সুপ্রিম কোর্টে পথকুকুর সংক্রান্ত মামলার শুনানি। —ফাইল চিত্র।
পথকুকুরদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রই তো তৈরি নেই। লোকালয় থেকে ধরার পরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তাদের? বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নতুন বেঞ্চে মামলা শুনানির জন্য উঠতেই এই বিষয়টি তুলে ধরলেন পশুপ্রেমীদের আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশের উপর আংশিক স্থগিতাদেশেরও আর্জি জানান তাঁরা। অন্য দিকে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, কেউই পশুবিদ্বেষী নন। কেউই বলছেন না যে কুকুরদের মেরে ফেলতে হবে। তবে তাদের আলাদা করে রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা এবং বিচারপতি এন অঞ্জরিয়ার বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সেখানে কেন্দ্রের তরফে আদালতে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে এক পক্ষ সরব থাকে, অন্য পক্ষ চুপচাপ সহ্য করে। আমরা এমন ভিডিয়োও দেখেছি যেখানে অনেকে মুরগির ডিম বা এই জাতীয় খাবার খেয়ে নিজেদের পশুপ্রেমী বলে দাবি করেন।” আদালতে এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনও তুলে ধরেন তিনি। ওই তথ্যের ভিত্তিতে সলিসিটর জেনারেলের দাবি, বছরে ৩৭ লক্ষ কুকুরের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রতি দিনের হিসাবে তা প্রায় ১০ হাজার। এর পরেই তিনি বলেন, “পথকুকুরদের মেরে ফেলার কথা তো কেউ বলছে না। আমরা কেউই পশুবিদ্বেষী নই। তবে তাদের আলাদা করে রাখতে হবে।”
অন্যদিকে পশুপ্রেমী সংগঠনের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তাঁর বক্তব্য, লোকালয় থেকে পথকুকুরদের ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর কথা বলা হচ্ছে। যদি রাজধানী দিল্লিতে এমন আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি থাকত, তা হলে কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু এমন কোনও আশ্রয়কেন্দ্রই তৈরি নেই রাজধানী দিল্লিতে। সে ক্ষেত্রে পথকুকুরদের ধরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে? তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন আইনজীবী। এমন অবস্থায় পথকুকুরদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সিব্বল।
সিব্বল আদালতে এ-ও জানান, গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে ইতিমধ্যে ৭০০ পথকুকুরকে ধরা হয়ে গিয়েছে। ওই পথকুকুরদের সঙ্গে কী হবে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন আইনজীবী। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপর আংশিক স্থগিতাদেশের আর্জি জানান তিনি। বৃহস্পতিবার কেন্দ্র এবং অন্য পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে রায়দান স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
রাজধানী দিল্লিতে জলাতঙ্ক সংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়ে সম্প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে মামলাটি ছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে। গত সোমবারের শুনানিতে দুই বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, রাজধানী দিল্লির লোকালয় থেকে পথকুকুরদের অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে। পথকুকুরদের জন্য নির্দিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করতেও বলা হয়। শীর্ষ আদালত এ-ও জানায়, এই কাজের সঙ্গে কোনও আপস করা যাবে না। কোনও সংগঠন এই কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপেরও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের ওই নির্দেশের পরেই দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টজনেরা প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেন। প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠনও। এরই মধ্যে বুধবার পথকুকুর সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এই সংক্রান্ত একটি মামলা জরুরি তালিকায় সংযোজনের আর্জি জানানো হয়। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
পরে বুধবার রাতেই জানা যায়, পথকুকুর সংক্রান্ত ওই মামলাটি তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারই বিচারপতি নাথ, বিচারপতি মেহতা এবং বিচারপতি অঞ্জরিয়ার বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে।
এর আগে গত সোমবার শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ রাজধানীর পথকুকুরদের আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লি সরকার এবং পুর প্রশাসনকে। ওই আশ্রয়কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার নজরদারি রাখার কথাও বলা হয়েছিল। পথকুকুরদের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মীর ব্যবস্থাও করতে বলা হয় প্রশাসনকে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, আট সপ্তাহের মধ্যে আশ্রয়স্থল-সহ সব পরিকাঠামো তৈরি করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।