেনের কথায় ক্ষুব্ধ কাছাড়ে আজ বন্‌ধ

অসমে সরকারি ভাষা নিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের মন্তব্যের প্রতিবাদে আগামী কাল কাছাড় বনধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। একই কারণে পৃথক বনধ ডেকেছে এসইউসিআই-ও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর ও হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share:

রাজেন গোঁহাইয়ের মন্তব্যকে সমর্থন করায় বিধায়ক আনোয়ার হুসেন লস্করের কুশপুতুল পোড়ালেন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার হাইলাকান্দির বোয়ালিপারে। — অমিত দাস

অসমে সরকারি ভাষা নিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের মন্তব্যের প্রতিবাদে আগামী কাল কাছাড় বনধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। একই কারণে পৃথক বনধ ডেকেছে এসইউসিআই-ও। অন্যান্য জরুরি পরিষেবার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বন্‌ধের আওতার বাইরে

Advertisement

রাখা হয়েছে।

রাজেনবাবু কয়েক দিন ধরেই বরাকের বাঙালিদের মাতৃভাষা নিয়ে মন্তব্য করে চলেছেন। তাঁদেরও অসমিয়া পরিচিতি গ্রহণ উচিত, ভাষা সংগ্রামের জন্যই বরাক-ব্রহ্মপুত্র মানসিক দূরত্ব বেড়েছে— এ ধরনের কথা তিনি আগেও বলেছেন। ওই সব নিয়ে কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিতে ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল। এ বার তাতে ঘি ঢাললেন রাজেনবাবু। তিনি বললেন, ‘‘অসমে একটিই সরকারি ভাষা থাকা উচিত। বরাকের জন্য পৃথক সরকারি ভাষা, এ আবার কী!’’

Advertisement

একে অত্যন্ত অপমানজনক মন্তব্য বলে মনে করছে শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটি। সাধারণ সম্পাদক পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একাদশ শহিদের প্রাণের বিনিময়ে বরাক উপত্যকায় বাংলা সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন তা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।’’ তারই প্রতিবাদে আগামী কাল ১২ ঘণ্টার বনধ বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসইউসিআই-র জেলা সম্পাদক শ্যামদেও কুর্মিও আগামী কাল ১২ ঘণ্টার কাছাড় বনধ পালনের আহ্বান জানান। তবে কংগ্রেসের বনধকে তাঁরা সমর্থন করছেন না। বরং কটাক্ষ করে বলেছেন, এ নিয়ে কংগ্রেসের বনধ ডাকার নৈতিক অধিকার নেই। কংগ্রেস আমলেই মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে ১১ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

ভাষাশহিদদের প্রতি সম্মান জানাতে আগামী কাল দোকানপাট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে এসইউসিআই। রেলও বনধের আওতার মধ্যে থাকবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ভাষাশহিদ স্টেশন শহিদ স্মরণ সমিতির পক্ষ থেকে বনধকে সমর্থন করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক রাজীব কর বলেন, এ নিয়ে যে সব রাজনৈতিক দল বা সংগঠন প্রতিবাদী আন্দোলনে নামবে, তাঁরা সকলের পাশে থাকবেন।

এ দিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের পক্ষ থেকে রবিবার এ বিষয়ে শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়ে গণঅভিবর্তনের ডাক দিয়েছে। রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেনবাবুর মন্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় বলে মনে করছেন ভাষাশহিদ স্মারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লবকুমার গোস্বামী।

বিজেপি আগামী কালের বনধের বিরোধিতা করলেও তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবে না বলে জানিয়েছে। জেলা সভাপতি কৌশিক রাইয়ের কথায়, ‘‘রাজেনবাবুর বক্তব্য একেবারেই ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। কারণ ১৯৬১ সালে বাংলা এখানকার সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকার তাতে হাত দেওয়ার কথা মোটেও ভাবছে না।’’ কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘আসলে সরকারের বিরুদ্ধে বলার মত কিছু
নেই কংগ্রেসের। তাই এ নিয়ে গা ঘামাতে চাইছেন।’’ বিজেপির পক্ষ থেকে রাজেনবাবুর মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত’ বলা হলেও বিরোধীদের আশঙ্কা, এটি বিজেপি সরকারের কৌশল। রাজেনবাবুকে দিয়ে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। না হলে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকারি বিবৃতি দিচ্ছেন না কেন, জানতে চান তাঁরা। প্রশ্ন তোলেন পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য এবং ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পালের নীরবতা নিয়েও। এসইউসিআই-র সুব্রত নাথ বলেন, ‘‘আসলে পদ হারানোর ভয়ে তাঁরা কেউ কথা বলছেন না।’’

ভাষাশহিদ স্মারক সমিতি সতর্ক করে দিয়েছে, রাজেন গোঁহাইয়ের এ ধরনের মন্তব্য অদূর ভবিষ্যতে অসমকে বিভাজিত করতে সাহায্য করবে। প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র দীপন দেওয়ানজি-ও বলেন, ‘‘এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মুখে এই ধরনের মন্তব্য বরাক উপত্যকাকে পৃথক হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’’ এই অঞ্চলে সরকারি ভাষা বাংলা কী ভাবে এসেছে, তার পাঠ নিতে তিনি রাজেনবাবুকে পরামর্শ দেন। রাজেনবাবুর মন্তব্য নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এমনকী বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িতরাও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে সরকারি বিবৃতি দাবি করছেন।

কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের বিরুদ্ধে এমনিতেই ফুঁসছিল বরাক। তার মধ্যে ওই বক্তব্যের সমর্থন করে বরাকবাসী একাংশের রোষের মুখে পড়লেন হাইলাকান্দির বিধায়ক আনোয়ার হুসেন লস্করও। আজ হাইলাকান্দির বোয়ালিপারে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির সদস্যরা জাতীয় সড়কে বিধায়কের কুশপুতুল দাহ করেন। রাজেনবাবু এবং আনোয়ার লস্করের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তাঁরা।

বিধায়কের মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দাজনক বলে চিহ্নিত করেন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সম্পাদক জহিরউদ্দিন লস্কর, হাইলাকান্দি জেলা সভাপতি সরিফউদ্দিন মাজারভুঁইঞা।

বনধের জন্য আগামী কাল কাছাড়ে চলাচলকারী সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। শিলচর-শিয়ালদহ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দেরিতে ছাড়বে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল জানিয়েছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস আগামী কাল সকাল সাড়ে দশটার জায়গায় সন্ধে ৫টা ১৫ মিনিটে রওনা হবে। বাতিল ট্রেনগুলি হল শিলচর-আগরতলা-শিলচর, শিলচর-ভৈরবী-শিলচর, শিলচর-গুয়াহাটি, গুয়াহাটি-শিলচর ও ধর্মনগর-শিলচর-ধর্মনগর। শিলচর-মহীশাসন-শিলচর ট্রেনও চলবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন