কংগ্রেস রায়কে স্বাগত জানালেও বিজেপি চুপচাপ

অশালীন মন্তব্যও উড়ে এসেছিল তারুরের উদ্দেশে। ভোটে হেরে সে বিল পেশই করতে পারেননি তারুর।  আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে শেষ হাসি হাসলেন শশী তারুরই

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি। এপি

দু-দু’বার চেষ্টা করেছিলেন শশী তারুর। সমকামকে আইনি অপরাধ-মুক্ত করতে তিনি লোকসভায় বেসরকারি বিল এনেছিলেন। এক বার ২০১৫-র ডিসেম্বরে। ফের ২০১৬-র মার্চে। বিজেপি বেঞ্চ থেকে সে দিন হাসির রোল উঠেছিল। অশালীন মন্তব্যও উড়ে এসেছিল তারুরের উদ্দেশে। ভোটে হেরে সে বিল পেশই করতে পারেননি তারুর।

Advertisement

আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে শেষ হাসি হাসলেন শশী তারুরই। সমকামকে অপরাধ-মুক্ত করে শীর্ষ আদালতের রায়ের পর তারুর বলেন, ‘‘এত দিন আমরা সরকারকে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দিয়ে রেখেছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট সব নাগরিকের সমান অধিকারের পক্ষে দাঁড়াল। ব্যক্তি পরিসরের অধিকার, নাগরিকদের সম্মান, সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তিতেই ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। সে দিন যে সব বিজেপি সাংসদ লোকসভায় জোর গলায় বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদেরই লজ্জার মুখে পড়তে হল।’’

বিল আনার সময়ে শশী তারুর যে কংগ্রেসের সব সদস্যের সমর্থন পেয়েছিলেন, তা নয়। দলের অধিকাংশ সদস্যই লোকসভায় হাজির থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি। আজ অবশ্য কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা আনুষ্ঠানিক ভাবে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বহু পুরনো এই ঔপনিবেশিক আইন আজকের আধুনিক সমাজের সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না। সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বৈষম্যের অবসান ঘটল।’’ সমাজের মুক্তমনা মানুষদের কাছে পৌঁছতে দলের যুবনেতাদের উচ্ছ্বাসের ছবি তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো প্রচার করেছে কংগ্রেস।
রাহুল গাঁধীর দল যখন রায়ের সমর্থনে সরব, যে বিজেপি নেতারা সব বিষয়ে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করেন, তারা একেবারেই চুপ। যে কোনও বিষয়ে টুইটের বান ডাকিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহ, সর্বোচ্চ আদালতের এত বড় রায়ের পরে তাঁদেরও মুখে কুলুপ।

Advertisement

আরও পড়ুন: সমকাম অপরাধ নয়, ঐতিহাসিক রায় শীর্ষ আদালতের

বিজেপি চুপ থাকার প্রধান কারণ, ৩৭৭ ধারা নিয়ে বরাবরই পরস্পর-বিরোধী মতামত রয়েছে দলে। সেই সঙ্গে আরএসএস-এর অবস্থান। অতীতে রাজনাথ সিংহ সমকামিতাকে প্রকৃতি-বিরুদ্ধ বলে ৩৭৭ ধারা রাখার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। আবার অরুণ জেটলি এই ধারা তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বরাবরই সমকামিতাকে ‘প্রকৃতি-বিরুদ্ধ’ বলে এসেছে। সংগঠনের নেতা দত্তাত্রেয় হোসবালে বছর দুয়েক আগে জানিয়েছিলেন— সমকামের উপর থেকে অপরাধের তকমা উঠে যাক, সঙ্ঘ এটা চাইলেও বিষয়টিকে অস্বাভাবিক আচরণ বলেই মনে করেন তাঁরা। সমলিঙ্গ বিবাহকেও স্বীকার করেন না তাঁরা। যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতা একে বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, সমকামিতাকে স্বীকৃতি দিলে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনও ফারাক থাকে না। এই নানা মতের ঢেউয়ের মুখে দাঁড়িয়ে মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের উপরেই বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছিল। আজ আর তা নিয়ে মন্তব্য করে জলঘোলা করতে চাইছেন না নেতারা।আজ রায়ের পরে আরএসএস কার্যত তাদের পুরনো অবস্থানকেই তুলে ধরেছে। আরএসএস মুখপাত্র অরুণ কুমারের যুক্তি, ‘‘শীর্ষ আদালতের মতো আমরাও সমকামকে অপরাধ বলে মনে করি না। কিন্তু সমলিঙ্গের বিয়ে বা যৌন সম্পর্ক প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই আমরা এই ধরনের সম্পর্ককে সমর্থন করি না। ভারতীয় ঐতিহ্যেও সমলিঙ্গ সম্পর্কের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন