কোপে সিবিআই ও ইডি
Supreme Court

Supreme Court: তদন্তে দেরি, ব্যাখ্যা তলব

দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে বুধবার রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২১ ০৫:৪২
Share:

কেন্দ্রের কাছে ব্যাখ্যা তলব ফাইল চিত্র

সাংসদ বা বিধায়কের মতো প্রভাবশালীরা কোনও মামলায় অভিযুক্ত হলে সিবিআই ও ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্ত কেন এগোয় না, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তার ব্যাখ্যা তলব করল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

মামলার তদন্তের ভার হাতে যাওয়ার ১০-১৫ বছর পরেও সিবিআই (সেন্ট্রাল বুরো অব ইনভেস্টিগেশন) বা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট) কেন চার্জশিট দিয়ে উঠতে পারে না, সে বিষয়ে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে বুধবার রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা এ দিন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “এ ভাবে মামলা ঝুলিয়ে রাখা যায় না। চার্জশিট দিন!” বিরক্ত হয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “যাতে মনোবল না ভেঙে যায়, এ জন্য সচরাচর আমরা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কিছু বলি না। কিন্তু বিপুল পরিমাণ মামলা যে বকেয়া পড়ে রয়েছে, সেটা তাদেরও তো বুঝতে হবে।” ইডি-র সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন, “শুধু অভিযুক্তের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা ছাড়া এরা তো কিছুই করে না!” দ্রুত তদন্ত করে মামলা নিষ্পত্তির উপযোগী লোকবল ও পরিকাঠামো তাদের তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দেওয়ার পরামর্শও কেন্দ্রীয় সরকারকে দেন সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারপতি।

গত বু‌ধবারই মাদ্রাজ হাই কোর্ট একটি মামলার পর্যবেক্ষণে সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে সরকারের ‘খাঁচার তোতা’ করে না-রেখে নির্বাচন কমিশন বা সিএজি-র মতো স্বাধীন ভাবে কাজ করার অধিকার দেওয়ার জন্য আইন আনতে বলেছিল কেন্দ্রকে। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ মামলার তদন্ত দ্রুত এবং দক্ষ ভাবে শেষ করার উপযোগী লোকবল এবং আধুনিক পরিকাঠামোর ব্যবস্থাও সিবিআইয়ের জন্য করতে বলেছিল কেন্দ্রকে। এর পরে বুধবার আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়ের একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সরব হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রমণা, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অপরাধের মামলাগুলির দ্রুত বিচার এবং দোষী আইনজীবীদের আদালত থেকে আজীবন বহিষ্কারের আর্জি

Advertisement

জানিয়ে মামলাটি করেছিলেন উপাধ্যায়। শুনানির সময়ে আদালত বান্ধব বিজয় হংসরিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি চার্জশিট দিতে দেরি করায় সেগুলির নিষ্পত্তি ঝুলেই থাকে। এর জন্য কোনও কারণও তারা দেখায় না। হংসরিয়া বলেন, “একটি মামলায় তদন্ত শেষ করতে কত দেরি হবে জানতে চাওয়ায় সিবিআই জানায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।”

আদালত বান্ধবের এই মন্তব্য শুনে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “কী বলছেন!” তার পরেই প্রধান বিচারপতি বলেন, “মামলা ঝুলিয়ে রাখার অর্থ মানুষকে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা। প্রায় ২০০ এমন মামলা বছরের পর বছর ধরে বকেয়া পড়ে রয়েছে, যেখানে সাংসদ বা বিধায়ক অভিযুক্ত।” গত বুধবারে মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিচারপতি যা বলেছিলেন, সেই সুরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রমণা এ দিন বলেন, “ছোট হোক বা বড়, একের পর এক তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়। বিচার বিভাগের মতোই অবস্থা তাদের। না আছে লোকবল, না প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো। তারাও কাজ করে সেই মতো! ১০-১৫ বছরেও কেন একটি মামলার তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেওয়া হবে না? এই দেরির ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।”

সরকারের পক্ষে আদালতে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মন্তব্য করেন, “আমি বিশেষ কোনও মামলার উল্লেখ না করে সাধারণ ভাবে সুপ্রিম কোর্টের এই উদ্বেগের সঙ্গে সহমত। আমি মনে করি তদন্তের গতি বাড়ানো উচিত।” মেহতার এই মন্তব্যে আগুনে ঘি পড়ে। প্রধান বিচারপতি রমণা বলেন, “তদন্তের গতি বাড়ানো উচিত, এ কথা তো বলেই দেওয়া যায়। কিন্তু সেটা হচ্ছে কোথায়?”

প্রধান বিচারপতি বলেন মামলার পরবর্তী শুনানির দিনে সলিসিটর জেনারেলকে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন এই বিপুল পরিমাণ মামলার তদন্ত কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি শেষ করতে পারেনি। কেন বছরের পর বছর মামলাগুলি ঝুলে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন