পথকুুকুর মামলায় রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
স্কুল, রেলস্টেশন, হাসপাতাল চত্বর থেকে পথকুকুরদের সরাতেই হবে। শুক্রবার রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসনকে এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা, বিচারপতি এনভি আঞ্জারিয়ার বেঞ্চের নির্দেশ, নির্বীজকরণের জন্য পথকুকুরদের যে সব এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে আর তাদের ফেরানো চলবে না। আদালতের নির্দেশে নির্বীজকরণের পর পথকুকুরদের ঠাঁই হবে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রেই।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কোন কোন জায়গায় পথকুকুর থাকবে না, তা চিহ্নিত করবে স্থানীয় প্রশাসন। দু’সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, খেলার মাঠ কিংবা কোনও সরকারি ভবনে যাতে পথকুকুর ঢুকতে না-পারে, তার জন্য বেড়া দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করবেন জেলাশাসকেরা। আট সপ্তাহের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, ওই সমস্ত জায়গায় পথকুকুর ঢুকছে কি না, স্থানীয় প্রশাসনকে সেই বিষয়ে নজরদারি চালাতে হবে। তার পর রিপোর্ট জমা দিতে হবে কোর্টকে।
নির্দেশনামা পড়ে শোনানোর সময় বিচারপতি মেহতা বলেন, “তাদের (পথকুকুর) পুরনো জায়গায় আর ফেরানো যাবে না। তা না হলে যে লক্ষ্যে আদালতের এই নির্দেশ, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” শুক্রবারই এই বিষয়ে সবিস্তার নির্দেশনামা প্রকাশ করবে সুপ্রিম কোর্ট। পথকুকুর মামলাতেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি) এবং অন্যান্য সড়ক কর্তৃপক্ষকে রাস্তা থেকে গরু এবং অন্য প্রাণীদের সরাতে হবে। ওই পশুগুলি যাতে নির্দিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রে থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
গত ২২ অগস্ট দিল্লির পথকুকুর সংক্রান্ত মামলায় সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে যুক্ত করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়েছিল, পথকুকুরদের রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট আশ্রয়ে তুলে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে তাদের সঠিক পদ্ধতিতে বন্ধ্যাত্বকরণ এবং প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ করতে হবে। তার পর আবার যেখান থেকে কুকুরদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে ফিরিয়ে দিয়ে যেতে হবে। সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এই সংক্রান্ত হলফনামা সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা এবং দিল্লি সরকার ছাড়া আর কেউ তা করেনি বলে অভিযোগ।
গত ২৭ অক্টোবর তিন বিচারপতির বেঞ্চে পথকুকুর সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল। ওই দিনের শুনানিতে অধিকাংশ রাজ্যের কাছ থেকে কোনও জবাব না-মেলায় তাদের ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত। তার পরেই ওই রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের তলব করা হয়। সেইমতো গত ৩ নভেম্বর আদালতে সশরীরে হাজিরা দেন তলব পাওয়া প্রায় সব রাজ্যের মুখ্যসচিব।
দিল্লিতে একের পর এক পথকুকুরের কামড়ের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শোনে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে দিল্লির রাস্তা থেকে সমস্ত পথকুকুরকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পরে তা পরিবর্তন করে বন্ধ্যাত্বকরণে জোর দেওয়া হয়।