কাছাড়ে আচমকা বেড়ে গিয়েছে কুষ্ঠরোগীদের সংখ্যা। একেবারে প্রায় দ্বিগুণ। তার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিভাগীয় কর্তারা। উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের।
জেলা কুষ্ঠরোগ নিবারণ অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে কাছাড়ে নতুন রোগী মেলে ৩১ জন। পরের বছর ৩২ বছর। ২০১৬ সালে তা একলাফে ৫৫ হয়েছে।
আজ কুষ্ঠরোগ নিবারণী দিবস পালনে উপস্থিত জনতা এই পরিসংখ্যান শুনে চিন্তায় পড়েন। কেন এ ভাবে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেল, তা জানতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন সবাই। বেশ কয়েক বছর ধরে কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা ক্রমে কমছিল। তাকে শূন্যয় পৌঁছনোর লক্ষ্য নিয়ে অনেক দিন ধরে বিশেষ কর্মসূচি চলছে।
কিন্তু শিলচর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা শিল্পী বর্মন বা চর্মরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত কেউ সে আলোচনায় যাননি। তাঁরা বলেন— ‘বিষয়টি উদ্বেগের। সে জন্য সচেতনতা প্রয়োজন।’ অধ্যক্ষা জানান, কুষ্ঠরোগের সমস্ত পরীক্ষা বিনা শুল্কে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। সরকার যে এই রোগ প্রতিরোধে সমস্ত রকমের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতেই বিশেষ গুরুত্ব দেন জেলা কুষ্ঠরোগ নিবারণ অফিসার ইব্রাহিম আলি।
পরে তিনি দাবি করেন, কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে উদ্বেগের কিছু নেই। এটা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির বড় উদাহরণ। চিকিৎসার জন্য এখন মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছেন। আগে রোগ গোপন রাখার একটা প্রবণতা ছিল। তাতে যেমন রোগীর যন্ত্রণা বাড়ত। তেমনি বাড়ছিল সংক্রমণের ঘটনাও। এখন আগেভাগে চিকিৎসকের কাছে আসায় কিছু দিনের মধ্যে তাঁরা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন। তবে নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির কথাও একেবারে অস্বীকার করতে পারছেন না ইব্রাহিম আলি। তাঁর কথায়, ‘‘ওই রোগ মোকাবিলায় গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছি।’’ তিনি জানান, গত তিন বছরে কুষ্ঠরোগে পঙ্গু হওয়ার ৪টি ঘটনা ঘটেছে। ধলাইয়ের পুনিছড়া, হরিনগরের নারায়ণপুর, জালালপুর চা বাগান এবং কালাইন চা বাগানে। ওই ৪ গ্রামে বিভাগীয় তরফে প্রতিটি ঘরে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আরও কেউ সংক্রমিত হয়েছেন কি না, ভাল করে খুঁজে দেখা হচ্ছে। অন্য গ্রামগুলিতেও সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে সকলকে পরামর্শ দেন। ইব্রাহিম আলি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন— কুষ্ঠরোগের জাতীয় গড় প্রতি লক্ষ জনতায় ৬.৬। কাছাড়ে গত বছর তা ছিল ১.৬। শিলচর মেডিক্যাল কলেজে আজ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সক্ষম, এনইআইএডিভিএল ও গাঁধী স্মৃতি ও দর্শন সমিতি। উপস্থিত ছিলেন রোজকান্দি চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার ঈশ্বরভাই ওবাদিয়া এবং ধ্রুবেন্দুশেখর ভট্টাচার্য।