Supreme Court

কিশোরীকে যৌন সংযম শিক্ষা: ‘কলকাতা হাই কোর্টের রায় সমস্যায় ভরা’, আর কী বলল সুপ্রিম কোর্ট

সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা কিশোর-কিশোরীদের যে অধিকার দিয়েছে, তা লঙ্ঘন করছে হাই কোর্টের রায় বলেও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৫
Share:

সুপ্রিম কোর্ট। — ফাইল চিত্র।

কিশোরীদের যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত বলে রায় দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই রায়ের সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। আরও জানাল, এই রায়ের প্রত্যেক অনুচ্ছেদ ‘সমস্যাযুক্ত’। পাশাপাশি এই রায়ের নেপথ্যে কী আইনি নীতি রয়েছে, তা-ও জানতে চাইল শীর্ষ আদালত।

Advertisement

কিশোরীকে পরামর্শ দিয়ে হাই কোর্টের সেই রায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। ভারতের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে। সেই মামলা শুনছেন বিচারপতি অভয় এস ওঝা, বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইয়াঁর বেঞ্চ। এর আগে রাজ্য, অভিযুক্ত এবং মামলাকারীকে নোটিস পাঠানোর সময় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, হাই কোর্টের এই ধরনের মন্তব্য ‘আপত্তিকর’, ‘সম্পূর্ণ অন্যায্য’। বৃহস্পতিবার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানাল, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা কিশোর-কিশোরীদের যে অধিকার দিয়েছে, তা লঙ্ঘন করছে হাই কোর্টের রায় বলেও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, পকসো ধারা সংশোধন করা উচিত। যে হেতু তা করা নেই, তাই সংবিধানের ৪৮২ ধারা প্রয়োগ করা হবে।

নির্দেশিকায় সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, ‘‘আবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল হাই কোর্টের। অন্য কিছু নয়। এই ধরনের মামলায় বিচারপতির ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করবেন না বলেই আশা।’’ রাজ্যের আইনজীবী হুজেফা আহমাদি সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন, হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য আবেদন করেছে। সেই বিষয়ে জানাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত মামলার সঙ্গেই ওই আবেদনও শুনতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, কিশোরীদের যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। দু’মিনিটের তৃপ্তির জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ হারানো উচিত নয়। আর কিশোরদের উচিত কিশোরী, মহিলা, তাঁদের মর্যাদা এবং শারীরিক স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো। প্রসঙ্গত, এক কিশোরীর সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ছিল এক যুবকের। সম্পর্কে থাকাকালীন ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে যুবকের বিরুদ্ধে। গত অক্টোবরে পকসো আইনে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবককে বেকসুর খালাস করে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, কিশোরীদের নিজের শরীরে অধিকার, সম্মান এবং নিজের মূল্য রক্ষা করতে হবে। যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ দু’মিনিটের সুখের জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ হারালে সে-ই সমাজের চোখে ‘ব্যর্থ’ হবে। নিজের গোপনীয়তা এবং শরীরের অধিকার নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। কিশোরদেরও কিছু পরামর্শ দেয় আদালত। জানিয়েছে, কিশোরী এবং মহিলাদের যে কর্তব্যের কথা হাই কোর্ট জানিয়েছে, তাকে সম্মান করতে হবে। এক জন মহিলা, তাঁর আত্মসম্মান, তাঁর মর্যাদা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, শারীরিক অধিকারকে সম্মান করতে হবে কিশোরদের। এই রায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পর্যবেক্ষণ জানাল বেঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন