Sulli Deals App

Hana Khan: ‘আমি হানা খান, আমি প্রতিবাদ করেছি’

‘সুল্লি ডিলস’ অ্যাপে তাঁর ছবি দিয়ে তাঁকে ‘নিলামে তোলা’ হয়েছে দেখে গত বছরের জুলাই মাসে নয়ডায় প্রথম এফআইআর করেছিলেন পেশায় বিমানচালক হানা।

Advertisement

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:০৭
Share:

হানা খান।

‘‘চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকবে। কিন্তু চুপ করে থাকলে চলবে না। কী হবে না ভেবে প্রতিবাদ করে যেতে হবে।’’

Advertisement

কথাগুলো যিনি বলছিলেন, সেই হানা খান চুপ থাকেননি। ‘সুল্লি ডিলস’ অ্যাপে তাঁর ছবি দিয়ে তাঁকে ‘নিলামে তোলা’ হয়েছে দেখে গত বছরের জুলাই মাসে নয়ডায় প্রথম এফআইআর করেছিলেন পেশায় বিমানচালক হানা। রবিবার দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল ‘সুল্লি ডিলস’-এর মূল চক্রী ওমকারেশ্বর ঠাকুরকে মধ্যপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করার পর তাঁর মনে হচ্ছে, ‘‘পুলিশ পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে কারণ, আমরা প্রতিবাদ করে গিয়েছি। ছ’মাস ধরে কেউ গ্রেফতার হয়নি। কিন্তু আমরা বিষয়টা ভুলতে দিইনি।’’

অবশ্য জুলাইয়ে নয়, বিষয়টির সূত্রপাত আরও আগে হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন হানা। তিনি বলেন, ‘‘সেটা মে মাস। দেশ জুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। টুইটারে আমি ও আমার বন্ধুরা অক্সিজেন ও চিকিৎসার জন্য যতটা পারি সাহায্য করছিলাম। তখনই নজরে আসে লিবারাল ডজ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে আমি ও আরও অনেক মুসলিম মহিলাকে নিলাম করা হচ্ছে। তখনও এফআইআর করেছিলেন আমার এক বন্ধু। কিন্তু তার পরেও সুল্লি ডিলস অ্যাপ তৈরি হয়।’’

Advertisement

জুলাইয়ে হানার মতোই এফআইআর করেছিলেন অনেক মহিলা। কিন্তু কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একাধিক বার পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছি। কোনও লাভ হয়নি।’’ ‘সুল্লি ডিলস’-এর অনুকরণে চলতি বছরে সামনে আসে ‘বুল্লি বাই’ অ্যাপ। হানা বলছেন, ‘‘প্রথমে রাগ হয়েছিল। এ বার আবার ওই ঘটনা দেখে প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়ি। এত হতাশ আমি জীবনে হইনি। মনে হচ্ছিল, তা হলে কি এমন আক্রমণ চলতেই থাকবে?’’

কেবল মহিলা নন, মুসলিম বলেই এমন আক্রমণ বলে মনে করেন হানা। তাঁর কথায়, ‘‘যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের মধ্যে এক জন তরুণীও রয়েছে। কেবল মহিলা বলে আক্রমণ করা হলে কি সেটা হত?’’ তাঁদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন হানা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যে অজস্র মুসলিম মহিলার ছবি দিয়ে ওই কদর্য আক্রমণ হচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে অনেকে সেই সাহস পাননি, অনেকে টুইটার প্রোফাইল বন্ধ করে দিয়েছেন। আক্রমণকারীরা সেটাই চায়।’’

‘বুল্লি বাই’ অ্যাপ নিয়ে অভিযোগ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই মুম্বই পুলিশ মূল চক্রী নীরজ বিষ্ণোই-সহ চার জনকে গ্রেফতার পরে। তার পরে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করে ‘সুল্লি ডিলস’-এর মাথাকে। হানার প্রশ্ন, ‘‘দেখাই তো যাচ্ছে, পুলিশ তৎপর হলে এত দ্রুত অপরাধীদের ধরা যায়। তা হলে জুলাই থেকে এত দিন তা হয়নি কেন?’’ এখন ওই অপরাধীদের সমর্থনে সহানুভূতির হাওয়া তোলার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ হানার। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘অনেকে বলছেন, ওদের কম বয়স ইত্যাদি। কিন্তু যে ভাবে আক্রমণ, নির্যাতন করা হয়েছে তাতে এর কোনও জায়গা নেই। তা ছাড়া প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়স্ক।’’

তবে গোটা লড়াইয়ে পাশে থাকার জন্য তিনি অকুণ্ঠ ধন্যবাদ দিয়েছেন শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীকে। হানা বলছেন, ‘‘উনি শুরু থেকে এর প্রতিবাদে বারবার সরব হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে একাধিক বার জানিয়েছেন। কংগ্রেস সাংসদ মহম্মদ জাভেদ বিভিন্ন দলের ৫৬ জন সাংসদের সই সংগ্রহ করে জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ওঁরা ছিলেন বলে বিষয়টা হারিয়ে যায়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement