National News

শশী জেলের পথে রওনা হলেই দ্রুত ধস নামবে সমর্থনে: পনীর শিবির

সোমবার পর্যন্তও পাঁচ জনের বেশি বিধায়ককে দেখা যাচ্ছিল না পনীরসেলভম শিবিরে। সাংসদরা একে একে তাঁকে সমর্থন করতে শুরু করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু গোল্ডেন বে রিসর্টে ‘আটক’ বিধায়কদের কিছুতেই নিজের দিকে টানতে পারছিলেন না পনীরসেলভম। মঙ্গলবার দুপুরে কিন্তু দেখা যাচ্ছে পনীরসেলভমের সমর্থক বিধায়কদের সংখ্যা বেড়ে অন্তত দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৭:১৪
Share:

পনীরসেলভম শিবির এখনও আশায়, কিন্তু বিধায়ক দলে ভাঙন ধরবে কি? —ফাইল চিত্র।

সোমবার পর্যন্তও পাঁচ জনের বেশি বিধায়ককে দেখা যাচ্ছিল না পনীরসেলভম শিবিরে। সাংসদরা একে একে তাঁকে সমর্থন করতে শুরু করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু গোল্ডেন বে রিসর্টে ‘আটক’ বিধায়কদের কিছুতেই নিজের দিকে টানতে পারছিলেন না পনীরসেলভম। মঙ্গলবার দুপুরে কিন্তু দেখা যাচ্ছে পনীরসেলভমের সমর্থক বিধায়কদের সংখ্যা বেড়ে অন্তত দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ৫ থেকে বেড়ে ১০। লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে এআইএডিএমকে-র সাংসদ এখন ৫০ জন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জন ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে পনীরসেলভমের হয়ে আসরে নেমেছেন। শশিকলা নটরাজন জেলে ঢোকা মাত্রই ছবিটা আরও দ্রুত বদলাবে। দাবি পনীরসেলভম শিবিরের।

Advertisement

১৩৪ জন বিধায়ক এআইএডিএমকে-র। সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজন ১১৭ জনকে। শশিকলা প্রথমে জানিয়েছিলেন, ১৩৪ জনই তাঁর পক্ষে। কিন্তু পান্ডিয়ন, পনীরসেলভম, মধুসূদনন, মৈত্রেয়নদের মতো একের পর এক প্রবীণ নেতার বিদ্রোহের পর শশিকলা শিবিরের দাবি ছিল, ১৩১ জন বিধায়ক তাঁর পক্ষে রয়েছেন। সংখ্যা যাতে আর না কমে, তা নিশ্চিত করতে বিধায়কদের রিসর্ট-বন্দি করে ফেলেন শশিকলা। যে ১৩১ জনের সমর্থন তাঁর সঙ্গে রয়েছে বলে শশিকলা দাবি করছিলেন, তাঁদের সকলকে গোল্ডেন বে রিসর্টে পাঠানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য যত জনকে প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক বিধায়ককেই মহাবলীপুরমের নিকটবর্তী ওই রিসর্টে পাঠানো হয়। মাঝ পথে বাস থেকে নেমে পালিয়েছিলেন এক বিধায়ক। এক মহিলা বিধায়ক পালানোর ইচ্ছা থাকলেও পালাতে পারেননি। তাঁর স্বামী অবশেষে স্ত্রীয়ের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হন। তবে সব মিলিয়ে জনা পাঁচেকের বেশি বিধায়কের সমর্থন সোমবার পর্যন্তও পনীরের পক্ষে দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় কী হতে চলেছে, তা নিয়ে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা যত বেড়েছে, গোল্ডেন বে রিসর্টে চাঞ্চল্যও ততই বেড়েছে। শশিকলা কি আদৌ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন? রিসর্ট-বন্দি অনেক বিধায়কের মনেই এই প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছিল। পনীরসেলভমের বদলে শশিকলার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত সমীচিন হল কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিধায়করা যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করেছেন, সোমবার রাতেই তা কিছুটা স্পষ্ট হয়ে যায়। দুই বিধায়ক রাত পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই গোল্ডেন বে রিসর্টের পাঁচিল টপকে গত রাতে পালান এবং চেন্নাই ফিরে পনীরসেলভম শিবিরে যোগ দেন।

গোল্ডেন বে রিসর্টে ‘অনুগামী’ বিধায়কদের মাঝে শশিকলা। ছবি: পিটিআই।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষিত হওয়ার আগে শশিকলাকে রাজ্যপাল শপথ নিতে ডাকবেন না, এ কথা যে মুহূর্তে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সেই মুহূর্তেই বিপদের মেঘ দেখেছিলেন শশিকলা। তাই গোল্ডেন বে রিসর্টে তাঁর নজরদারি আরও কড়া হয়ে গিয়েছিল। শেষ কয়েক দিনে আর একেবারেই ঝুঁকি না নিয়ে রিসর্টে গিয়ে স্থায়ী ভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসে পড়েন ‘চিন্নাম্মা’। বিধায়কদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং পনীরসেলভমের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের ন্যূনতম সম্ভাবনা মুছে ফেলতেই যে শশিকলার এই পদক্ষেপ, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু তাতেও আস্থার ভিতে ভাঙনটা পুরোপুরি রুখতে পারেননি জয়ললিতার গত ৩৩ বছরের সঙ্গী ‘চিন্নাম্মা’। রাতেই দুই বিধায়ক রিসর্ট ছেড়ে পালিয়ে যান।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই পনীরসেলভমের পক্ষে ১০ জন বিধায়ককে দেখা যাচ্ছে। ১২ জন সাংসদ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে তাঁকে সমর্থন করেছেন। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা মন্ত্রী পান্ডিয়ারাজন দু’দিন আগেই পনীরসেলভমের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়া একাধিক প্রবীণ নেতাকে পনীরসেলভম শিবিরে ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছে। বিধায়কদের প্রতি পনীরের আবেদন, ‘‘আসুন এআইএডিএমকে-কে বাঁচানোর স্বার্থে আমরা একজোট হই।’’ তবে গোল্ডেন বে রিসর্টে শশিকলার ঠায় উপস্থিতির জেরেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, শশিকলা শিবিরের হাত থেকে ম্যাজিক ফিগার এখনও ছিনিয়ে নিতে পারেননি পনীর। অন্তত ১২৪ জন বিধায়ক এখনও তাঁর পক্ষে রয়েছেন বলে শশিকলার দাবি। সেই দাবির উপর দাঁড়িয়েই তিনি পালানিস্বামীকে পরিষদীয় দলনেতা ঘোষণা করেছেন। আর পালানিস্বামীও দ্রুত রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠন করা দাবি পেশ করেছেন।

এআইএডিএমকে-কে বাঁচানোর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে— রিসর্ট-বন্দি বিধায়কদের প্রতি এমনই বার্তা দিয়েছেন পনীরসেলভম। —ফাইল চিত্র।

পনীরসেলভম, পান্ডিয়ন, পান্ডিয়ারাজন-সহ ২০ জন প্রবীণ নেতাকে দল থেকে এ দিন বহিষ্কার করেছেন এআইএডিএমকে সাধারণ সম্পাদক শশিকলা। তিনি জেলে যাওয়ার পরে দল ও সরকার পরিচালনায় পনীর ও তাঁর সমর্থকদের যাতে কোনও ভূমিকা না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। তবে পনীরসেলভম এবং পান্ডিয়ারাজন ছাড়া কোনও বিধায়ককে শশীকলা বহিষ্কার করেননি। এখন যে বিধায়করা তাঁর পক্ষে রয়েছেন, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার সময়ও তাঁরা সকলে তাঁর পক্ষে থাকবেন, সে বিষয়ে সম্ভবত নিশ্চিত নন শশিকলা। তাই সরকারের দখল না নেওয়া পর্যন্ত কোনও বিধায়ককেই তিনি চটাতে চাইছেন না।

আরও পড়ুন: জেলে ঢোকার আগে মরিয়া শশি, পনীরকে ‘তাড়িয়ে’ বাছলেন নতুন দলনেতা

মসনদ নয়, জেলেই যেতে হচ্ছে শশিকলাকে

বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে অবশ্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন পনীরসেলভমরা। নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে তাঁদের আর্জি, শশিকলার এই সিদ্ধান্তকে যেন বৈধ হিসেবে ধরা না হয়।

নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা জানতে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু পনীরসেলভমদের বহিষ্কারকে যে এআইএডিএমকে নেতা-কর্মীরাও খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। শশিকলা নটরাজন প্রিজন ভ্যানের পা-দানিতে পা রাখলেই ছবিটা বদলাতে শুরু করবে, বলছেন পনীর অনুগামীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন