বিপদে পড়লেই সাহায্যের হাত সুষমার

বিদেশমন্ত্রিত্বের ইতিহাসে এ এক অভিনব সমস্যা সমাধান! শ্বাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া নতুন নয়। সেই বিবাদকে নেভাতে (বা উস্কে দিতে) আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, ননদ বা জায়ের ভূমিকা সমাজপ্রসিদ্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

বউমা ওলগা এফিমেঙ্কোভার সঙ্গে শ্বাশুড়ি নির্মলা। ছবি সৌজন্যে টুইটার।

বিদেশমন্ত্রিত্বের ইতিহাসে এ এক অভিনব সমস্যা সমাধান!

Advertisement

শ্বাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া নতুন নয়। সেই বিবাদকে নেভাতে (বা উস্কে দিতে) আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, ননদ বা জায়ের ভূমিকা সমাজপ্রসিদ্ধ।

কিন্তু এই প্রথম তাতে নাক গলালো বিদেশ মন্ত্রক! খোলসা করে বলতে গেলে নাক গলালেন খোদ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ— যাঁর ‘টুইটার-পরিষেবা’ ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ বার তারই নবতম সংস্করণ দেখা গেল উত্তরপ্রদেশের চান্দেল পরিবারের গৃহবিবাদে। রুশ গৃহবধূ ওলগা এফিমেঙ্কোভা এবং শ্বাশুড়ি নির্মলা চান্দেলের বিবাদ মিটিয়ে সাস-বহুকে আলিঙ্গনে বাঁধলেন সুষমা স্বরাজ!

Advertisement

ঘটনা হল, ব্যবসায় ধাক্কা খেয়ে সর্বস্বান্ত বিক্রন্ত সিংহ চাঁদেল উপায়ন্তর না দেখে তাঁর স্ত্রী (ওলগা) ও কন্যাকে তাঁদের নিবাস (২০১১ থেকে এখানেই সপত্নীক থাকতেন বিক্রন্ত) গোয়া ছেড়ে পৈতৃক ভিটে আগরায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বিদেশিনী বৌমাকে কিছুতেই মেনে নেননি শাশুড়ি, বিক্রন্তের মা নির্মলা। অভিযোগ, ওলগার উপর অত্যাচার, দশ লাখ টাকা পণ চাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তারপর বাড়ি থেকে কার্যত বের করে দেওয়া হয় তাঁদের। সোজা বলে দেওয়া হয়, ওই ভিটে-সহ সব সম্পত্তি নির্মলা তাঁর মেয়েকে দিয়ে দিয়েছেন। ফলে এখানে ওলগাদের ঠাঁই হবে না।

সুষমা স্বরাজ ও মনিকা খানজেম্বাম

এই জটিল পারিবারিক পরিস্থিতিতে অনেক মেয়েই রণে ভঙ্গ দিতেন। কিন্তু ওলগার শিরায় রুশ রক্ত। তিনি শ্বশুরবাড়ির সামনে অনশন ধর্নায় বসলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যা কাল নজরে পড়ে বিদেশমন্ত্রীর। সময় নষ্ট না-করে ভারত-রাশিয়া মৈত্রীর সুতো গাঁথলেন সুষমা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে ট্যাগ করে তিনি একটি টুইট করেন। ওলগার রিপোর্টটি সঙ্গে দিয়ে সুষমা স্বরাজ কাল রাতে লেখেন, ‘অখিলেশজি, দয়া করে এই ভদ্রমহিলাকে সাহায্য করুন।’’ অখিলেশও সুষমার কথা শুনে দলমতের বিচার করেননি। তাঁর নির্দেশে আগরা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তা এবং পুলিশ অফিসারেরা পৌঁছে যান চান্দেলের বাড়ি। ওলগাকে নিরস্ত করেন ধর্না থেকে এবং পরিবারের সঙ্গে চার ঘণ্টা কাটিয়ে মন নরম করেন নির্মলার। এরপর হাসিমুখে ছবিও তুলতে দেখা গিয়েছে শাশুড়ি বৌকে! অখিলেশ নিজেও সেই ছবি রি-টুইট করে বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, ওলগা শ্বশুরবাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবেই ঠাঁই পেয়েছেন। বাড়ির একটা অংশও তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন।

সুষমা মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই টুইটারকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষদের অভিযোগ শোনা, এবং সে সবের দ্রুত সমাধানের জন্য সতীর্থদের নির্দেশ দেওয়ার কাজটি নিরন্তর করে চলেছেন। বিষয়টি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে কিছু দিন আগেই এক ব্যক্তি টুইট করে তাঁর রেফ্রিজারেটর সেট–এর সমস্যা নিয়ে সমাধান চেয়ে বসেছিলেন বিদেশমন্ত্রীর কাছে!

আজ মনিপুরের একটি মেয়ের অভিযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে চোখে পড়ায়, তৎক্ষণাৎ সক্রিয় হয়েছেন সুষমা। মনিকা খানজেম্বাম নামের ওই তরুণী ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসন ডেস্কের এক অফিসার তাঁকে হেনস্তা করেছেন। বারবার তাঁর নাগরিকত্ব জানতে চাওয়া হয়েছে, কারণ তিনি নাকি ভারতীয়দের মতো দেখতে নন! সুষমা পোস্টটি পড়ে মনিকাকে টুইট করে জানান, অভিবাসন মন্ত্রক যদিও তাঁর অধীনে নয়, তবু তিনি বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাবেন। উত্তরপূর্বাঞ্চলের স্পর্শকাতরতার দিকটির কথা মাথায় রেখে তিনি দ্রুত এর নিষ্পত্তি চেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন