—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
তিনি খ্রিস্টান। তাই শিখদের ধর্মস্থান গুরুদ্বারে প্রবেশ করতে চাননি ভারতীয় সেনার এক অফিসার। তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। এ বার সেই সেনা অফিসারকে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়লেন। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি অযোগ্য, এ-ও বলে ভর্ৎসনা করা হয়। শীর্ষ আদালত জানায়, ওই জওয়ান ভারতীয় সেনায় কাজ করার জন্য উপযুক্ত নন!
ভারতীয় সেনার থার্ড ক্যাভালরি রেজিমেন্ট লেফটেন্যান্ট স্যামুয়েল কমলেশানকে সামরিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়। অভিযোগ, তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তার নির্দেশের পরেও গুরুদ্বারে ঢুকতে রাজি ছিলেন না। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, তিনি খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী। তাই অন্য কোনও ধর্মের উপাসনা গৃহে ঢুকতে পারবেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তার নির্দেশ অমান্য করার কারণে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত। তাঁকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথমে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন স্যামুয়েল। গত মে মাসে এই মামলার শুনানিতে দিল্লি হাই কোর্ট বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চও একই একই নির্দেশ দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই কাজ করে তিনি কী বার্তা দিলেন? এক জন সেনা অফিসার হয়ে তিনি চরম শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন। তাঁকে বরখাস্ত করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। তিনি কখনই ভারতীয় সেনায় থাকার যোগ্য নন।’’
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ আরও বলে, ‘‘উনি এক জন অসাধারণ অফিসার হতে পারেন কিন্তু তিনি কোনও ভাবেই যোগ্য নন। এই মুহূর্তে আমাদের বাহিনীর উপর যে পরিমাণ দায়িত্ব রয়েছে, সেখানে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়।’’ স্যামুয়েলের পক্ষে আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণের সওয়াল, তাঁর মক্কেল এক বারই নির্দেশ অমান্য করেছেন। আর একটি ‘দোষে’ই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। শঙ্করনারায়ণের কথায়, ‘‘আমার মক্কেল তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তাকে বলেছিলেন, তিনি গুরুদ্বারের বাইরে ডিউটি করতে রাজি। তবে ভেতরে যেতে পারবেন না। কারণ সেটা তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসবিরোধী।’’ তিনি আরও জানান, দেশের প্রতিটি নাগরিককে তাঁর ধর্ম পালনের অধিকার দেয় ভারতের সংবিধান। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া মানে তিনি তাঁর ধর্মীয় পরিচয় ভুলে যাবেন, তা হতে পারে না। যদিও আদালত মনে করে, ভারতীয় সেনার উর্দি সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ধর্মীয় ভাবাবেগের জায়গা নেই সেখানে।