রঞ্জন গগৈ
লোকসভা ভোটের আগে রাফালের পাল্টা হিসেবে বফর্স কেলেঙ্কারি খুঁচিয়ে তোলার জন্য বিজেপির পরিকল্পনা আপাতত ভেস্তে গেল।
ফের বফর্স মামলায় তদন্ত শুরু করতে চেয়ে সিবিআইয়ের আর্জি আজ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়ে দিলেন, এই মামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাওয়ার ৪,৫২২ দিন পরে সিবিআইয়ের মামলা করার যুক্তিতে শীর্ষ আদালত সন্তুষ্ট নয়। কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল ঠিক এই আশঙ্কাই জানিয়ে কেন্দ্রকে নোট পাঠিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, হাইকোর্টের রায়ের ১২ বছর পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দেখেই সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা খারিজ করে দিতে পারে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে।
কংগ্রেস আগেই বলেছিল, রাহুল গাঁধী রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন বলে বিজেপি তথা মোদী সরকার সিবিআইকে দিয়ে বফর্স মামলা খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে। অথচ ওই চুক্তিতে দুর্নীতি হয়নি, তা অনেক আগেই প্রমাণিত। আজ স্বাভাবিক ভাবেই উল্লসিত কংগ্রেস।
২০০৫-এ হিন্দুজা ভাই-সহ এই মামলায় অভিযুক্তদের দিল্লি হাইকোর্ট বেকসুর খালাস করে দেয়। বফর্স চুক্তিতে (১৯৮৬-তে সুইডিশ সংস্থা এ বি বফর্সের থেকে প্রায় ১,৪৩৭ কোটি টাকায় ৪০০টি হাউইৎজার কামান কেনার সিদ্ধান্ত) ৬৪ কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগের তদন্তে সরকারি কোষাগারের ২৫০ কোটি টাকা খরচ করা সত্ত্বেও গাফিলতির জন্য সিবিআইকেই দুষেছিল হাইকোর্ট। তার আগের বছর আদালত প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীকেও এই মামলায় নির্দোষ বলে রায় দেয়।
আরও পড়ুন: রাফালে ‘ঘুষ’! ফাঁস রাহুলের
১২ বছর আগের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানায় সিবিআই। যেখানে ৯০ দিনের মধ্যে এই ধরনের আর্জি জানানোর নিয়ম। আদালতে সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, প্রাইভেট ডিটেকটিভ মাইকেল হার্শম্যানের ২০১৭-র অক্টোবরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নতুন তথ্যপ্রমাণ সামনে এসেছে। হার্শম্যানের দাবি ছিল, ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ করার মতো নথি তাঁর কাছে রয়েছে। কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকায় তদন্ত ভেস্তে দিয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন হার্শম্যান।
কিন্তু প্রধান বিচারপতি আজ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘৪৫২২ দিনের দেরির পিছনে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই।’ সিবিআই আদালতে জানায়, তারা ২০০৫-এই হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু এতদিন সরকারের অনুমতি মেলেনি। তাতে লাভ হয়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেলও তাঁর নোটে বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায়ের ৯০ দিনের মধ্যে বা এত বছরের মধ্যে সিবিআই দিল্লি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানায়নি কেন, তার যথেষ্ট কারণ দেখানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেখানে তিন বছর হয়ে গিয়েছে, সেখানে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করা মুশকিল হবে।
আরও পড়ুন: দিল্লি সতর্ক করে সাত দিন আগে!
অ্যাটর্নি জেনারেল অবশ্য আজ শেষ চেষ্টা করেছিলেন। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে তিনি আবেদন জানান, আর্জি খারিজ করে দিলেও, সিবিআইয়ের আরও তদন্তে কোনও বাধা থাকবে না বলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটি বাক্য যোগ করা হোক। কিন্তু প্রধান বিচারপতি রাজি হননি।
সিবিআইয়ের কাছে একমাত্র আশার আলো, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আইনজীবী তথা বিজেপি নেতা অজয় আগরওয়াল আগেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন। সেই মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে। সিবিআই ওই মামলার শুনানিতে নিজের বক্তব্য জানাতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য গত জানুয়ারিতেই এই মামলার সঙ্গে আগরওয়ালের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।